add

ঢাকা, সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১

তারা পাকিস্তানের দালাল: প্রধানমন্ত্রী 

সরোবর প্রতিবেদক  

 প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২৪, ০৬:৪১ বিকাল  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারতের কাছে দেশ বিক্রির গুজব যারা ছড়াচ্ছে, তারা পাকিস্তানের দালাল। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা এই দেশকে বিক্রি করে না, কারণ আমরা এই দেশ স্বাধীন করেছি, এটা ভুলে গেলে চলবে? আর যে কষ্টটা আমরা ভোগ করি সেটা আমরা জানি। যারা বিক্রির কথা বলে তারা একাত্তর সালে পাকিস্তানের দালালি করেছে। একাত্তরে স্বাধীনের যুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনা দেশ বিক্রি করে না। এই দেশ আমরা স্বাধীন করেছি, এটা মনে রাখা উচিত।

ভারত সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে মঙ্গলবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধানমন্ত্রী। সম্মেলনের শুরুতে লিখিত ভাষণ পড়ে শোনান তিনি। পরে শুরু হয় সাংবাদিকদের প্রশ্নপর্ব।

সেখানে একজন সাংবাদিক জানতে চান, ভারতের কাছে ‘দেশ বিক্রির ষড়যন্ত্র চলছে’-বলে সোশাল মিডিয়ায় যে সমালোচনা হচ্ছে, তা প্রধানমন্ত্রী কীভাবে দেখছেন। জবাবে শেখ হসিনা বলেন, আমার একটা প্রশ্ন আছে, বিক্রির ওজনটা কীভাবে মাপছে? কোনো কিছু বিক্রি হলে তো ওজন মাপা হয়, এখন তো অবশ্য ইলেকট্রিক মেশিন আছে। আগে তো দাঁড়িপাল্লায় হত, কিসে মেপে বিক্রি হচ্ছে আর বিক্রিটা হয় কীভাবে? বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ, মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি।

বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক নিয়ে সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের জানা উচিত, সারা পৃথিবীতে একটি মাত্র মিত্র শক্তি, যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজেদের রক্ত ঢেলে দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করে দিয়েছে। আমাদের সমস্ত মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে ট্রেনিং পেয়েছে। পৃথিবীর যে কোনো দেশে, যেখানেই কোনো মিত্র শক্তি সহযোগিতা করেছে, তারা কিন্তু সেই দেশ ছেড়ে কোনোদিন ফেরত যায়নি।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মিত্র বাহিনীকে ভারতে ফেরত পাঠানোর ইতিহাস তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এখনও জাপানে আমেরিকান সৈন্যসহ এরকম পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ দেখলে সেই দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে। সেখানে ভারত কিন্তু ব্যতিক্রম। তারা মিত্র শক্তি হিসেবে আমাদের পাশে থেকে যুদ্ধ করে এসেছে। কিন্তু যখনই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চেয়েছেন তারা দেশে ফিরে যাক, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধি রাজি হয়েছেন এবং তাদের ফেরত নিয়ে গেছেন। তারা যুদ্ধের সরঞ্জামাদি সবকিছু নিয়েই কিন্তু এসেছিল, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সারেন্ডার করেছিল, তাদের কাছে। আমরা কিন্তু স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র পেয়েছি। কারণ ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এর পরে যারা কথা বলে ভারতের কাছে বিক্রি হয়ে যাবে। বিক্রিটা হয় কীভাবে সেটাই তো আমার প্রশ্ন। আসলে যারা এটা বলে তারা নিজেরাই ভারতের কাছে বিক্রি করা।

ভারত নিয়ে জিয়াউর রহমান, এইচএম এরশাদ এবং খালেদা জিয়ার মনোভাব নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা তো দেখেছি... উপর দিয়ে ভারত বিরোধী কথা বলেছে আর ভারতে গিয়ে পা ধরে বসে থেকেছে, এগুলো আমার নিজের দেখা, জানা। এই ধরনের কথা বলার কোন অর্থ হয় না।

ট্রানজিট দিলে ক্ষতি কী?

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম দেশ, যত ছোট হোক আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। আর সেই সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং স্বকীয়তা বজায় রেখেই আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেই আমরা কাজ করছি। আজকে আমরা সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা খুলে দিলাম। এতে সব থেকে বেশি লাভবান তো আমাদের দেশের মানুষ। তাদের যোগাযোগ করতে হয়, যেতে হয়। চিকিৎসার জন্য যায়, পড়াশোনার জন্য যায়, অন্যান্য কাজে যায়, হাট বাজার করতে যায়, আজমির শরিফে যায়, বিভিন্ন জায়গায় যায়, ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রটাও তো আরও উন্মুক্ত হবে। কাজেই বিক্রি আমরা করি না, যারা কথা বলে তারাই বাঁচার জন্য অথবা ব্যবহার করুন আমাকে এই দিয়ে বসে থাকে।

একটা দেশের মধ্যে অন্য দেশের ট্রানজিট দিলে ক্ষতি কী– সেই প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, রেল যতগুলো বন্ধ ছিল আমরা আস্তে আস্তে খুলে দিচ্ছি। ফলে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য সহজ হচ্ছে। আমাদের ওই অঞ্চলের লোকজন উপকৃত হচ্ছে। তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার সুযোগ হচ্ছে। আর যে সমস্ত জিনিস আমাদের দেশে আনার সুযোগ হচ্ছে, অর্থনীতিতে এটা বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছে। বাংলাদেশ কি চারিদিকে দরজা বন্ধ করে বসে থাকবে এটা হয় না। কোনো দেশ পৃথিবীতে এমন করে না।

ট্রানজিট প্রসঙ্গে ইউরোপের উদাহরণ টানেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ইউরোপের দিকে তাকান, সেখানে কোন বর্ডারই নাই। তাহলে কি একটা দেশ আরেকটা দেশের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। এক সময় নো মেনস ল্যান্ড ছিল, আমরা যখন ইউরোপে গেছি, একটা গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে কাস্টমস চেক করে আবার গাড়িতে উঠতে হয়েছে। প্রত্যেকটা দেশ স্বাধীন দেশ। কই কেউ কাউকে তো বিক্রি করেনি। তাহলে সাউথ এশিয়াতে কেন বাধা দিয়ে রাখব? আমাদের দেশের মানুষগুলোর কথা চিন্তা করতে হবে। 

দৈনিক সরোবর/এমএস