ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩১

শিক্ষা অফিসার পদে আছেন প্রশ্নফাঁসে জড়িত সোহেলের বোন

কুমিল্লা প্রতিনিধি

 প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২৪, ০৪:২৮ দুপুর  

সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত কুমিল্লার প্রতারক সোহেলকে নিয়ে এলাকায় বইছে সমালোচনার ঝড়। এদিকে এই প্রতারক হঠাৎ বিপুল সম্পদের মালিক হলে তার পরিবারের সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। গ্রামের লোকজনের ওপর অত্যাচার, নির্যাতনও করেছেন। অপরদিকে সোহেলের ফাঁস করা প্রশ্নে বোন শিক্ষা অফিসার, ভাবি হয়েছেন সহকারী শিক্ষক। জালজালিয়াতির হোতা সোহেলের মুখোশ উন্মোচনের পর তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন এলাকাবাসী। তার সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন তারা।

জানা যায়, সরকারি কর্ম কমিশনের বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত অভিযোগে পিএসসির দুজন উপপরিচালক, দুজন সহকারী পরিচালকসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এর মধ্যে আবু সোলায়মান মো. সোহেল ওই চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য। সোহেল (৩৬) কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার বানাশুয়া গ্রামের আব্দুল ওহাবের ছেলে। 

গ্রামের লোকজন জানায়, আবদুল ওহাবের ৩ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে সোহেল সবার ছোট। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন বলে পরিবার জানায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের ছবিও তার ফেসবুকে রয়েছে। এদিকে সোহেলের ফাঁস করা প্রশ্নেই তার বোন হালিমা বেগম সহকারী শিক্ষা অফিসার এবং ভাবি নাজনীন সুলতানা পলি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হয়েছেন বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। বোন হালিমা বেগম বর্তমানে জেলার মুরাদনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে কর্মরত। আর ভাবি পলি বুড়িচং উপজেলার মহিষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। তবে বোন ও ভাবি দুজনেই ফাঁস করা প্রশ্নে নিয়োগ লাভের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। এদিকে হালিমা বেগম ও নাজনিন সুলতানা পলির নিয়োগের বিষয়গুলো নিয়ে তদন্তে নেমেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ওই দুজনের নিয়োগের বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছেন বলে জানান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শফিউল আলম।

বানাশুয়া গ্রামের আলামিন হোসেন, মো. মিলন, নাজিম হোসেনসহ বেশ কয়েক বাসিন্দা বলেন, আমেরিকায় লটারি জিতে সোহেল শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে প্রচার করা হয়। সেই টাকায় তিনি এখন ঢাকার মিরপুরের বড় ব্যবসায়ী। মাঝেমধ্যে এলাকায় এলেও কারও সঙ্গে মিশতেন না। তার রহস্যজনক চলাফেরা মানুষের মাঝে সব সময় কৌতূহল সৃষ্টি করত। সোহেলের এক ভাইয়ের কুমিল্লা নগরীর ছাতিপট্টিতে স্বর্ণের দোকান আছে। আরেক ভাইয়ের বুড়িচং উপজেলা সদরে স্বর্ণের দোকান রয়েছে। স্বর্ণ ব্যবসার অন্তরালে সোহেলের দুর্নীতির শত শত কোটি টাকা লুকানো রয়েছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। এ দুই দোকানে সোহেলের বিশাল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ আছে। এলাকায় প্রায় দুইশ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রয় করেছেন। সোহেলের পরিবারকে ‘মাইনাস’ করে কেউ ওই এলাকায় জমিজমা কিনতে পারত না। তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হতো। এলাকার বহু মানুষকে সোহেলের পরিবার অত্যাচার ও জুলুম-নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

দৈনিক সরোবর/এএস