ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩১

উপজেলা নির্বাচন

বদলির ভয় না করে প্রশাসনকে নীতিতে অটল থাকার নিদের্শ ইসির

সরোবর প্রতিবেদক  

 প্রকাশিত: এপ্রিল ২৫, ২০২৪, ০৮:৫০ রাত  

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাবমুক্ত দেখতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মন্ত্রী-এমপিদের পক্ষে কাজ না করলে অনেক সময় বদলির হুমকি আসে। পদোন্নতিসহ সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। তবে বদলির ভয় না করে প্রশাসন ও পুলিশকে নীতিতে অটল থেকে দায়িত্ব পালনের নিদের্শনা দিয়েছে ইসি।

বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভায় কমিশন থেকে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

সভায় কমিশন থেকে বলা হয়, কথা না শোনার কারণে উচ্চমহল থেকে নির্বাচনে দায়িত্বরত কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বদলির জন্য সুপারিশ এলে তা কমিশন যথাযথ যাচাইয়ের পর প্রমাণ সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেবে। এ জন্য দুশ্চিন্তার কিছু নেই। চাকরি করলে বদলি হওয়াটাই স্বাভাবিক। নত হওয়ার চেয়ে বদলি সম্মানের। 

এ ছাড়া মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে নির্বাচনে কালো টাকা ছড়ানো হয়। এসব টাকা বন্ধে কীভাবে প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারেন, সে বিষয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নিদের্শনা দেওয়া হয়। 

সভা সূত্রে জানা যায়, প্রশাসন ও আইন-শৃঙখলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, একই উপজেলা বা থানায় চাকরি করার কারণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বিশেষ করে মন্ত্রী-এমপিদের উপেক্ষা করে বা তাঁদের বাইরে গিয়ে চাকরি করা চ্যালেঞ্জ। বদলি কিংবা অনেক সময় তাঁদের কথা না শুনলে শাস্তির খড়গ নেমে আসে। আর ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারাই দায়িত্বের মূল দায়িত্ব পালন করেন। নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীদের কাছ থেকে নানা উপঢৌকন ও উৎকোচ নিয়েও কারো কারো পক্ষে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের নিজ উপজেলা থেকে না নিয়ে পাশের উপজেলা থেকে এনে দায়িত্ব দেওয়া হলে চাকরি হারানো কিংবা বদলি বা শাস্তির ভয় কোনোটাই থাকবে না। এমনকি তাৎক্ষণিক প্রভাবশালী প্রার্থীদের কাছে নিজের অস্তিত্ব বিকিয়ে দিতে সময় পাবে না। ফলে পার্শ্ববর্তী উপজেলায় দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা করা হলে নির্বাচন অনেকটা প্রভাবমুক্ত হবে। জবাবে কমিশন বলে, পার্শ্ববর্তী এলাকার কর্মকর্তাদের অন্য এলাকায় দায়িত্ব দিলে তাদের থাকা ও খাওয়ার সমস্যা হয়। এ ছাড়া আইনের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি কমিশন। 

এ ছাড়া সভায় গ্রাম পুলিশ বা আনসারদের নিজ ইউনিয়নে না দিয়ে পাশের ইউনিয়নে দায়িত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ বিষয়েও কমিশন তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত না দিলেও বিবেচনায় রাখার বিষয়ে মৌনসম্মতি জ্ঞাপন করে। 

জানা যায়, সভায় নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব ইস্যুতে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। কারণ আওয়ামী লীগ দলীয় প্রধানদের নিদের্শ উপেক্ষা করে অনেকেই নিজ সন্তান-ভাই কিংবা পরিবারের আত্মীয়-স্বজনকে প্রার্থী করেছেন। প্রত্যাহার না করে দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে মাঠে নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন, সঙ্গে প্রশাসনকে তাদের পরিবারের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন। মন্ত্রী-এমপিদের পক্ষে কাজ না করলে অনেক সময় বদলির হুমকি আসে। পদোন্নতিসহ সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। 

জবাবে পুলিশের মহা-পরিদর্শক (আইজিপি) বলেন, ভয়ের কিছু নেই। সর্বোচ্চ শাস্তি বদলি করবে। আরেক জায়গায় অর্থাৎ নতুন কর্মস্থলে চাকরি করবেন। 

এ সময় সিইসিসহ সব কমিশনার এ বিষয়ে তাদের আশস্ত করে বলেন, বদলি কোনো শাস্তি নয়। এটা চাকরির অংশ। আপনাদের বিরুদ্ধে কোনো মহল থেকে বদলি করার জন্য কমিশনে অনুরোধ এলে আমরা সেটি খতিয়ে দেখব। কারো কথায় আপনাদের বদলি করা হবে না। কমিশন নিজস্ব উৎস থেকে তদন্ত করবে। যদি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা না পায় তাহলে বদলি করা হবে না। আপনারা কারো কাছে মাথানত করবেন না। দায়িত্বে অটুট থাকেন। আমরা আপনাদের সব ধরণের সহায়তা দিব। 

সিইসি আরো স্পষ্ট করে বলেন, নির্বাচনে চাপ থাকবে। চাপ সবার ওপরে থাকে। তদন্তে প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা। এমনকি এমপিরা নির্বাচনের প্রচারে অংশ না নিতে পারেন, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থেকে দায়িত্ব পালন করার জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে নিদের্শনা দেওয়া হয়। যদি কেউ প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন, তাহলে কমিশনকে জানালে তাৎক্ষণিক সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন মাঠ প্রশাসনকে। 

সভায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা অনেকেই এখনো টাকা পায়নি বলে জানানো হয়। বকেয়া টাকা দ্রুত পরিশোধ করার দাবি তোলা হয়। 

সভায় স্বাগত বক্তব্যে উপজেলা নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা হতে পারে মন্তব্য করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবীবুল আউয়াল বলেন, দেশের নির্বাচনে আবেগ অনুভূতির জন্য কিছুটা বিশৃঙ্খলা হয়। ভোটারেরা যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। যেকোনো মূল্য নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে। সুষ্ঠু ভোটে ব্যর্থ হলে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে যে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে, তা ক্ষুন্ন হতে পারে। 

এদিকে সভার পরে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, ভোট সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মাঠ পর্যায়ে কী ধরণের প্রস্তুতি নেবে প্রশাসন, তাঁদের কী ধরণের সহযোগিতা করতে হবে এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নিজ নিজ জেলার সুবিধা-অসুবিধা তুলে ধরেছেন কর্মকর্তারা। অনেক জেলা থেকে অতিরিক্ত ফোর্স চাওয়া হয়েছে। সংসদ নির্বাচনে যেভাবে নিরপেক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন করেছে, সেভাবেই দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘন নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে নেই মাঠ প্রশাসন। 

দৈনিক সরোবর/এএস