ঢাকা, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১

দরিদ্র্য হচ্ছে ৬১ লাখ মানুষ

ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য ব্যয় কমিয়ে আনতে ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: জুলাই ১৭, ২০২৪, ০৩:০৩ দুপুর  

চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রতি বছর ৬১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে নেমে যায়। তা মোট জনসংখ্যার ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। কেননা কম সরকারি বরাদ্দ এবং যা বরাদ্দ হয় সেটিরও কার্যকর ব্যয় না হওয়ায় মানুষের পকেট থেকে চলে যাচ্ছে বছরে মোট স্বাস্থ্যব্যয়ের ৭৩ শতাংশ অর্থ। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে ওষুধ কিনতে গিয়ে। তা হলো ৫৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। ডায়াগনস্টিকের জন্য ২৭ দশমিক ৫২ শতাংশ, কনসালটেশনের জন্য ১০ দশমিক ৩১ এবং পরিবহনের জন্য খরচ হয় ৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ অর্থ। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা  প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক সেমিনারে বক্তারা এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।  ১৯৯৭ সালে চিকিৎসার পেছনে মানুষের পকেট থেকে চলে যেত ৫৫ দশমিক ৯ শতাংশ অর্থ। সেটি বেড়ে ২০২০ সালে হয়েছে ৬৮ শতাংশ। সর্বশেষ ২০২১ সালের হিসেবে সেটি আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩ শতাংশে। প্রতিবেশী দেশগুলোয় স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তি পর্যায়ে ব্যয় সবচেয়ে বেশি আফগানিস্তানে ৭৭ দশমিক ২০ শতাংশ। এরপরই রয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৩ শতাংশ। এছাড়া পাকিন্তানে ৫৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, নেপালে ৫১ দশমিক ৩০, ভারতে ৪৯ দশমিক ৮০, শ্রীলংকায় ৪৩ দশমিক ৬০, ভুটানে ১৮ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং সবচেয়ে কম খরচ হয় মালদ্বীপে ১৪ দশমিক ৩০ শতাংশ অর্থ। 
 
আশার কথা হলো, বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী অত্যন্ত জনবান্ধব।  তিনি সব রোগীর প্রতি সহনুভূতিশীল। তিনি বলেন, প্রেসক্রিপশন ছাড়া সামান্য সর্দি-জ্বর হলেই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেসিস্টেন্ট ভয়ানক একটি জিনিস। এ বিষয়ে ফার্মেসিতে গিয়ে কঠোরভাবে মনিটর করতে হবে। প্রেসক্রিপশন ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধে আমরা ডিজিটাল প্রেসক্রিপশন সিস্টেম চালু করার চেষ্টা করছি। এটি চালু করা হলে যথাযথ ওষুধের যথেচ্ছ ও মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। রোগী এবং চিকিৎসক উভয়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করাটা আমার দ্বায়িত্ব। স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা নিরসনে আমাদের একযোগে কাজ করতে হবে। এ ব্যাপার জনমত তৈরি করতে হবে। জনমতের কারণে পাঁচ বেড থেকে পাঁচশ বেডের বার্ন হাসপাতাল তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বার্ন হাসপাতাল। একটা রোগীও বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে না। রোগীরা আইসিইউতেও পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাচ্ছে, স্থান সংকুলান হচ্ছে যেটা আগে সম্ভব ছিল না।
 
বলার অপেক্ষা রাখে না, সবচেয়ে বেশি অর্থ চলে যায় ক্যান্সারের পেছনে। এতে ব্যয় হয় গড়ে ২ লাখ ২৩ হাজার ৯৩৮ টাকা। এছাড়া কোভিডের সময় খরচ হয়েছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৭০৯ টাকা। হার্টের অসুখে ৯৯ হাজার ৭১৫ টাকা, লিভারের অসুখে ৭৮ হাজার ৯৪৩ টাকা ও জন্ডিসে খরচ হয় ৭৬ হাজার ৪৫৩ টাকা। সবচেয়ে কম খরচ হয় জ্বরের কারণে। একজন রোগী হাসপাতালে গেলে মানুষের পকেট থেকে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় ওষুধ কিনতে, এরপর অপারেশনে ২৩ শতাংশ, ডায়াগনস্টিকে ১৭ শতাংশ, বেড চার্জ বাবদ ১৬ শতাংশ এবং অন্যান্য খাতে ব্যয় হয় ১৪ শতাংশ। তাই স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করতে গিয়ে মানুষ দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে হেলথ ইন্স্যুরেন্স করা প্রয়োজন। গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে সরকার স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের চেষ্টা করছে। কিন্তু শহরেও এ রকম কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিটি ওয়ার্ডে থাকা দরকার; যাতে মানুষ প্রাথমিক চিকিৎসা পেতে পারে কম খরচে। এছাড়া চিকিৎসা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের কার্যকর ব্যয়ও নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা, সরকার স্বাস্থ্য খাতে মানুষের ব্যক্তিগত ব্যয় কমিয়ে আনতে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।