দীর্ঘ ৭ বছর পর যুদ্ধাপরাধী জাহিজার গ্রেপ্তার
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৩, ০৩:৪৬ দুপুর

গ্রেপ্তার এড়াতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী মো. জাহিজার রহমান ওরফে খোকা নিয়মিত বাসা পরিবর্তন করতেন। ছেলেরা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হওয়ায় তার প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য তারা নিয়মিত অর্থ দিত। এভাবেই দীর্ঘ ৭ বছর পলাতক থাকার পর বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) র্যাবের হাতে ধরা পড়ে এ যুদ্ধপরাধী।
শুক্রবার জাহিজার রহমানের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-২ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মো.আনোয়ার হোসেন খান।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা এলাকা থেকে মৃত্যুদণ্ড সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী জাহিজার রহমান ওরফে খোকাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-২ এর একটি দল।
র্যাব কর্মকর্তা জানান, রাজাকার বাহিনীর সক্রিয় সদস্য হিসেবে জাহিজার রহমান মানবতাবিরোধী কাজে সরাসরি অভিযুক্ত। এছাড়া তিনিসহ অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীরা যুদ্ধকালীন সময়ে রাজাকার, আলবদর এবং পিস কমিটির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। এই রাজাকাররা একাত্তরের ১৮ অক্টোবর পাকিস্তানিদের পক্ষ নিয়ে গাইবান্ধা সদর এলাকার সাহাপাড়া ইউনিয়নের নান্দিনা গ্রামসহ মোট ৮ টি গ্রামের ১৪ জন নিরীহ মানুষকে মেরে ফেলেন।
ডিআইজি মো.আনোয়ার হোসেন বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুক, ইসলাম উদ্দিন ও নবীর হোসেনসহ ৭ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে গিয়েও হত্যা করেছে জাহিজার ও তার সঙ্গীরা। মোট ২১ জনকে হত্যা, শতাধিক বাড়ি-ঘর লুটপাটের পর অগ্নিসংযোগ এবং কয়েকটি গ্রামের সাধারণ মানুষের উপর নৃশংসভাবে হামলা চালায় তারা। এছাড়া সাহাপাড়া ইউনিয়নের তিন থেকে চারশত সংখ্যালঘুকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করেন জাহিজার।
তিনি আরো বলেন, ২০০৯ সালে হত্যা-গণহত্যা, ধর্ষণ, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট-অগ্নিসংযোগ, ভয়-ভীতি এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের ধর্মান্তর ও দেশান্তরে বাধ্য করাসহ বিভিন্ন অপরাধে জাহিজার রহমান ও তার বাবাসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। পরে আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর জাহিজার রহমান ওরফে খোকাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি মো. জাহিজার রহমান ওরফে খোকা জানায়, ২০১৬ সাল পর্যন্ত জামিনে থাকার পর আদালত কর্তৃক জামিন নামঞ্জুর হলে সে আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে সে বিভিন্ন সময় ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিল।
তিনি আরো জানান, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার এড়াতে নিয়মিত বাসা পরিবর্তন করত জাহিজার। তার ছেলেরা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হওয়ায় তার প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য তারা নিয়মিত অর্থ দিয়ে সহায়তা করত। এভাবেই সে পলাতক জীবনযাপন করে আসছিল।
গ্রেপ্তার আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।
দৈনিক সরোবর/ আরএস