ঢাকা, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি হচ্ছে রোজার পর

এসএম শামসুজ্জোহা

 প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৪, ০৬:২৯ বিকাল  

রমজানের আগে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করলে মানুষের কষ্ট হবে বিবেচনায় তা বাড়ছে না। লোকসান কমানোর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আরেক দফা বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির চিন্তা করছে সরকার। তবে রমজান সামনে আসায় ওই ঘোষণা আসবে আগামী এপ্রিলে। ঈদের পরে দাম আরও ৫ শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণা আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

বিদ্যুতে পুরো ভর্তুকি তুলে দিলে দাম ৭৮ থেকে ৮০ শতাংশ বাড়বে। তবে একবারে দাম না বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। ৩ মাস পর পর বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বা ১০ শতাংশ করে বৃদ্ধি করা হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে ৩ বছরের মধ্যে বিদ্যুতের ভর্তুকি সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া কথা ভাবছে সরকার। 

জ্বালানি বিভাগ বলছে, প্র্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতে প্রায় সাড়ে ৫ টাকা ভর্তুকি দেয় সরকার। কিছুদিন ধরে এই ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসার কথা ভাবা হচ্ছে। দাতা সংস্থা আইএমএফের পরামর্শও ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসা। তারা চান আগামী জুনের মধ্যে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি যৌক্তিক করতে। আর এতেই তৃতীয় কিস্তি ঋণের সমস্যা কাটবে। সরকারও ভর্তুকি তুলে দেয়ার পক্ষে। এটি করতে হলে দাম কত পড়তে পারে, তা নিয়ে একটি পর্যালোচনা নথি জমা দিয়েছে পিডিবি। সেটি যাচাই-বাছাই করে দাম কত বৃদ্ধি করা হবে ও কখন বৃদ্ধি করা হবে, এসব পরিকল্পনা চলছে।

জানা গেছে, লোকসান কমানো ও ভর্তুকির চাপ সামাল দিতে আরেক দফা বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করার কথাও ভাবছে সরকার। গত বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন ধাপে ৫ শতাংশ হারে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হয়। এবারও গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে চলতি মাসের শেষ দিকে শুরু হচ্ছে রমজান মাস। তাই ঈদুল ফিতরের পরের মাসে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়া হতে পারে।

গত বছরের শুরু থেকেই গ্রাহক পর্যায়ে বৃদ্ধি করা হয়েছিল বিদ্যুতের দাম। ১২ জানুয়ারি প্রথম বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়া হয়। তবে তা ১ জানুয়ারি থেকেই কার্যকর দেখানো হয়। এরপর ফেব্রুয়ারি ও মার্চে আরও দুই দফা বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হয়। সব মিলিয়ে তিন ধাপে মোট ১৫ দশমিক ৭১ শতাংশ দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া ডিসেম্বর ও ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুতের বাল্ক পর্যায়ে দাম যথাক্রমে ১৯ দশমিক ৯২ ও ৮ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়। অর্থাৎ মোট বৃদ্ধি করা হয়েছে ২৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

ঈদের পর দাম আরও ৫ শতাংশ বৃদ্ধির কথা ভাবছে মন্ত্রণালয়। বিদ্যুতের ভর্তুকি সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়ার পক্ষে সরকার

জানতে চাইলে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কাওসার আমীর আলী বলেন, ডেসকো যে বিদ্যুৎ কেনে তাতে গড়ে ব্যয় হয় ৮ টাকা ২৫ পয়সা। এর সঙ্গে হুইলিং চার্জ, বিতরণ ব্যয় ও লোকসানসহ সব ব্যয় যোগ করে বিদ্যুতের সরবরাহ ব্যয় পড়ে ৯ টাকা ৩৭ পয়সা। তবে বর্তমানে রিটেইল ট্যারিফের (গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম) যে অবস্থা, তা আর ৫০-৬০ পয়সা বৃদ্ধি করা দরকার। তা হলে ডেসকো ব্রেকইভেনে চলে আসবে।

এ প্রসঙ্গে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, সরকার এক সময় বিদ্যুতে ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা ভর্তুকি দিত। এখন জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করার কারণে ওই ভর্তুকি হয়ে গেছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। সরকারের তো সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সরকারের আরও অগ্রাধিকারমূলক খাত রয়েছে। বিদ্যুতের দাম যাই হোক, অর্ধেকের কম দামে কৃষকদের বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে। এ রকম অনেক জায়গা আছে যেখানে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয়। এটি অনেক বড় চাপ। এ চিন্তা করেই আরেক দফা বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হবে। তা না এলে তো সমন্বয় হবে না।

পিডিবির তথ্য অনুযায়ী দেশে গত অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কিলোওয়াটপ্রতি গড় ব্যয় ছিল ১১ টাকা ৪ পয়সা। এর সঙ্গে ১৫ পয়সা বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিল, ৩ শতাংশ সঞ্চালন লোকসান ও ৬ শতাংশ উৎসে কর যোগ করে বিদ্যুতের পাইকারি মূল্যহার দাঁড়ায় ১২ টাকা ১১ পয়সা। বর্তমানে বিদ্যুতের পাইকারি দাম ৬ টাকা ৭০ পয়সা হিসাবে গত অর্থবছর প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতে পিডিবির ভর্তুকি ছিল ৫ টাকা ৪১ পয়সা। আর বিদ্যুতের খুচরা দাম হচ্ছে ৮ টাকা ২৫ পয়সা। সব মিলিয়ে পিডিবি গত অর্থবছরে ৮৮ হাজার ৪৫০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনতে ৯৬ হাজার ৮৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। ৬টি বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে এই বিদ্যুৎ বিক্রি করেছে ৫০ হাজার ৮৫৮ কোটি ২৫ লাখ টাকায়। এতে লোকসান হয়েছে ৪৭ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরে লোকসান ৫২ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। গত অর্থবছরে সরকারের ভর্তুকি দাঁড়ায় ৩৯ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা। বাকিটা পিডিবির। চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি কিলোওয়াট (ঘণ্টা) পিডিবির ঘাটতি কিছুটা কমে ৪ টাকা ৯৮ পয়সা এবং আগামী অর্থবছর বেড়ে দাঁড়াবে ৫ টাকা ৯৫ পয়সায়। ফলে ভর্তুকি আরও বাড়বে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, বিদ্যুতের দাম কখনো বৃদ্ধি করা হবে না এমন সিদ্ধান্ত হয়নি। এটি নিয়ে কাজ চলছে। তবে বিদ্যুতের ভর্তুকি একবারে তুলে দেয়া হবে না। ৩ বছর মেয়াদে একটি চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। জনগণের ওপর যেন একবারে চাপ না পড়ে, এ জন্য দাম বৃদ্ধি করলেও ৫-১০ শতাংশ করে বৃদ্ধি করা হবে। এর বেশি না। রোজার আগে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করার আশঙ্কা নেই।

দৈনিক সরোবর/কেএমএএ