ঢাকা, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১

সিলেটে হল না সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত

সিলেট প্রতিনিধি

 প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২৪, ০৮:৪১ রাত  

সিলেটে নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে ‘সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত’ গাওয়া’র আয়োজন স্থগিত করা হয়েছে। জাতীয় সংগীত বদলে ফেলার দাবির প্রতিবাদে সারা দেশে ‘সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত’ গাওয়া’র কর্মসূচি নেওয়া হয়। আয়োজকরা বলছেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা নিয়ে সীমাবদ্ধতার কথা বলায় আয়োজনটি স্থগিত করা হয়েছে। 

কিন্তু নিরাপত্তা নিয়ে কেন সংকট তৈরি হচ্ছে, কেন প্রশাসন নিরাপত্তা নিতে পারছে না, সেই প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর মেলেনি।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেছেন, ওই সময় কাছাকাছি এলাকায় দুটো কর্মসূচি থাকায় তারা কেবল আয়োজকদের নিরাপত্তার বিষয়টি ‘মনে করিয়ে’ দিয়েছেন। জেলার বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এ কর্মসূচির আয়োজন করেছিল। ফেইসবুকে এ নিয়ে প্রচার চালানো হলে তাতে একাত্মতা জানিয়েছিল বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শুক্রবার আয়োজনটি আর হয়নি।

আয়োজকদের পক্ষে সিলেটের নাট্যসংগঠন ‘নগরনাটের’ কার্যনিবাহী সদস্য ও নাট্যকর্মী অরূপ বাউল এদিন দুপুরে তার ফেইসবুকে পোস্টে এই আয়োজন স্থগিতের ঘোষণা দেন। পরে অরূপ বাউলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীতের এ আয়োজন হওয়ার কথা ছিল ৫ সেপ্টেম্বর সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে একদিন পিছিয়ে আয়োজনটি ৬ সেপ্টেম্বর কাজী নজরুল অডিটোরিয়ামে করার উদ্যোগ নেন আয়োজকরা।

এদিকে ফেইসবুকে এই কর্মসূচিকে ‘আওয়ামী লীগের আয়োজন’ বলে প্রচার চালানো হয়। ফলে ‘হাজারো মানুষের নিরাপত্তার’ কথা ভেবে এই আয়োজনটি স্থগিত করার কথা বলছেন আয়োজকরা।

অরূপ বাউল ফেইসবুকে লিখেছেন, সমবেত কণ্ঠে আমার সোনার বাংলা গেয়ে জাতীয় সংগীত বদলানোর অন্যায্য দাবির প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলাম আমরা। কিন্তু আমরা পারছি না। এই উদ্যোগ নেওয়ার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিনীতভাবে নিরাপত্তা বিষয়ক সীমাবদ্ধতার কথা বলা হয়। এছাড়া এই আয়োজনকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগের আয়োজন বলে প্রপাগান্ডা চালায় একদল মানুষ। এই গ্রপাগান্ডার প্রেক্ষিতে তারা এই আয়োজনকে প্রতিহত করতেও উদ্যত হচ্ছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। কিন্তু আমাদের এই আয়োজন কোনোভাবেই আওয়ামী লীগের আয়োজন ছিল না।
তিনি লিখেছেন, শত শত কিংবা হাজারো লোকের নিরাপত্তার কথা ভেবে জাতীয় সংগীত গাইতে পারছি না। সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করতে হচ্ছে। যে তরুণ, যে যুবা, যে পরিণত বয়সের নাগরিক এবং যে জ্যেষ্ঠ নাগরিক আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে চেয়েছিলেন, তাদের আবেগকে শ্রদ্ধা করছি, ভাবতে হয়েছে নিরাপত্তার কথা। আমাদের এই ব্যর্থতা মার্জনা করুন। আমরা বাইরে গাইতে পারিনি জাতীয় সংগীত। আমরা বাইরে গাইতে পারছি না জাতীয় সংগীত। কিন্তু বাইরে না পারলেও একা একা তো পারব। যে যেখানে সেখানেই গাইব। ফেইসবুক লাইভে গাইব। ভিডিও রেকর্ড করে নিজের গাওয়া জাতীয় সংগীত আপলোড করতে পারব। জাতীয় সংগীতের লাইনগুলো লিখে দিতে পারব ফেইসবুকে। বাইরে হয়ত প্রতিবাদী কণ্ঠ আমাদের জড়ো হবে না; কিন্তু আমাদের গাওয়া জাতীয় সংগীত ছড়িয়ে পড়বে অন্তর্জালে।

গত মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতকে ‘স্বাধীনতার অস্তিত্বের পরিপন্থি’ আখ্যা দিয়ে তা পরিবর্তনের দাবি জানান জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমী। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়েও। বাহাত্তরের সংবিধান ‘বৈধ নয়’ মন্তব্য করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করারও দাবি জানান সেনাবাহিনীর সাবেক এই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল।

এর প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল প্রতিবাদ জানান অনেকে। এরই প্রেক্ষিতে সম্মিলিত কণ্ঠে এই জাতীয় সংগীত গাওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করে উদীচী।

সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীতের আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত ‘সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন’ সিলেটের সমন্বয়ক আবদুল করিম চৌধুরী কিম বলেন, আমরা যারা সিলেটে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পক্ষে ‘গান-মিছিল ও সংক্ষুব্ধ নাগরিক সমাবেশ, প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করেছিলাম; তারাই মূলত এই আয়োজন করেছিলাম। আমরা প্রতিটি কর্মসূচি কোনো না কোনো সংগঠনের ব্যানারে করি। তবে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীতের আয়োজন কোনো সংগঠনের ব্যানারে করিনি। এ আয়োজনের প্রচারপত্রটি ফেইসবুকে দিলে অনেকে শেয়ার দিয়ে উপস্থিত থাকার জন্য লেখেন। সিলেটের সংস্কৃতি অঙ্গনের আওয়ামীপন্থি সংস্কৃতিকর্মীরা এটি শোয়ার করেন। ফলে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীতের আয়োজন নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। তারপর প্রশাসন থেকে আমাদের নিরাপত্তা জনিত কারণে কর্মসূচিটি স্থগিত রাখার জন্য বলা হয়। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই স্থগিত করা হয়েছে।

পুলিশ কেন নিরাপত্তা দিতে পারল না, সেই প্রশ্নে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, একই সময়ে চৌহাট্টা এলাকায় ছাত্র-জনতার শহীদি মার্চ কর্মসূচি ছিল। আর নগরীর বন্দরবাজার এলাকায় খেলাফত মজলিসের সমাবেশ ছিল। এজন্য পুলিশ হয়ত তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়েছে। পুলিশ কাউকে কর্মসূচি করতে না করেনি।
জাতীয় সংগীত নিয়ে ‘ষড়যন্ত্রের’ প্রতিবাদ জানিয়ে শুক্রবার একযোগে সারাদেশে জাতীয় সংগীত গাওয়ার কর্মসূচি নিয়েছিল উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীও। ঢাকাসহ সারা দেশে তারা এ কর্মসূচি পালন করলেও সিলেটে ঘোষণা দিয়েও জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সিলেটের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল মিন্টু বলেন, জাতীয় সংগীত আমাদের প্রাণের সংগীত। তাই আমরা চেয়েছি অনেক মানুষের অংশগ্রহণে জাতীয় সংগীত গাইব। জাতীয় সংগীত তো কয়েকজন মিলে গাইলে হবে না। আর একদিনের নোটিসে বেশি মানুষ আনাও সম্ভব না। তাই আমরা সিলেটে জাতীয় সংগীত গাওয়ার আয়োজন করতে পারিনি।

দৈনিক সরোবর/এএস