ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১

‘নির্বাচিত সংসদই রাষ্ট্র সংস্কার করবে’ 

সরোবর প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: মার্চ ২৩, ২০২৫, ০৮:০৫ রাত  

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ‘রাষ্ট্র সংস্কার করবে নির্বাচিত সংসদ’,-দলীয় এমন অবস্থানের ভিত্তিতেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া সংস্কার প্রস্তাবগুলোর জবাব জমা দিয়েছে। 

সূত্র জানান, ঢালাওভাবে মতামত চাওয়া হলেও যেসব সংস্কার এ মুহূর্তে প্রয়োজন নেই, সেগুলোর ক্ষেত্রে তারা এখন মতামত দিচ্ছে না। একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ ও কাঠামো তৈরিতে প্রয়োজনীয় সংস্কারে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া স্প্রেডশিটে বিস্তারিত সবকিছু উঠে আসেনি। তাই আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে স্প্রেডশিটের পাশাপাশি বিস্তারিত প্রতিবেদন দিচ্ছি। যাতে কোনোরকম বিভ্রান্তির সুযোগ না থাকে। 

দলটির দায়িত্বশীলরা জানান, বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা প্রস্তাবের আলোকে পাঁচ সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলো গুরুত্ব দিয়ে মতামত তৈরি করা হয়েছে। জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের মৌলিক সংস্কারে তাদের খুব একটা আপত্তি নেই। সংবিধানের মৌলিক সংস্কারে হাত দিলে নির্বাচন বিলম্বিত হতে পারে, তাই এ ধরনের সংস্কার প্রক্রিয়ায় একমত নয় বিএনপি। নীতিনির্ধারণী নেতারা মনে করেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংবিধান ও নির্বাচনব্যবস্থার প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রয়োজন। এজন্য জরুরি ভিত্তিতে সংবিধান ও নির্বাচনব্যবস্থায় যে ধরনের সংস্কার প্রয়োজন, সে ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়ে মতামত তুলে ধরা হয়েছে। এর বাইরে নির্বাচন ও প্রশাসনিক সংস্কারের প্রস্তাবগুলোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

সংস্কার প্রশ্নে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ ও ‘গণপরিষদ নির্বাচন’ নাকচ করে দিয়েছে দলটি। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন ও প্রাদেশিক সরকারের ফর্মুলায় সম্মত নয় তারা। তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদকালে এক সঙ্গে জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পক্ষেও নয় বিএনপি। সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ন্যূনতম বয়স কমিয়ে ২১ বছর করার বিষয়েও আপত্তি জানানো হয়েছে। একই ব্যক্তি পরপর দু‘বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হবেন না, এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যের প্রস্তাবও রয়েছে। আইনসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কিংবা আইনসভা ভেঙে গেলে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার শপথ না নেওয়া পর্যন্ত একটি অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব পালন করবে এতে অসম্মতি জানানো হয়েছে। তবে নির্বাচনকালীন ৯০ দিনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার থাকার বিষয়ে দলটি ঐকমত্যের কথা জানানো হয়েছে। 

নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ, দায়িত্ব ও ক্ষমতা এবং স্বার্থের দ্বন্দ্ব স্পষ্টীকরণ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি আইন প্রণয়ন করার বিষয়ে মতামত দেওয়া হয়েছে। বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ অন্য ক্ষেত্রে মৌলিক সংস্কারের ব্যাপারে তাদের খুব একটা আপত্তি নেই।

নেতারা বলছেন, এ সংবিধানের আলোকেই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নিয়েছে। যে সময়ে দেশে কোনো সংবিধান রচিত থাকে না, মানে একটা নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, তখন গণপরিষদের প্রয়োজন হয়। দলটি মনে করে, বিগত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে সংবিধান দলীয়করণ করে গণতন্ত্রের বিপক্ষে এবং নিজেদের পক্ষে সাজিয়েছিলেন। এ কারণে সংবিধানে যে ব্যত্যয় বা বিচ্যুতি হয়েছে, সেজন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রয়োজন। রাজনৈতিক মতৈক্যে সেসব সংস্কার করবে নির্বাচিত সংসদ।

সংবিধান, জনপ্রশাসন, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ পাঁচটি সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশের বিষয়ে মতামত চেয়ে ৬ মার্চ ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে ‘স্প্রেডশিট’ (ছক আকারে) পাঠিয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সেখানে দলগুলোকে ১৩ মার্চের মধ্যে স্প্রেডশিটে বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাবের ওপর ‘একমত’, ‘একমত নই’ এবং ‘আংশিকভাবে একমত’ এ তিনটি অপশনের যে কোনো একটিতে টিকচিহ্ন দিয়ে মতামত দিতে বলা হয়েছিল।

দৈনিক সরোবর/ইএইচপি