ঢাকা, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

কাঁচা মরিচ দ্বিগুণ, গত ঈদেও জিরা ৪৫০ এখন ১০০০ টাকা

সরোবর প্রতিবেদক 

 প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২৩, ০৭:৫৭ বিকাল  

ফাইল ফটো

আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে অস্থির মসলার বাজার। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে জিরা আর আদা। বর্তমানে খুচরা বাজারে জিরা বিক্রি হচ্ছে সাড়ে নয়শ থেকে এক হাজার টাকা কেজিতে। অথচ গত ঈদে এই জিরার দাম ছিল ৪৫০ টাকা।

কোরবানির ঈদের আগে পশুর ঊর্ধ্বমুখী দামের মধ্যে মসলার বাজারের এ অস্থিরতা বেশি ভোগাচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষদের। ঢাকার রামপুরা বাজারে মসলা কিনতে আসা একজন বলেন, কয়েক সপ্তাহ আগে জিরা কিনেছি ৪৫০ টাকা দরে। এখন হাজার টাকা। এত অল্প সময়ের ব্যবধানে দাম কীভাবে দ্বিগুণ হয়ে যায়?

তিনি বলেন, সবকিছু আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের আওতার বাইরে চলে যাচ্ছে। সরকার সঠিকভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে না। এজন্য দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

এদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাত্র দুমাস আগে গত ঈদের সঙ্গে তুলনা করলে কিছু কিছু মসলার দাম দুই থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বেড়েছে। আর এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে পাঁচগুণ পর্যন্ত। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ভালো মানের জিরা ও আদার দাম। এছাড়া রসুন, হলুদ, মরিচ, লবঙ্গ, দারুচিনি, এলাচসহ অন্যান্য মসলার দামও চড়া।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদুল ফিতরের পর থেকে মসলার বাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে পাইকারি বাজারে জিরা বিক্রি হচ্ছে হাজার টাকায়, যা ওই সময় ৪৫০ টাকা ছিল। আর আদার দাম এ সময়ের ব্যবধানে ১২০ থেকে বেড়ে ৩৬০ টাকা হয়েছে।

গত সপ্তাহে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা কেজি। আজ সেই কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৪০ টাকা কেজিতে। এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে ১২০-১৪০ টাকা। দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে একটি দোকানের কাঁচা মরিচ বিক্রেতা মো. মনির দাম বলেন, এখন উৎপাদন কম হচ্ছে, তাই দাম বাড়তি। তবে কয়েক দিন পরেই আবার দাম কমে যাবে।

আজকের বাজারে ইলিশ মাছ ১৬০০-১৯০০ টাকা কেজি, রুই মাছ ৪০০-৪৫০, কাতল মাছ ৫০০-৬০০, কালিবাউশ মাছ ৫০০, চিংড়ি মাছ ১০০০, কাঁচকি মাছ  ৫০০, টেংরা মাছ ৭০০-৮০০, কৈ মাছ ২৫০, পাবদা মাছ ৫০০ টাকা, শিং মাছ ৬০০ কেজি। এছাড়া ব্রয়লার মুরগি ১৭৮-১৮০, কক মুরগি ২৩০-২৩৮, দেশি মুরগি ৬০০, গরুর মাংস ৭৭০-৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া মুদি দোকান ঘুরে জানা যায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম রয়েছে প্রায় অপরিবর্তিত। যদিও বেড়েছে জিরা ও চিনির দাম। আজ জিরা বিক্রি হচ্ছে ৯২০ টাকা কেজিতে। গত সপ্তাহে যা বিক্রি হয়েছিল ৮৫০ টাকায়। চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫-১৪০ টাকায়। গত সপ্তাহে যা ছিল ১৩০ টাকা।

বাজারের মতো একই তথ্য দিচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। সংস্থাটির তথ্যমতে, ২০২২ সালের জুনে প্রতি কেজি জিরা সর্বনিম্ন ৩৮০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর ওই সময়ে আমদানি করা আদা মান ভেদে কেজিপ্রতি ৬০-১০০ টাকায় এবং দেশি আদা ১২০-১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ বছর ব্যবধানে আদার দাম তিন থেকে পাঁচগুণ বেড়েছে।

অন্যদিকে কোরবানি মাংসের অন্যতম আরেক অনুষঙ্গ রসুনের দামও বাড়তি। আমদানি করা রসুন পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা দরে, আর খুচরা বাজারে দাম ধরা হয়েছে ১৬০-১৮০ টাকা কেজিতে। দেশি রসুনের পাইকারি দর কেজিপ্রতি ১২০ টাকা এবং খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। মানভেদে কোনো কোনো রসুন ১৮০ টাকা কেজিও দাম চাওয়া হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারের মসলা এক ব্যবসায়ী বলেন, যে পরিমাণ মসলার চাহিদা রয়েছে, সেরকম সরবরাহ এখন নাই। এ কারণে বাজারে দাম বাড়ছে। আমদানি নির্ভর হওয়াতে ডলারের দাম বাড়ার একটি প্রভাব রয়েছে।

কারওয়ান বাজারের মসলার দোকান সূত্রে জানা গেছে, এখন প্রতি কেজি লবঙ্গ বিক্রি হয় এক হাজার ৬০০ টাকায়। গত মাসে লবঙ্গের দাম ছিল প্রতিকেজি দেড় হাজার টাকা। আবার এক মাসের ব্যবধানে এলাচের দাম প্রতি কেজিতে প্রায় ১০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৬০০ থেকে দুই হাজার টাকায়। এছাড়া প্রতিকেজি গোলমরিচ ৭০০-৭৫০ টাকায়, দারুচিনি ৪৫০ টাকা এবং ধনিয়া ২৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

দৈনিক সরোবর/আরএস