ঢাকা, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১

তাপদাহ: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও কোচিং বাণিজ্যে পৌষ মাস

সরোবর প্রতিবেদক  

 প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২৪, ০৮:০৩ রাত  

সারাদেশে বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। অথচ পুরোদমে চলছে কোচিং সেন্টারগুলো। স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের ব্যাচ করে প্রাইভেট পড়ানোও বন্ধ নেই। ফলে তীব্র গরমের মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে বাইরে বের হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

অভিভাবকরা বলছেন, কোচিং ও প্রাইভেটে না গেলেও মাস গেলেই ফি গুনতে হবে। টাকা খরচ করে সন্তানদের ঘরে বসিয়ে রাখতে চাইছেন না তারা। এজন্য শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ে যেতে বাধ্য করছেন অভিভাবকরাও।

অন্যদিকে কোচিং সেন্টারগুলো বলছে, রমজান ও ঈদের ছুটির কারণে দীর্ঘদিন কোচিং বন্ধ ছিল। অভিভাবকরাই এখন ক্লাস চালু করতে বলছেন। তাছাড়া বড় কোচিং সেন্টারগুলোর ক্লাসরুমে এসি থাকায় গরমে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি হচ্ছে না। এজন্য তারা কোচিংয়ে ক্লাস চালাচ্ছেন।

রাজধানীসহ সারাদেশে শাখা রয়েছে উদ্ভাস কোচিং সেন্টারের। ঢাকায় ১৭টিসহ বর্তমানে সারাদেশে উদ্ভাসের শাখা ৮৯টি। রবিবার থেকে এ কোচিং সেন্টারের সব শাখায় পুরোদমে ক্লাস শুরু হয়েছে। স্কুলে না গেলেও শিক্ষার্থীরা কোচিংয়ে যাচ্ছে। উপস্থিতিও বেশ ভালো বলেই জানিয়েছেন কোচিং সেন্টারের শিক্ষক-কর্মচারীরা।

উদ্ভাস কোচিং সেন্টারের রাজধানীর শান্তিনগর শাখার কো-অর্ডিনেটর রাকিব সংবাদমাধ্যমকে জানান, তার শাখায় চারটি ব্যাচে প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। রবিবার ছুটির পর প্রথম দিন ক্লাস হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা সব আশপাশের হওয়ায় প্রায় সবাই কোচিংয়ের ক্লাসে এসেছেন।

খিলগাঁও শাখার ইনচার্জ ও সিনিয়র এক্সিকিউটিভ মনির হোসাইন। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, অনেক দিন বন্ধ ছিল কোচিং। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ। অনেক অভিভাবকই আমাদের বলছেন—যেন কোচিংয়ে পড়াশোনাটা চালানো হয়। তারপরও যদি উদ্ভাস কর্তৃপক্ষ কোচিং বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়, সেটা জানালে আমার শাখাও বন্ধ থাকবে।

তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। তার মধ্যে কোচিং কেন খোলা রাখা হচ্ছে, এমন প্রশ্নে উদ্ভাসের ডেপুটি চিফ ম্যানেজার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সারাদেশে আমাদের যত শাখা আছে, তার সবগুলোতে ক্লাসরুমে এসি রয়েছে। নিজস্ব জেনারেটর ব্যবস্থা আছে। লোডশেডিং হলেও শিক্ষার্থীদের কোনো ভোগান্তি হবে না। এজন্য আমরা গরমের মধ্যেও ক্লাস চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরবর্তী সময়ে অন্য কোনো সিদ্ধান্ত হলে সেটা জানিয়ে দেওয়া হবে।

কোচিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আরেফিন। তার পরিচালিত কোচিং সেন্টার বাংলাদেশ ক্যাডেট অ্যাকাডেমিও বর্তমানে খোলা। ঈদের ছুটির পর ১৬ এপ্রিল থেকে তার কোচিং সেন্টারে ক্লাস চলছে। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় তার চারটি শাখা রয়েছে। সেখানে এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে।

মাহবুব আরেফিন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর কোচিংয়ের পরিবেশ এক নয়। অধিকাংশ কোচিং সেন্টারে এখন এসি রয়েছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে আইপিএস রয়েছে। তাছাড়া বেশিরভাগ কোচিং সেন্টার সকালে এবং সন্ধ্যার দিকে চালানো হচ্ছে। এতে যে সময়টাতে বেশি তাপপ্রবাহ থাকে, তখন শিক্ষার্থীদের বাইরে বের হতে হচ্ছে না।

কোচিং অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত বা এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, না। আমাদের বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। কেউ যদি নিজ উদ্যোগে বন্ধ রাখে সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।

বন্ধ নেই শিক্ষকদের ব্যাচভিত্তিক প্রাইভেটও
কোচিং সেন্টারের মতোই পুরোদমে চালু রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ব্যাচভিত্তিক প্রাইভেট পড়ানো। রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলসহ নামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ব্যাচভিত্তিক প্রাইভেট পড়িয়ে থাকেন।

২৬ দিনের ছুটির পর শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি চিন্তা করে স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা হলেও শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ করেননি। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তবে কোনো শিক্ষকই প্রাইভেট চালু রাখার কথা স্বীকার করেননি। অনেকে দাবি করেছেন, তিনি প্রাইভেট পড়ানই না।

দৈনিক সরোবর/এএস