ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩১

শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ না পেয়ে ক্ষোভ, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যাবেন না মমতা

সরোবর ডেস্ক

 প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২২, ০৮:৪৯ রাত  

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি জানিয়েছেন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তি উদ্ভোধন উপলক্ষে কেন্দ্রীয় সরকারের আমন্ত্রণপত্র পছন্দ হয়নি বলে ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন না।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আরো জানান, বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি একটি চিঠি পান। যেখানে তাকে দিল্লিতে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।

এ নিয়ে বৃহস্পতিবার একটি র‍্যালিতে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, আমি গতকাল একজন আন্ডার সেক্রেটারি থেকে চিঠি পেয়েছি যে প্রধানমন্ত্রী সন্ধ্যা ৭ টায় নেতাজির মূর্তি উদ্বোধন করবেন। আপনাকে অবশ্যই সন্ধ্যা ৬ টায় সেখানে উপস্থিত থাকতে হবে। চিঠি দেখে মনে হয়েছে যেন আমি তাদের চাকর। একজন আন্ডার সেক্রেটারি কীভাবে একজন মুখ্যমন্ত্রীকে এভাবে লিখতে পারেন? সংস্কৃতিমন্ত্রী এত বড় হয়ে গেলেন কেন?

এদিন কলকাতায় নেতাজির মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানান মমতা। তিনি বলেন, আমন্ত্রণপত্র সঠিকভাবে না দেওয়ায় আমি এখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছি।  

আন্যদিকে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারে বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে মমতা বলেন, দেশের পররাষ্ট্র নীতি সম্পর্কে বলতে চাই না। হাসিনাজি ভারতে এসেছেন। আমার সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুবই ভালো। ওদের সকলের সাথে। আজকে নয়, চিরকাল। কিন্তু দেখা করতে দিল না।

পুজোর সময় আমি উনাকে চিঠি দিই। উনি আমাকে শাড়ি পাঠায়। আমিও ঈদের সময় পাঠাই। উনি আম পাঠায়, ইলিশ মাছ পাঠায়। আমরাও যতটা পারি করি। এই প্রথম দেখলাম বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এসেছেন কিন্তু বাংলা বাদ। আমি কৃতজ্ঞ যে উনি দেখা করতে চেয়েছিলেন। আমি সংবাদমাধ্যমে দেখেছি। তবুও এটা দেশের ব্যাপার আমি বলছি না।

এরপর মমতা হিন্দিতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এত রাগ কিসের? বড় লোকেদের এত ভয়ের কি আছে? শিকাগো থেকে আমার আমন্ত্রণ এসেছিল; কিন্তু আটকে দিয়েছে, আমাকে যেতে দেওয়া হয়নি। দিল্লির স্টিফেন্স কলেজ থেকে আমন্ত্রণ এসেছিল, আটকে দিয়েছে, যেতে দেওয়া হয়নি। চীন থেকে আমন্ত্রণ এসেছিল, সেখানেও আটকে দেওয়া হয়েছে, যেতে দেওয়া হয়নি। বাংলায় ঘুরলেই সারা বিশ্ব ভ্রমণ হয়ে যায়। তাই বাইরে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি বছর ১৯ জুলাই এক শুভেচ্ছা বার্তায় মমতাকে বলেছিলেন, সুবিধাজনক সময় বাংলাদেশ সফরের জন্য আমন্ত্রণ রইল। সেপ্টেম্বরে ২০২২-এ আমার নির্ধারিত নয়াদিল্লী সফরকালে আপনার সাথে সাক্ষাতের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা রাখি। দুই বাংলার ভাষা, সংস্কৃতি ও আদর্শগত সাদৃশ্যের ওপর ভিত্তি করে বিদ্যমান সম্পর্কের দৃঢ়তর করতে একযোগে কাজ করার বিকল্প নেই।

৫ সেপ্টেম্বর মমতা বলেছিলেন, সারা পৃথিবীতে আমাকে বক্তৃতা দিতে ডাকলেও আমি যেতে পারি না। কারণ, আমাকে যেতে দেওয়া হয় না। তাতে কোনো যায় আসে না। আজকে পবিত্র দিন, ৫ সেপ্টেম্বর, শিক্ষক দিবস। আমি জানি আজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দিল্লিতে এসেছেন। ভারতবর্ষে ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর অব্দি উনি আছেন। আমার ও পশ্চিমবাংলার মানুষের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে শুভেচ্ছা, অভিনন্দন এবং আমরা প্রণাম ও সালাম জানাই।

মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ওখানকার (বাংলাদেশ) শিক্ষকদেরও শ্রদ্ধা জানাই। কারণ, সংস্কৃতির দিক থেকে ওদের-আমাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আর যারা অ-বাঙালি আছেন তারা মনে রাখবেন আমাদের একটাই ধর্ম। সেটা হলো মানবিক ধর্ম। মনে রাখবেন, আমরা যেটা বারবার বলি, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। ধর্ম কারোও ব্যক্তিগত বিষয় হতে পারে, কিন্তু উৎসব সবার।

এর আগে, ২০১৮ সালের ২৬ মে কলকাতার তাজ বেঙ্গলে চল্লিশ মিনিট বৈঠক হয়েছিল হাসিনা-মমতার। সেবার দুদিনের সরকারি সফরে কলকাতায় এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দৈনিক সরোবর/ আরএস