ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩১

বাজার সিন্ডিকেট

দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করুন

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৪, ২০২৩, ০৭:৪৮ বিকাল  

অনিয়ম-দুর্নীতিই হলো সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বড় বাধা। দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক রাস্তা খোলা থাকলে অনেকেই সে পথেই হাঁটবে। যদি রাষ্ট্রে সুশাসন থাকে, অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে খোদ রাষ্ট্র রুখে দাঁড়ায়; তা হলে দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিরা দুর্নীতির সুযোগ নিতে পারে না। সুশাসনই দেশকে প্রকৃত অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে। এ ঘাটতি মানুষকে দুর্ভোগে ফেলে দেয়। আজ প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে সুশাসনের ঘাটতি আছে; সেখানে দ্রুত সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা হোক। এতে সরকার যারা পরিচালনা করেন, তাদের আন্তরিকতার বিষয়টিও বড় প্রাসঙ্গিক। অতীতে আমরা দেখেছি, রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় দেশে নব্য ধনিক শ্রেণি গড়ে উঠেছে। এটা ছিলো দুর্ভাগ্যজনক। এই সংস্কৃতি থেকে রাষ্ট্র বের হয়ে আসতে পেরেছে, নাকি পুরোপুরি এখনো পারেনি? সাম্প্রতিকালে দেশে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কারসাজি করে বিপুল অর্থের মালিক বুনে গেছে। রাষ্ট্র অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কি পদক্ষেপ নিয়েছে? যদি প্রকৃতই পদক্ষেপ নিত, তাহলে তো ভোগ্যপণ্যের দাম ৪০০ শতাংশ বেড়ে যেত না। রাষ্ট্র যদি ভোগ্যপণ্য নিয়ে কারসাজির বিরুদ্ধে শক্তভাবে রুখে দাঁড়াত, তা হলে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট অপকর্ম করার সাহস পেত না। ব্যক্তির কায়েমি স্বার্থের জন্য যে উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে, এটা দমন করা অবশ্যই বড় একটি চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারকে সাহসী হতে হবে। 

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করলে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করে ছাড়বেন। শেখ হাসিনার সরকার দেশে দুর্নীতির যে শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত রয়েছে, তা উপড়ে ফেলার চেষ্টারত ছিলেন না, এমনটি ভাবা ভুল হবে। তবে এটা মানতে হবে যে, যত বেশি কায়েমি স্বার্থের বিরুদ্ধে মানুষ উচকিত হবে এবং রাষ্ট্র যত এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে, ততই সুশাসন প্রতিষ্ঠা সহজ হবে। কেবল নিঃস্বার্থ ও শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতৃত্ব অর্থনীতিকে সংকট থেকে উদ্ধার করতে পারে। অর্থনীতি এখন অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা কমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, এমনকি নির্বাচনের পরেও নয়। নীতিনির্ধারকদের প্রধান কাজ হওয়া উচিত বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা খেয়ে ফেলছে। বাজার কারসাজি আর সিন্ডিকেট এ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। অর্থনীতি এখন বহুবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে এবং সত্যিকার অর্থে একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। একমাত্র আশা, নীতিনির্ধারকরা এটি বুঝবেন এবং স্বীকার করবেন যে, গতানুগতিক পন্থায় কাজ হবে না। বড় ধরনের সংস্কারে যেতে হবে। 

বলা হয়ে থাকে, মূলত করোনা মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমদানি মূল্য বেড়ে যাওয়ায় সার্বিক মূল্যস্ফীতি বাড়তে শুরু করে। তবে অন্য দেশ সময়মতো দক্ষ নীতি গ্রহণ করে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও বাংলাদেশ পারেনি। একই সঙ্গে বাজার ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশে ও তুলনায় কমেনি। অনেক দেরিতে হলেও নীতি সুদহার বাড়ানোসহ সরকার ব্যয়সাশ্রয়ী পদক্ষেপ নিলেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এসব উদ্যোগ কাজে আসছে না।

বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনার বিষয় বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ায়। এটিকে অবশ্য ছোট করে দেখার প্রবণতা দেখা গেছে। কিন্তু ভোগ্যপণ্য ৪০০ শতাংশ বাড়িয়ে যে টাকা সেচে নেওয়া হচ্ছে, এটি তো অস্বীকার করা যাবে না। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য রাষ্ট্র ও সরকার কী করছে, তা আলোচ্য বিষয়। বাজার নিয়ন্ত্রণ যদি সরকার না করতে পারে, তাহলে কায়েমি স্বার্থবাদী ব্যক্তিদের কাছে সরকার অসহায়; নিঃসন্দেহে এটাও বলা চলে। সরকার যদি দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর স্বার্থকে গুরুত্ব দেয়, তাহলে কায়েমি স্বার্থবাদীরা শাস্তি পাবে নিশ্চিত। অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছে। তা বন্ধ করতে হবে? সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচলনা করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করুন।