ঢাকা, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১

ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত 

শিশু শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা নিয়ে ভাবুন

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২৪, ০৯:০০ রাত  

রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রথম শ্রেণিতে ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আনা লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আপিল বিভাগ বেঞ্চ আজ এ আদেশ দেন। হাইকোর্টের রায় অনুসারে ১৬৯ শিক্ষার্থীর শূন্য আসনে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে এখন শিক্ষার্থী ভর্তিতে স্কুল কর্তৃপক্ষের আইনগত কোনো বাধা রইল না। রায়ে বলা হয়, নির্দিষ্ট বয়সসীমার পরিপ্রেক্ষিতে প্রার্থীদের (আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের) ফিল্টার করার জন্য সফটওয়্যারে কোনো প্রোগ্রাম স্থাপন করা হয়নি। এর মধ্যে গত বছরের ২ ডিসেম্বর অযোগ্য ১৬৯ শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও অন্যান্য অনিয়মে জড়িতদের চিহ্নিত করতে অনুসন্ধান করতে হবে; যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের পুনরাবৃত্তি না হয় এবং নিষ্পাপ শিশুরা কর্তৃপক্ষের অবহেলা,অদক্ষতা ও অপকর্মের বিষয়বস্তু না হতে হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভিকারুন্নিসার পুরো ভর্তি প্রক্রিয়া অনুসন্ধান করবে। অনুসন্ধান কমিটি আরও ভালো ভর্তি প্রক্রিয়া চালু করার এবং অপরাধীদের খুঁজে বের করার পরামর্শ দেবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় আইন অনুযায়ী চিহ্নিত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ বিভাগের সচিবকে ৩ সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি করতে বলা হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব মর্যাদার নিচে নয় এমন কর্মকর্তার নেতৃত্বে কমিটি করতে হবে। বাকি দুই সদস্যের মধ্যে একজন শিক্ষা বোর্ড থেকে অন্যজন আইটি এক্সপার্ট বুয়েট থেকে যুক্ত করতে হবে।

গত ডিসেম্বরে লটারির মাধ্যমে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয় সাত বছরের বয়সের ১৬৯ শিক্ষার্থী । জানুয়ারি থেকে শুরু হয় তাদের ক্লাস। বন্ধুদের সঙ্গে দুই মাস ক্লাস করেছে তারা। এরপর হঠাৎ তারা জেনেছে বয়সের মারপ্যাঁচে তার ভর্তি বাতিল হয়েছে। তারা আর যেতে পারবে না স্কুলে। ভিকারুননিসা স্কুলকে তাদের ভর্তি বাতিলের নির্দেশনা দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। ওই নির্দেশনা মেনে ভর্তি বাতিল করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে অনেক অভিভাবক তার সন্তানের ভর্তি বাতিলের নোটিশ পেয়েছেন। দুই মাস ক্লাস করার পর সন্তানের ভর্তি বাতিলের খবরে মাথায় যেন বাজ পড়ে অভিভাবকদের।
তাদের দাবি, তারা কোনো ধরনের ছলচাতুরির আশ্রয় নেননি। অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমেও সন্তানকে ভর্তি করাননি। মাউশি ও ভিকারুননিসার ভুলে কেন তাদের শিশুসন্তানদের ভবিষ্যৎ এভাবে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। আবার ভিকারুননিসা স্কুল কর্তৃপক্ষ ও মাউশি কর্মকর্তারা বলছেন, ত্রুটি হয়েছিল; নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছিল। বেসরকারি স্কুলের ভর্তি নীতিমালার ৩ নম্বর অনুচ্ছেদে শিক্ষার্থীর বয়স নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। নীতিমালা অনুযায়ী ৬ বছরের বেশি বয়সীরা প্রথম শ্রেণির জন্য যোগ্য বিবেচিত হবে। 

বলার অপেক্ষা রাখে না, ভর্তি বাতিলের খবরে শিশুরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। তারা কিছুতেই এটা মানতে পারছে না। এখন শিশুসন্তানদের অন্য কোথাও ভর্তি করানোর চিন্তাও করতে পারছেন না মা-বাবা। মানবিক দিক বিবেচনায় তাদের ভর্তি বাতিল না করার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা। শিশুদের এভাবে মানসিক ধাক্কা দেওয়াটা সতিই দুঃখজনক। আমরা মনে করি, ভর্তি বাতিল হলেও শিশুদের ভবিষ্যৎ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এদিকে নজর দেয়া জরুরি। কার দোষ, কার ভুল নিয়ে আলোচনা না করে শিক্ষার্থীদের মানষিক দিকটি দেখতে হবে। ভবিষ্যতে বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা রাখা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা করা হবে। আমাদের প্রত্যাশা, ভর্তি বাতিলের রায়ে ১৬৯ শিক্ষার্থীর সমস্যার সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন সংশ্লিষ্টরা। এ সিদ্ধান্তে শিশু শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে না যায়।