ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩১

রাষ্ট্রদূত পরিবর্তন হচ্ছে আরো ২৫ দূতাবাসে!

সরোবর ডেস্ক 

 প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২৪, ০৬:২৯ বিকাল  

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরো অন্তত ২৫টি দূতাবাসে নতুন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেওয়ার কথা ভাবছে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল সংক্রান্ত সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইতোমধ্যে সাত রাষ্ট্রদূতকে বুধবার ডেকে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে বর্তমানে চাকরিরত ছয় রাষ্ট্রদূতদের মেয়াদ শেষ হবে। এর মধ্যে ডিসেম্বরেই শেষ হবে ছয় রাষ্ট্রদূতের। বর্তমান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের চুক্তিভিত্তিক মেয়াদ ডিসেম্বরে শেষ হবে এবং সেখানে নতুন একজনকে নিয়োগ দিতে হবে। এছাড়া ফরেন সার্ভিস একাডেমির রেক্টরের মেয়াদও ডিসেম্বরে শেষ হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইতিহাসে এক বছরের মধ্যে এত বেশি সংখ্যক পদায়নের বিষয়টি এর আগে হয়নি।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত পাঠানোর প্রাথমিক কাজ শুরু হযেছে। ইতোমধ্যে নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। সব দূতাবাসই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এর মধ্যে কিছু মিশন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে রাষ্ট্রদূত পাঠানোর ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় দক্ষতা ও যোগ্যতা বিশেষভাবে বিবেচনা করবে। আরেক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে একটি অভাবনীয় পরিবর্তন হয়েছে। নতুন সরকারের ভিশন ও উদ্দেশ্য স্বাভাবিক যেকোনও সময়ের থেকে ভিন্ন। এ পরিস্থিতিতে বিদেশি বন্ধুদের বিষয়টি বোঝানো এবং সহায়তা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এই বিশেষ মুহূর্তে সরকারের মনোভাব সঠিকভাবে তুলে ধরার জন্য বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন এমন পেশাদার কূটনীতিকদের প্রয়োজন হবে।

তিনি বলেন, পেশাদার কূটনীতিকদের বাইরে থেকে দক্ষ কাউকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে কূটনৈতিক নিয়ম, শিষ্টাচারসহ জটিল বৈদেশিক সম্পর্ক অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে তাকে আত্মস্থ করতে হবে। পেশাদার কূটনীতিকদের বাইরে থেকে কাউকে নিয়োগ দিলে ওই ঝুঁকিটা থেকে যায়। সাবেক কূটনীতিকদের বিবেচনায় নেওয়ার সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি হতে পারে। তবে সেটি একটি বা দুটি মিশনের বেশি হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় সব সময় রাষ্ট্রদূত বাইরে থেকে দেওয়া হয়েছে। তারা অনেকে সাবেক কূটনীতিক বা আমলা। একইভাবে ভারতে বেশিরভাগ সময়ে সাবেক কূটনীতিক বা আমলাদের পদায়ন করা হয়েছে।

দূতাবাসে রদবদল: গুরুত্বপূর্ণ দূতাবাসগুলোতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের পাঠানো হয় এবং কম গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যুগ্ম সচিব পদ মর্যাদার পেশাদার কূটনীতিকদের প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রদূত করে পাঠানো হয়। যেসব দূতাবাস খালি হয়েছে এবং আগামী আট মাসের খালি হচ্ছে তার মধ্যে কয়েকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশ আছে। যেমন ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, জার্মানি, জাতিসংঘ স্থায়ী প্রতিনিধি, রাশিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বেলজিয়ামসহ (ইইউ এর সদর দফর) অন্যান্য দেশ রয়েছে এই তালিকায়।

উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, যুক্তরাজ্য বা নিউইয়র্কে স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে যাকে রাষ্ট্রদূত করে পাঠানোর সম্ভাবনা আছে, তিনি অন্তত একটি দেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করছেন বা করেছেন। কর্মরত রাষ্ট্রদূতকে নিয়োগ দেওয়া হলে যে দূতাবাস খালি হবে সেখানে নতুন একজনকে পাঠানো হবে। অর্থাৎ বড় কোনও দূতাবাস খালি হলে নিচের দিকে এক বা একাধিক দূতাবাসে পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি হয়।

২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালিন রাষ্ট্রদূত মো. জিয়াউদ্দিনের মেয়াদ শেষ হলে সেখানে ভারতের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ ইমরানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ভারতে পাঠানো হয় জেনেভার রাষ্ট্রদূত মুস্তাফিজুর রহমানকে। জেনেভায় পাঠানো হয় অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূত মো. সুফিউর রহমানকে। অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানো হয় ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত আল্লামা সিদ্দিকীকে। ডেনমার্কে পাঠানো হয় ভূটানের রাষ্ট্রদূত শহীদুল করিমকে। ভুটানে ঢাকার সদর দফতর থেকে সাবেক আমলা শিবনাথ রায়কে পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, নতুন রাষ্ট্রদূত পাঠানোর ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পেশাদার কূটনীতিকদের বিবেচনা করছে। নতুন সরকারের ভিশন ও উদ্দেশ্য বিদেশি রাষ্ট্রের কার কাছে, কীভাবে এবং কখন উপস্থাপন করতে হবে এবং সুযোগ কীভাবে কাজে লাগাতে হবে, সেটি তারা অন্যদের থেকে ভালো বুঝবে।

আরেক কর্মকর্তা বলেন, রাষ্ট্রদূত নিয়োগের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টা। আমাদের পক্ষ থেকে পেশাদার কূটনীতিক পাঠানোর বিষয়ে সুপারিশ থাকবে।

তিনি বলেন, এর আগে রাজনৈতিক বিবেচনায় রাষ্ট্রদূত নিয়োগের ফলে দেশ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই বিষয়টি আমাদের মাথায় আছে।

দৈনিক সরোবর/এএস