ঢাকা, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন শাকিল, চান চিকিৎসা সহায়ত

সরোবর  ডেস্ক

 প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২৪, ০৪:১৬ দুপুর  

বৈষম্যবিরোধী ছাএ আন্দোলনে গিয়ে দগদগে ক্ষত নিয়ে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন অনেকে। তাদের একজন শাকিল আহম্মেদ (১৮)। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৪ আগস্ট বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর মিরপুরে গুলিবিদ্ধ হন শাকিল আহম্মেদ। তার কাছে থাকা ফোন থেকে কল আসে বোনের মোবাইল নম্বরে। জানানো হয় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পরে পরিবার ও সহপাঠীদের সহযোগিতায় নেওয়া হয় মিরপুরের একটি হাসপাতালে। সেখান থেকে আনা হয় কল্যাণপুর ইবনে সিনা হাসপাতালে। 

আহত শাকিল মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ভান্ডারীকান্দি ইউনিয়নের ক্রোকচর সরদারকান্দি এলাকার মৃত শিরাজ হাওলাদারের ছেলে। এক ভাই এক বোনের মধ্যে শাকিল ছোট। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে শাকিলের বাবা মারা যাওয়ার পর ছোটবেলা থেকেই তাদের নিয়ে মা সেলিনা বেগম চলে যান রাজধানীতে। শাকিল শ্যামলী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। তারা ঢাকার মিরপুর ১ নম্বর এলাকায় থাকেন।

খোঁজ নিয়ে জানা য়ায়, গত ৪ আগস্ট বন্ধু ও সহপাঠীদের সঙ্গে আন্দোলনে যান শাকিল। পরিবারের লোকজন বাধা দিলেও শোনেননি। মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন। এতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। ফলে শরীরে দেখা দিয়েছে রক্তস্বল্পতা। তাকে বাঁচাতে গত ১৪ দিনে ১৪ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। গুলিবিদ্ধ শরীরে করা হয়েছে দুবার বড় ধরনের অস্ত্রোপচার। শনিবার রাত ১০টার দিকে আরো একটি অস্ত্রোপচার করা হয়।তবু শাকিল শঙ্কামুক্ত নন বলে জানান চিকিৎসকরা।

শাকিলের বোন শাকিলা আক্তার বলেন, ছোটবেলা বাবা আমাদের রেখে মারা যান। আমি ইবনে সিনা হাসপাতালে চাকরি করি। সেদিন আন্দোলনে গিয়ে ভাই  আহত হয়। উদ্ধার করে মিরপুরের আলোক হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে নেওয়া হয় কল্যাণপুরের ইবনে সিনা হাসপাতালে। এখন এখানেই আছে। একটি বুলেট বিদ্ধ হয় তার মলদ্বারে। আরেকটি গুলি লেগে পায়ের রগ ছিঁড়ে যায়। ইতোমধ্য তিনটি অপারেশন হয়েছে। এতে প্রায় ৩ লাখ টাকার মতো বিল এসেছে। চিকিৎসক বলেছেন, আরো দেড় থেকে দুই মাস হাসপাতালে থাকতে হবে। একমাত্র ভাইয়ের অনিশ্চিত জীবন। চিকিৎসার জন্য দরকার অনেক টাকা আর রক্ত। এমন পরিস্থিতিতে সবকিছুর হাল ধরতে হয়েছে আমাকে। এই মুহূর্তে আমাদের অর্থনৈতিক সাহায্য দরকার। না হয়, তার চিকিৎসা চালানো সম্ভব হবে না।

ছেলের এই অবস্থায় কীভাবে কী করবেন এসব ভেবে দুশ্চিন্তার অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছেন শাকিলের মা। তিনি বলেন, শাকিলকে না করেছিলাম। বলেছিলাম আমরা গরিব মানুষ। তুই আন্দোলনে যাইস না। ও বলেছিল, আমার ভাই বন্ধু, সহপাঠীরা মরে যাচ্ছে। আমি ঘরে বসে থাকতে পারি না। আমি গেলাম মা। সেই যে বর হলো এখনও হাসপাতালে আছে। কী করবো, কিছুই বুঝতেছি না। এই বিপদে কাউকে পাশে পাচ্ছি না। 

শিবচরের বাশকান্দি ইউনিয়ন যুবদল নেতা সুজন বেপারি বলেন, খবর পেয়ে আমরা তাকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি তার অবস্থা খুব খারাপ। ড্রেন করে পাইপ দিয়ে প্রস্রাব-পায়খানা করানো হয়। শাকিলের এই অবস্থা দেখে খুব খারাপ লাগছে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমেটির সহ-সাধারণ সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রোকন উদ্দিন মিয়া বলেন, আন্দোলনে গিয়ে ছেলেটি গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর শুনে সেখানে যাই। দেখে আমি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি। প্রথমত শুনতে পাই, ওর বাবা নেই। দ্বিতীয়ত মা যখন কাপড় সরিয়ে শরীর দেখালো তখন খুব কষ্ট হয়েছিল। এত সুন্দর, হাসি খুশি একটি ছেলে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। আমি চেষ্টা করবো ওর পাশে থাকার। তবে সবাই এগিয়ে এলে ছেলেটার সুচিকিৎসা হবে।

দৈনিক সরোবর/এমই