ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩১

কমিটি গঠনের নির্দেশ

ভোগান্তি রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি 

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২৪, ০৮:৪৬ রাত  

ব্যয় সাশ্রয় করতে ২০১৮ সালে বাংলাদেশে প্রিপেইড বৈদ্যুতিক মিটার চালু করা হয় এবং ২০২৫ সালের মধ্যে সব ব্যবহারকারীকে এর আওতায় আনার লক্ষ্য রয়েছে। এর সুবিধা থাকা সত্ত্বেও ভোক্তারা অতিরিক্ত চার্জ, গোপন চার্জ এবং স্বচ্ছতার অভাবসহ নানা অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। এই সমস্যাগুলো ব্যাপক অসন্তোষ ও আর্থিক কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব অভিযোগ থাকলেও এখনো পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। গত ২১ মে জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুতের বিলিং প্র্যাকটিস পর্যালোচনা ও নিরীক্ষা, স্বচ্ছতা, অতিরিক্ত চার্জের রিফান্ড, জনসাধারণের সঙ্গে যোগাযোগ ও নীতি সংস্কার করার দাবি জানিয়ে সংশ্লিষ্টদের লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। এর পরিপেক্ষিতে বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার নিয়ে গ্রাহকদের ভোগান্তির অভিযোগ তদন্তে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া এ বিষয়টি এক মাসের মধ্যে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। আজ বুধবার (১২ জুন) এ বিষয়ে এক আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি মো. মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

বিদ্যুৎ খাতের নানা অপচয় ও বকেয়া বিল ঠেকাতে ভিশন ২০২১-এর আওতায় স্মার্ট প্রিপেইড মিটার সংযোজনের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। এর দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ স্মার্ট ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি (বেসিকো)। চীনা প্রতিষ্ঠান হেক্সিং ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানির সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চার করে এই বেসিকো প্রতিষ্ঠা করা হয়। দুঃখের বিষয়, বিদ্যুৎ খাতের অনিয়ম ঠেকাতে সরকার বিপুল অর্থ খরচ করে যে উদ্যোগ নিয়েছিল; সেটিতেই ধরা পড়েছে মহাদুর্নীতি। এ প্রকল্পের আওতায় বিদেশ থেকে মিটার কিনে এনে সেগুলোকে টেম্পারিং করে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লিখে ৮৪ কোটি টাকা পাঁচার করার অভিযোগ উঠেছে। এর পাশাপাশি প্রকল্পের কর্মীদের বিদেশ থেকে ট্রেনিং করানোর নামে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ১৮ কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। এভাবে স্মার্ট মিটারকে সেবা ক্রয় খাত দেখিয়ে ৩৪ কোটি টাকা বিদেশে পাঁচার, বেশি দামে মিটার বিক্রি করে ২৪ কোটি টাকা গচ্চা দেয়া, এলসির মাধ্যমে অর্থ পাঁচার, দুর্নীতি, জাল-জালিয়াতিসহ বিভিন্ন খাতে দেড়শ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগও পাওয়া গেছে। রয়েছে লোক নিয়োগেও অনিয়মের অভিযোগ। বিদ্যুৎ খাতের অন্যতম বড় কোম্পানি ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) নিজস্ব নিরীক্ষায় (অডিট) এসব দুর্নীতি ধরা পড়েছে।  এ ঘটনায় বেসিকোর মূল কোম্পানি অর্থাৎ ওজোপাডিকোর পক্ষ থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি আদালতে মামলাও করা হয়েছে। 

বলার অপেক্ষা রাখে না, বস্তুত বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার ব্যবস্থার জন্মলগ্ন থেকেই ব্যবহারকারীরা নানা দুর্ভোগে জ্বলছিলেন। রিচার্জে অসুবিধা, বেশি বিল আসা, সরকারি ছুটির দিনে রিচার্জ বুথ বন্ধ থাকা, মিটার লক হয়ে যাওয়া বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার দায় চাপিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে বাড়তি অর্থ আদায় নানা ভোগান্তির অভিযোগ রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, গ্রাহক পর্যায় থেকে অনিয়ম দূর করতে গিয়ে পরিচালনা পর্যায়েই দুর্নীতির পাহাড় জমেছে।  আশার কথা,গ্রাহকদের ভোগান্তির অভিযোগ তদন্তে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।  আমাদের প্রত্যাশা, স্মার্ট প্রিপেইড মিটারের মতো পোস্টপেইড মিটারের সব ক্ষেত্রের দুর্নীতি থাকলে সেটিও তদন্ত করা হবে। এ খাতটিকে স্বচ্ছতায় আনতে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি।