ঢাকা, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১

অপুষ্টি ও দরিদ্রতায় যেন নতজানু চা শ্রমিকদের পরিবার

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

 প্রকাশিত: মে ০১, ২০২৪, ০২:২১ দুপুর  

তারা দলবেঁধে পাহাড়ের পর পাহাড়ের গাঁ বেয়ে উচুঁনিচু টিলায় কাজ করেন। কিন্তু এর বিনিময়ে পর্যাপ্ত খাদ্য, চিকিৎসাসহ মৌলিক অধিকারও ঠিকমতো পান না সেই চা শিল্পের শ্রমিকেরা। যেখানে দৈনিক ১৭০ টাকা মজুরিতে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে চা শ্রমিকরা বিশাল বাগানের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে চায়ের কুঁড়ি তোলেন। অপুষ্টি ও দরিদ্রতায় যেন নতজানু এক একটি চা শ্রমিকের পরিবার।

প্রতিবছর মে দিবস আসে আবার চলেও যায়। কিন্তু চা শ্রমিকদের নিজস্ব ভূমি থেকে শুরু করে শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ মৌলিক অধিকার বাস্তবায়িত হয়নি আজও। একরকম দাসত্বের মতো জীবন যাপনে শুধু আক্ষেপেই উঠে আসে চা শ্রমিকদের কণ্ঠে।

চা শ্রমিক ইউনিয়নের সূত্রমতে, সারা দেশে ১৬৭টি চা বাগান আছে। যেখানে প্রায় এক লাখ চা শ্রমিক কাজ করছেন। এই শ্রমিকদের মধ্যে নারী শ্রমিকের সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশি। মৌলভীবাজার জেলাতেই আছে ৯২টি চা বাগান।

চা শ্রমিকদের অভিযোগ, মে দিবস এলেই দাবি আদায়ের জন্য সভা সমাবেশ করা হয়, কিন্তু দাবি আর পূরণ হয় না। দাবিগুলো থেকে যায় অপূর্ণ।

দু’টি পাতা একটি কুঁড়ির জেলা মৌলভীবাজারের বিভিন্ন চা বাগানের একাধিক চা শ্রমিকরা জানান, চা শিল্পের উন্নতি হলেও পাল্টাচ্ছে না তাদের জীবনযাত্রা। তপ্ত রোদে পুড়ে কিংবা মুষলধারে বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করার পর একজন চা শ্রমিকের সারাদিনে আয় হয় ১৭০ টাকা। নেই নিজস্ব জাতিগত পরিচয়, লেখাপড়ার সুযোগ নেই, নেই স্যানিটেশনও, রয়েছে চিকিৎসার অভাব।

ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ ও অসুখ হলে চিকিৎসা করাতে হয় সেই মজুরির টাকা দিয়ে। প্রায়ই ধারদেনা করে সংসার চালাতে হয়।

চা বাগানগুলোতে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবার মানের অবস্থা খুবই নাজুক জানিয়ে চা শ্রমিক সন্তান কাজল হাজরা বলেন, কর্মক্ষেত্রে পয়ঃনিষ্কাশন ও সুপেয় পানির অভাবে তারা অনেক কঠিন রোগের শিকার হন। এখানে স্বাস্থ্যসেবার নামে চলে রসিকতা। অনেক প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে চা শ্রমিকদের কাজ করতে হয়।

চা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করছেন এস এম শুভ। তিনি বলেন, বর্তমানে চা বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল। বিশ্বের প্রায় ২৫টি দেশে চা রফতানি হয় বাংলাদেশ থেকে। পাঁচ লক্ষাধিক জনগোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ শ্রমে সচল হয় দেশের অর্থনীতি। চা শ্রমিকদের ৬৪ শতাংশই নারী শ্রমিক। তাদের অবস্থা সত্যিই করুণ। তারা যে মজুরি পান এতে তাদের পুষ্টির নূন্যতম চাহিদাও পূরণ হয় না। কর্মক্ষেত্রে বিশ্রাম, পানীয় জল ও স্বাস্থ্যকর সেনিটেশনের অভাবে শ্রমিকরা আছেন চূড়ান্ত স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি পংকজ কন্দ বলেন, চা শ্রমিকের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে একাধিক সময় আমরা আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু তারপরও চা শ্রমিকরা উপেক্ষিত। বর্তমান বাজারমূল্যের সঙ্গে একজন শ্রমিকের মজুরি হিসাব করলে কোনোভাবেই মেলে না। আমরা চাই বাজারমূল্যের সঙ্গে চা শ্রমিকের মজুরি সমন্বয় করা হোক।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের প্রধান উপদেষ্টা রাম ভজন কৈরি বলেন, মে দিবস শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের দিবস, সেটা চা শ্রমিকরা এখনও বুঝতে পারেনি বলেই তারা অধিকারবঞ্চিত।

বাংলাদেশ চা সংসদ সিলেট অঞ্চলের সভাপতি জি এম শিবলী জানান, চা শ্রমিকদের জীবন মান আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে, লেখাপড়া চাকরিতেও অনেকে এগিয়ে গিয়েছে। তাদের আরো উন্নয়নের জন্য কাজ চলছে।