ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩১

টার্গেট নির্বাচন: আট মেগা প্রকল্পে জোর দিচ্ছে সরকার

সরোবর প্রতিবেদক  

 প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩, ০৭:৩৭ বিকাল  

অসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত আট মেগা প্রকল্পে জোর দিচ্ছে সরকার। এ আটটি মেগা প্রকল্প হলো- পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ এবং দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের নিকটে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প।

এরই মধ্যে বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে ফাস্ট ট্র্যাকভুক্তে এ আটটি মেগা প্রকল্প। চলতি বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত এসব প্রকল্পের আওতায় ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৭ হাজার ৯২৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পগুলোর গড় ভৌত অগ্রগতি ৮৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৭২ দশমিক ৩০ শতাংশ। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ছয় হাজার ২৬৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা।

এসব মেগা প্রকল্পের বিষয়ে আগস্ট পর্যন্ত তৈরি করা বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) অগ্রগতি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। যদিও ইতোমধ্যে পদ্মা সেতু এবং মেট্রোরেল (আংশিক) উদ্বোধন হয়েছে। পুরো প্রকল্পও শেষের পথে।

প্রকল্পগুলোর বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ এগিয়ে চলছে পুরোদমে। অর্থায়ন নিশ্চিত করতে চলতি অর্থবছরে চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ নিশ্চিত করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজ শেষের পথে। আমরা আশা করছি জনগণ আমাদের কাজে মূল্যায়ন করবে। তবে উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে অগ্রগতি অব্যাহত থাকে।

মেট্রোরেল: বহুল প্রত্যাশিত মেট্রোরেল প্রকল্পের উত্তরা-আগারগাঁও অংশ গত বছর ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন হয়েছে। ২৯ ডিসেম্বর থেকে নির্ধারিত সময়ে জনগণের চলাচলের জন্য খুলে গেছে এ অংশটি। কিন্তু পুরো প্রকল্প শেষ হতে অপেক্ষা করতে হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, আগামী ২০ অক্টোবর মতিঝিল পর্যন্ত খুলে দেওয়া হবে। শুরু থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ২২ হাজার ৮১৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৬৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। এছাড়া ভৌত অগ্রগতি ৯০ দশমিক ১২ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সংশোধিত ব্যয়সহ মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। ২০১২ সালের জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু দ্বিতীয় সংশোধনীতে ব্যয় বাড়ার সঙ্গে মেয়াদ বেড়েছে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এটির মূল ব্যয় ছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত বাড়তি অংশ যোগ হওয়ায় এই ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধি পেয়েছে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প: দেশের সবচেয়ে বেশি ব্যয়ের প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। শুরু থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৬৫ হাজার ৮৩০ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫৮ দশমিক ২১ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ এ বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের উৎপাদন লক্ষ্য ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারিতে সঞ্চালন লাইনের কাজ দেরি হওয়ায় কেন্দ্রটির উৎপাদন পিছিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ রূপপুর প্রকল্পটি উৎপাদনে আসতে পারে। সেই সঙ্গে বর্তমান ঋণ পরিশোধের জটিলতাও এখনো পুরোপুরি কাটেনি।

পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ: পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে গত আগস্ট পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৯ হাজার ৯৩৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৭৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। এছাড়া ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৮২ শতাংশ। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে মোট ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে।

মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত কার্যক্রম: মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম (১২টি প্রকল্পযুক্ত) প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। গত আগস্ট পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩৩ হাজার ৭৭৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি ৬৫ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং সার্বিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৭৮ শতাংশে।

রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প: এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। গত আগস্ট পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৪ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা। আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯০ দশমিক ২০ শতাংশ। ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৯৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর: এ প্রকল্পটি ৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। গত আগস্ট পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে তিন হাজার ৭৫২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯০ দশমিক ১২ শতাংশে।

দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেলপথ নির্মাণ: দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। গত আগস্ট পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ৮৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৪৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এছাড়া ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৮৮ শতাংশ।

পদ্মা সেতু: গত বছরের ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয় পদ্মা সেতু। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হয়নি। আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ২৯ হাজার ২৯৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ। পুরো প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৯৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। এটি বাস্তবায়নে মোট ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে। পরে কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এরই মধ্যে সম্প্রতি ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ১ হাজার ১১৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।

দৈনিক সরোবর/এএস