ইসরায়েলকে কি দক্ষিণ আফ্রিকার মতো কোণঠাসা করা সম্ভব?
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৫, ০৩:৪০ দুপুর

গাজায় যুদ্ধ চলছে। এরই মধ্যে ইসরায়েল দিনে দিনে আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, ইসরায়েলের অবস্থা কি তবে 'দক্ষিণ আফ্রিকার' মতো হচ্ছে?
যেভাবে এক সময় রাজনৈতিক চাপ, অর্থনৈতিক, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বয়কটের সম্মিলিত চাপ প্রিটোরিয়াকে বর্ণবাদ ত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল, ইসরায়েলও কি একইভাবে কোণঠাসা হবে? না কি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ডানপন্থি সরকার সে দেশের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না করেই এই কূটনৈতিক ঝড়ের সম্মুখীন হতে পারবে, যাতে গাজা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরেকে ঘিরে তিনি তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন?
দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক ও এহুদ ওলমার্ট কিন্তু ইতোমধ্যে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক স্তরে অস্পৃশ্য করে তোলার অভিযোগ তুলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গ্রেফতার হওয়ার ঝুঁকি ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারেন এমন দেশের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে। এর নেপথ্যে রয়েছে 'ইন্টারন্যশালান ক্রিমিনাল কোর্ট' বা 'আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত'-এর তরফে জারি করা পরোয়ানা।
জাতিসংঘে ব্রিটেন, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম ও কানাডাসহ বেশ কয়েকটা দেশ ইতোমধ্যে জানিয়েছে, তারা আগামী সপ্তাহে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
উপসাগরীয় দেশগুলো, গত মঙ্গলবার কাতারে হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলি আক্রমণের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এই দেশগুলো একত্রিত হয়ে সমন্বিত প্রতিক্রিয়া জানাতে দোহায় বৈঠকও করছে। যে দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক রয়েছে তাদের আরও একবার ভেবে দেখার জন্য অনুরোধও জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গ্রীষ্মে গাজায় অনাহারের চিত্র প্রকাশ্যে আসা, গাজা সিটি আক্রমণ এবং সেখানে সম্ভাব্য ধ্বংসের জন্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রস্তুতির মতো একাধিক কারণে আরও বেশি সংখ্যক ইউরোপীয় সরকার (ইসরায়েলের প্রতি) অসন্তোষ প্রকাশ করছে। নিছক বিবৃতির দিয়েই থেমে থাকেনি তারা।
শুধু তাই নয়, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সোমবার স্বীকার করেছেন যে ইসরায়েল বিশ্ব মঞ্চে 'এক ধরনের' অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতার মুখোমুখি হচ্ছে। জেরুজালেমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই বিচ্ছিন্নতার জন্য তিনি বিদেশে ইসরায়েল সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারকে দায়ী করেন।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য ইসরায়েলের প্রথাগত মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে 'ইফ্লুয়েন্স অপারেশন' অর্থাৎ ইতিবাচক মনোভাব তৈরির অভিযানে বিনিয়োগ করা দরকার বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
চলতি মাসের শুরুতে পশ্চিম তীরে অবৈধ ইহুদি বসতি থেকে আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল বেলজিয়াম। ইসরায়েলি সংস্থাগুলোর সঙ্গে কেনাকাটা সংক্রান্ত নীতির পর্যালোচনার পরই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পাশাপাশি ওই অঞ্চলে বসবাসরত বেলজিয়ানদের কনস্যুলার সহায়তার ওপরও বিধিনিষেধ ঘোষণা করা হয়। পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের ওপর সহিংসতার অভিযোগ তুলেছিল বেলজিয়াম। ইসরায়েলের দুই কট্টরপন্থি মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির এবং বেজালেল স্মোট্রিচকে 'পার্সোনা নন গ্রাটা' (অবাঞ্ছিত বা অগ্রহণযোগ্য) হিসাবে ঘোষণা করেছিল।
ব্রিটেন ও ফ্রান্সসহ অন্যান্য দেশকেই এরই মধ্যে এই জাতীয় পদক্ষেপ নিতে দেখা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছর বাইডেন প্রশাসন সহিংস বসতি স্থাপনকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফেরার পর প্রথম দিনই সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
বেলজিয়ামের ঘোষণার এক সপ্তাহ পর, স্পেনও নিজেদের পদক্ষেপ ঘোষণা করে। বিদ্যমান ডি ফ্যাক্টো অস্ত্র নিষেধাজ্ঞাকে আইনে পরিণত করার পাশাপাশি আমদানির ওপর আংশিক নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে তারা।
শুধু তাই নয়, গাজায় গণহত্যা বা যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত যে কারও জন্য স্প্যানিশ ভূখণ্ডে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। অস্ত্র বহনকারী ইসরায়েলগামী জাহাজ ও বিমানকে স্প্যানিশ বন্দরে নোঙর করা বা সে দেশের আকাশসীমায় প্রবেশ করার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সার স্পেনের বিরুদ্ধে ইহুদি-বিরোধী নীতিকে প্রাধান্য দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। তিনি পাল্টা জানিয়েছেন, অস্ত্র বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কারণে ইসরায়েলের চেয়ে বেশি ক্ষতি হবে স্পেনের।
ইসরায়েলের জন্য উদ্বেগের কারণ: তবে ইসরায়েলের জন্য উদ্বেগের কারণ কিন্তু এখানেই থেমে নেই।
অগাস্ট মাসে দুই ট্রিলিয়ন ডলার সার্বভৌম সম্পদের নরওয়েজিয়ান তহবিল ঘোষণা করে, তাদের তালিকায় থাকা ইসরায়েলভিত্তিক সংস্থাগুলোকে সরানো হবে। ওই মাসেরই মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ২৩টি কোম্পানিকে ছাঁটাই করা হয়েছিল এবং অর্থমন্ত্রী জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছিলেন এই তালিকা আরও বাড়তে পারে।
এদিকে, ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরায়েলের ডানপন্থি মন্ত্রীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং সে দেশের সঙ্গে কিছু বাণিজ্যিক চুক্তি আংশিকভাবে স্থগিত করার পরিকল্পনা করছে।
১০ সেপ্টেম্বর 'স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন-এ দেওয়া ভাষণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেছিলেন, গাজার ঘটনাগুলো বিশ্বের বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে।
পরের দিন, ৩১৪ জন সাবেক ইউরোপীয় কূটনীতিক এবং কর্মকর্তারা উরসুলা ভন ডার লিয়েন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাযা কালাসকে চিঠি লিখে অ্যাসোসিয়েশন চুক্তি সম্পূর্ণরূভাবে স্থগিত করাসহ একাধিক কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন।
কেন দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে তুলনা: এক সময় দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্ষমতায় থাকা শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুরা সেখানকার সংখ্যাগুরু কৃষ্ণাঙ্গদের বিরুদ্ধে বর্ণবিদ্বেষমূলক আচরণ করতেন। তারই প্রতিবাদে ১৯৬০-এর দশক থেকে ১৯৯০এর দশকে বর্ণবাদের শেষ পর্যন্ত সাংস্কৃতিক এবং ক্রীড়া অনুষ্ঠানে বয়কটের প্রথা দেখা যেত।
ইসরায়েলের ক্ষেত্রেও এখন একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। ইউরোভিশন গানের প্রতিযোগিতা এই প্রসঙ্গে খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে না হলেও এই প্রতিযোগিতার সঙ্গে ইসরায়েলের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
১৯৭৩ সাল থেকে চারবার এই প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়েছে ওই দেশ। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ইহুদি জাতির আন্তর্জাতিক স্তরে গ্রহণযোগ্যতার প্রতীক।তবে আয়ারল্যান্ড, স্পেন, নেদারল্যান্ডস এবং স্লোভেনিয়ার মতো দেশ হয় স্পষ্টভাবে জানিয়েছে বা ইঙ্গিত দিয়েছে যে যদি ইসরায়েলকে ২০২৬ সালের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয় তবে তারা প্রতিযোগিতা থেকে সরে আসবে।
এই প্রসঙ্গে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা ডিসেম্বর মাসে।
বয়কটের আবেদন: হলিউডে একটা চিঠিতে ইসরায়েলি প্রযোজনা সংস্থা, ফিল্ম ফেস্টিভাল এবং সম্প্রচারকারীদের বয়কটের আহ্বান জানানো হয়েছিল। ওই চিঠিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের 'গণহত্যা ও বর্ণবাদে জড়িত' থাকার অভিযোগ তোলা হয়েছিল।
ওই চিঠির জেরে বয়কটের স্বপক্ষে চার হাজার স্বাক্ষর সংগ্রহ হয়েছে। যারা স্বাক্ষর করেছেন, তাদের মধ্যে এমা স্টোন এবং হাভিয়ার বারদেমের মতো বিখ্যাত নামও রয়েছে।
ইসরায়েলি ফিল্ম অ্যান্ড টিভি প্রোডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জুইকা গতলিব এই আবেদনকে 'সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর' বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেছেন, আমাদের মতো স্রষ্টা যারা বৈচিত্র্যমূলক কণ্ঠস্বরকে তুলে ধরে, তাদের নিশানা করার মাধ্যমে স্বাক্ষরকারীরা নিজেদের ন্যারেটিভকেই দুর্বল করেছে। আমাদের চুপ করানোর চেষ্টা করছে।
ক্রীড়া জগতেও একই চিত্র দেখা গিয়েছে। ভুয়েল্টা দে এস্পানা সাইক্লিং রেস বারবার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের কারণে বাধা পেয়েছে।
ইসরায়েল-প্রিমিয়ার টেক টিমের উপস্থিতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন ওই ব্যক্তিরা। বিক্ষোভের জেরে শনিবার প্রতিযোগিতা দ্রুত এবং বিশৃঙ্খলার মাঝেই শেষ হয়। পোডিয়াম অনুষ্ঠানও বাতিল করা হয়।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এই বিক্ষোভকে 'গর্ব' বলে বর্ণনা করেছেন। তবে বিরোধীদলীয় নেতারা ভিন্ন মত পোষণ করেন। তাদের বক্তব্য সরকারের এই কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক স্তরে দেশকে বিব্রত করেছে।
একইভাবে, স্পেনে সাতজন ইসরায়েলি দাবা খেলোয়াড় প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ান। কারণ তাদের বলা হয়েছিল যে তারা তাদের দেশের পতাকা বহন করে খেলতে পারবেন না।
ইতোমধ্যে এই পরিস্থিতিকে গণমাধ্যম 'কূটনৈতিক সুনামি'র আখ্যা দিলেও এই নিয়ে ইসরায়েলের সরকারের অবস্থান দ্বন্দ্বমূলকই থেকেছে।
প্রসঙ্গত, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যে তার দেশে পরমাণু অস্ত্র, বিমানবাহী রণতরী বা বিশাল তেল মজুদ নেই। তাই তারা গাজায় ইসরায়েলি হামলা প্রতিরোধ করতে পারছে না।
এই মন্তব্যের পর বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্পেনের বিরুদ্ধে 'নির্লজ্জভাবে গণহত্যামূলক হুমকি' দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন।
অন্যদিকে, বেলজিয়াম নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পর গিদিওন সার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে লিখেছেন, এটা দুঃখজনক যে ইসরায়েল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অস্তিত্বের হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করছে, যা ইউরোপেরও স্বার্থের পক্ষে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কিছু ইহুদি-বিরোধী মানুষ নিজেদের উন্মাদনা ছাড়তে পারছে না।
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সোমবার বলেছিলেন অস্ত্র এবং অন্যান্য প্রতিরক্ষা সরঞ্জামসহ বিভিন্ন পণ্যের বাণিজ্যের জন্য অন্য দেশের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা শুধু গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রেই নয়, প্রকৃত শিল্প উৎপাদনের ক্ষেত্রেও বাধার সম্মুখীন হতে পারি। আমাদের নিজেদের সক্ষমতার বিকাশ ঘটাতে হবে।
কূটনীতির দুর্বলতা?: তবে যারা বিদেশে ইসরায়েলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন তাদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ রয়েছে।
জেরেমি ইসাখারফ, ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত জার্মানিতে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন যে ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক অবস্থান কখনো এতটা 'দুর্বল' ছিল বলে তিনি মনে করেন না।
তার মতে এর মধ্যে অনেক পদক্ষেপই 'দুঃখজনক', কারণ এগুলো মূলত সব ইসরায়েলিকে নিশানা করছে।
তার কথায়, সরকারের নীতিগুলোকে বিচ্ছিন্নভাবে টার্গেট করার পরিবর্তে এটা অনেক ইসরায়েলিকে বিছিন্ন করে দিচ্ছে।
তিনি বিশ্বাস করেন যে ফিলিস্তিনকে একটা রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার মতো পদক্ষেপ লাভজনক নাও হতে পারে। কারণ এর ফলে স্মোট্রিচ এবং বেন গভিরের মতো ব্যক্তিদের শক্তি দেবে এবং পশ্চিম তীর নিয়ে তাদের যুক্তিকেও বল জোগাবে।
তার এই আশঙ্কা স্বত্তেও এই সাবেক রাষ্ট্রদূত বিশ্বাস করেন না যে ইসরায়েলের কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতা অপরিবর্তনীয়।
তিনি বলেন, আমরা এখনো দক্ষিণ আফ্রিকার অবস্থায় না থাকলেও তার আগের পর্যায়ে রয়েছি।
অন্যরা বিশ্বাস করেন যে ইসরায়েলকে বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া থেকে বিরত করতে আরও পরিবর্তনের প্রয়োজন।
আরেক সাবেক কূটনীতিক ইলান বারুচ আমাকে বলেন, বিশ্বে আমাদের স্থানকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। যাতে জ্ঞান ফিরে আসে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
বর্ণবাদের অবসানের ১০ বছর পরে বারুচ দক্ষিণ আফ্রিকায় ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। ওই পদ থেকে ২০১১ সালে ইস্তফা দেন তিনি।
সে সময় তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি আর ইসরায়েলের দখলদারিত্বমূলক পদক্ষেপের পক্ষে কথা বলতে পারবেন না। অবসর গ্রহণের পর থেকে তিনি ইসরায়েলের সরকারের কট্টর সমালোচক এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সমর্থক।
তিনি মনে করেন, ইসরায়েলের ওপর আরোপ করা সাম্প্রতিক বিধিনিষেধ গুরুত্বপূর্ণ। এভাবেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে বাধ্য করা হয়েছিল‘- তিনি বলেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন: বারুচের কথায়, "আমি বলব যে, ইউরোপীয়রা যেভাবে ইসরাইয়েলের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে, তাকে স্বাগত জানানো উচিত।
তিনি বলেন, যদি প্রয়োজন হয়, এর মধ্যে ভিসা ব্যবস্থায় পরিবর্তন এবং সাংস্কৃতিক বয়কটকেও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
তিনি যোগ করেন, আমি যন্ত্রণা পেতে রাজি আছি।
তবে ক্ষোভের সমস্ত অভিব্যক্তি এবং চাপ তৈরির কথা বললেও কিছু অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষক এই বিষয়ে সন্দিহান যে ইসরায়েল কূটনৈতিক দ্বারপ্রান্তে রয়েছে কি না।
সাবেক ইসরায়েলি পিস নেগোশিয়েটর ড্যানিয়েল লেভি আমাকে বলেছিলেন, স্পেনের মতো পদক্ষেপ নিতে পারে এমন দেশ ব্যতিক্রম।
তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রচেষ্টা যথেষ্ট সমর্থন পেতে সক্ষম হবে না। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপের তালিকায় রয়েছে অ্যাসোসিয়েশন চুক্তির কিছু বিধানগুলো বাতিল করা, ইসরায়েলকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের 'হরাইজন রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন প্রোগ্রাম' থেকে দূরে রাখা ইত্যাদি। কারণ জার্মানি, ইতালি ও হাঙ্গেরির মতো সদস্য দেশগুলো এই জাতীয় পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে।
ইসরায়েলের পক্ষে এখনো যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো সমর্থন রয়েছে। মার্কো রুবিও সরকারি সফরে যাওয়ার সময় বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে নিজেদের মজবুত সম্পর্ক অব্যাহত রাখবে।
লেভির মতে ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা অপরিবর্তনীয়। ট্রাম্প প্রশাসনের অব্যাহত সমর্থনের কারণে পরিস্থিতি এখনও সেই পর্যায়ে পৌঁছেনি যেখান থেকে গাজার ঘটনাবলীর দিশা পরিবর্তন করবে।
লেভি বলেন, নেতানিয়াহু রাস্তা ছাড়িয়ে এগিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু আমরা এখনো রাস্তার শেষ প্রান্তে পৌঁছাতে পারিনি। সূত্র: বিবিসি নিউজ বাংলা
প্রতিবেদক: পল অ্যাডামস, কূটনৈতিক সংবাদদাতা, জেরুজালেম
দৈনিক সরোবর/ এএইচ