সবাই সার্বভৌমত্বকে সম্মান দেখাবে: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২৩, ০৮:৩২ রাত

ফাইল ফটো
যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশকে নিয়ে চীনের পক্ষ থেকে যে বক্তব্য এসেছে, তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সরকার; পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সার্বভৌম অধিকারের প্রশ্নে সবাই সম্মান দেখাবে, সেটাই বাংলাদেশ চায়।
চীনের ওই বক্তব্য গণমাধ্যমে আসার পরদিন বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফেইসবুক পেইজে এক বিবৃতিতে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়– এটাই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির মূলমন্ত্র।
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্য সম্পর্কে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের বক্তব্য সরকারের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলতে চায়, যে কোনো আত্মমর্যাদাশীল দেশের মত বাংলাদেশও নিজেদের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সার্বভৌমত্বের চেতনার ভিত্তিতে সে বিষয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।
দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া রূপকল্প ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্য বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশ তার সিদ্ধান্ত নেয় বলেও বার্তায় জানানো হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লিখেছে, সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়– জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেওয়া এই মূলমন্ত্রের ভিত্তিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক নীতি গ্রহণের যে সার্বভৌম অধিকার, তার প্রতি সব পক্ষ ‘সম্মান প্রদর্শন করবে’ বলে বাংলাদেশ প্রত্যাশা করে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কী বলেছে: আগের দিন চীনে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন একটি আয়োজনে বাংলাদেশকে নিয়ে মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায়, অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক নীতি সমুন্নত রাখতে এবং নিজেদের বাস্তবতার সঙ্গে মানানসই একটি উন্নয়নের পথ অনুসরণের প্রশ্নে বাংলাদেশকে আমরা দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি।
সেদিন বেইজিংয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে চীনা এই কর্মকর্তার এমন প্রতিক্রিয়া আসে। ঢাকায় চীনা দূতাবাস বুধবার তাদের ফেইসবুক পেইজে তাদের মুখপাত্রের ওই বক্তব্য প্রকাশ করে।
বাংলাদেশে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা, এখানে নির্বাচন নিয়ে ভিসানীতি গ্রহণ এবং বেশ কয়েকজন কংগ্রেসম্যানের চিঠির বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘হয়ত চাইছে না’ তিনি ক্ষমতায় থাকেন। তিনি এমনও বলেছেন, সাত সমুদ্র ১৩ নদী পার হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে না গেলে কিছুই হবে না। বাংলাদেশ অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়বে।
ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্যের বিষয়ে আমরাও অবগত। আসলে, নিজেদের জাতিগত বৈষম্য, বন্দুক সহিংসতা এবং মাদক সমস্যার সমাধান না করে একটি নির্দিষ্ট দেশ দীর্ঘদিন ধরে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে বাংলাদেশ এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে আসছে।
তার ভাষায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য শুধু বাংলাদেশের জনগণের দৃঢ় অবস্থানের কথাই প্রকাশ করে না, তিনি তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের, বিশেষ করে উন্নয়নশীল বিশ্বের মনের কথাই বলেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র কী করছে, প্রধানমন্ত্রী কী বলেছেন: দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বেশ কিছু পদক্ষেপ আলোচনা তৈরি করেছে।
‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর এলিট ফোর্স র্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
এরপর বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সাড়া মেলেনি। যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বলে আসছে, নিষেধাজ্ঞা উঠানোর প্রক্রিয়া বেশ ‘জটিল’।
গত এপ্রিলে সংসদে এক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র যে কোনো দেশে ক্ষমতা উল্টাতে পারে, পাল্টাতে পারে।
পরে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার কাছে একটা বড় প্রশ্ন হল, কেন তারা নিষেধাজ্ঞা জারি করল? যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশের সন্ত্রাস মোকাবেলার জন্য কাজ করছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তখন তারা লঙ্ঘনকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, যারা ভুক্তভোগী, তাদের পক্ষে নয়।
ওই সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো তাকে ক্ষমতায় চায় না বলেই’র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমি জানি না, হয়তো তারা আমার কাজ অব্যাহত থাকুক তা চায় না, আমি বাংলাদেশের জন্য যেসব উন্নতি করেছি, সেটা তারা হয়ত গ্রহণ করতে পারছে না। এটা আমার অনুভূতি।
এসব নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে গত ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্র সরকার নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে জানায়, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে যে বা যারা বাধা দেবে, ভোটারদের যারা ভয় ভীতি দেখাবে, তাদেরকে এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র।
৪ জুন ঢাকায় আওয়ামী লীগের এক সমাবেশে শেখ হাসিনা বলেন, কে আমাদের ভিসা দেবে না, কে আমাদের স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দেবে ওনিয়ে মাথাব্যথা করে লাভ নাই। ২০ ঘণ্টা প্লেনে জার্নি করে আটলান্টিক পার হয়ে আমেরিকায় না গেলে কিচ্ছু যায় আসে না। পৃথিবীতে আরও অনেক মহাসাগর আছে, অনেক মহাদেশ আছে; সেই মহাদেশের সঙ্গে আমরা যাতায়াত করব, বন্ধুত্ব করব; আমাদের অর্থনীতি আরও মজবুত হবে, উন্নত হবে, আরও চাঙ্গা হবে।
দৈনিক সরোবর/আরএস