ঢাকা, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

তিস্তা পাড়ে কাটছে কৃষকের নির্ঘুম রাত

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

 প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২৩, ০৯:২১ রাত  

ছবি: প্রতিনিধি

কয়েকদিন আগেও তিস্তার বুকে ছিল বালুচর। সেখানে বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ করেছিল তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা। কিন্তু ভারতের গজলডোবার গেট খুলে দেওয়ার পর থেকে সেই চিত্র আর এখন নেই। থৈ থৈ করছে পানি। তলিয়ে গেছে অসংখ্য ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। পানিবন্দী হয়ে নির্ঘুম রাত কাটছে পাঁচ উপজেলার ২৫ হাজার পরিবারের।

শনিবার সকালে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিতে ঘরবাড়ি তালিয়ে যাওয়ায় অনেকেই নিঃস্ব হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন সড়কে খোলা আকাশের নিচে।

স্থানীয়রা জানান, ভারতের গজলডোবায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত থেকে পানি ছেড়ে দেওয়ায় বাংলাদেশ প্রান্তে তিস্তার পানি বাড়ছে। তিস্তা ও ধরলার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, তুষভান্ডারের আমিনগঞ্জ, কাকিনা, পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুণ্ডা, ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে চলাচলের রাস্তা। দুর্ভোগ বেড়েছে বানভাসি মানুষের। কয়েক হাজার একর আমন ধানের বীজতলাসহ অনেক ফসলি জমি তিস্তার পানিতে ডুবে গেছে। ইতোমধ্যে চর এলাকাগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে গেছে।

হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারি ইউনিয়নের দোয়ানি গ্রামের বাসিন্দা আফছার আলী বলেন, গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ঘরবাড়িতে বন্যার পানি ঢুকতে শুরু করে। শুক্রবার সকাল নাগাদ ঘরের ভেতর হাঁটু পানি। শনিবারেও বাড়িতে পানি রয়েছে ফলে রান্নাবান্না বন্ধ। সবাই শুকনো খাবার খেয়ে আছি।

হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম‌্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ‌্যামল ও পাটিকাপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম‌্যান মজিবুল আলম সাহাদাত জানান, তাদের ইউনিয়নের অসংখ‌্যা পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।

পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ভারত থেকে আসা ঢলের পানির তোড়ে দহগ্রামের গুচ্ছগ্রাম যাওয়ার রাস্তাটি ভেঙে গিয়ে প্রায় হাজারখানেক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। 

জেলার সদর উপজেলার কালমাটি এলাকার বাসিন্দা খয়বর আলী বলেন, ‘তিস্তার পানি বেশ কয়েকদিন থেকে বাড়াকমার মধ্যে রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। শুনেছি ব্যারাজ পয়েন্ট পানি কমেছে। কিন্তু আমাদের এলাকার ভিতরে পানি এখনো ঢুকছে।’ 

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জি. আর সরোয়ার বলেন, ‘পানিবন্দি মানুষের জন্য শুকনো খাবার ও ত্রাণ বিতরণের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। ইতিমধ্যে অনেক পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।’

মহিষখোঁচা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী চৌধুরী বলেন, ‘শনিবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সহযোগিতায় ৫’শত পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ হয়েছে।’

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, ‘কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি ছেড়ে দেওয়ায় তিস্তা ও ধরলার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তাপাড়ের মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে।’

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ্ জানান, ‘ইতিমধ্যে সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের পানি বন্দি বন্যাদুর্গত মানুষদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। জেলার পাঁচ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের বানভাসি মানুষের সার্বিক খোঁজখবর রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

বন্যার্তদের সহযোগিতার করা হবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন তিনি।

দৈনিক সরোবর/আরএস