মদ নয়, ইয়াবা নিয়ে চিন্তিত মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর

‘মদ নিয়ে নয়, বর্তমানে ইয়াবা নিয়ে চিন্তিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। দেশে ইয়াবা নিয়ন্ত্রণে নেই। এভাবে চলতে থাকলে যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে।’ বলে মন্তব্য করেছেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) অতিরিক্ত মহাপরিচালক মুহাম্মদ ইউছুফ।

সোমবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) দেশ ও জাতির কল্যাণে ‘মাদকতার কুফল ও প্রতিকার’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ডিএনসি’র অতিরিক্ত মহাপরিচালক মুহাম্মদ ইউছুফ বলেন, মদ নিয়ে আমরা চিন্তিত না। বিশ্বব্যাপী যেমন এটা নিয়ন্ত্রণে আছে, একটা ইসলামিক দেশ হিসেবে আমাদের দেশেও এটার নিয়ন্ত্রণে আছে। মদ মুক্ত করতে পারবেন না। যতটুকু সম্ভব ততটুকু নিয়ন্ত্রণে আছে। শুধু মদ না, হিরোইন, কোকেন, আফিম ও গাঁজাও নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে ইয়াবা কারও নিয়ন্ত্রণে নেই। এটি প্রায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

ইয়াবার ভয়াবহতা উল্লেখ করে ডিএনসির অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, তিন-চার বছর টানা ইয়াবা সেবন করলে, ওই ব্যক্তি মেন্টালি ডেড হয়ে যায়। একটা পর্যায়ে ইয়াবা সেবনকারী ব্যক্তি কথা বলতে পারে না, শুকিয়ে যায় এবং একটা সময়ে সে মারা যায়। ইয়াবা সেবনকারীকে পুনর্বাসনও করা যায় না। তিনি শারীরিকভাবে মৃতপ্রায় হয়ে যায়। বাংলাদেশে ইয়াবার কোনো কারখানা নেই। সব কারখানা মিয়ানমারে। যদি আমাদের দেশে ইয়াবার চাহিদা শূন্যে নেমে আসে তাহলে অন্য দেশ থেকে আমাদের দেশে ইয়াবা আর আসবে না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কারা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল বলেন, সারা দেশে কারাগারের শতকরা ২৫ ভাগ আসামি মাদক সংক্রান্ত। যার সংখ্যা ১৫ থেকে ২০ হাজারের বেশি। সমাজে যে সমস্ত অপরাধ চলছে তার বড় একটি অংশ মাদক সংশ্লিষ্ট। কারাগারে যেসব আসামি রয়েছে তার মধ্যে ৯০ শতাংশ স্বল্প মেয়াদী শাস্তি পেয়ে কারাগারে আসে। অর্থাৎ, তাদের যে শাস্তি হয় তা এক থেকে ছয় মাস বা এক বছর মেয়াদী হয়ে থাকে। এই ধরনের আসামিরা প্রায়ই কারাগারে আসেন। তাদের একটা অভ্যাস হয়ে গেছে। সরকার চেষ্টা করছে সমাজে এ ধরনের অনাচারের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে কারাগারে দেওয়ার।

মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আসামিদের সংশোধনের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, একজন আসামি মাদকাসক্ত হিসেবে কারাগারে এলে তাকে আলাদা রাখা হয়। যাতে অন্য আসামিরা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে না পারে। যারা আসেন তাদেরকে চিকিৎসার মাধ্যমে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। এ কাজ করতে গিয়ে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যারা আসেন তারা অল্প সময়ের জন্য আসেন। সুতরাং পুনর্বাসন প্রক্রিয়া যে সময়ব্যাপী হওয়ার কথা, শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয় না। যারা আসেন, তারা সাধারণত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আসেন। তাই এসব আসামিদের সশ্রম কারাদণ্ড হয় না।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন— জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়ার ভাইস প্রিন্সিপাল শায়খুল হাদীস মাওলানা আব্দুল গাফফার, গবেষক ও শিক্ষাবিদ মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক নদভী, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক আলেম শায়খ মুসা আল হাফিজ, রাষ্ট্রচিন্তক কমান্ডার (অব.) মাহবুবর রহমান, শিল্পপতি ফারুক তালুকদার সোহেল, মেজর জেনারেল (অব.) মহিউদ্দিন চৌধুরী মোহন, ক্যাপ্টেন (অব.) এস. এম. হেলাল, সিনিয়র সাংবাদিক মশিউর রহমান খান প্রমুখ।

দৈনিক সরোবর/ইএইচপি