চলতি মাসেই ঘোষণা
বাড়ছে ডিজেলের দাম
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৩, ০৮:৫৭ রাত

আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে দেশে জ্বালানি তেলের দাম আবার সমন্বয় করতে যাচ্ছে সরকার। চলতি সেপ্টেম্বর মাসেই এ ঘোষণা আসছে। ফলে শুরুতেই ডিজেলের দাম বাড়তে যাচ্ছে। তবে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত অকটেনের দাম কিছুটা কমানো হতে পারে। ইতোমধ্যে ‘ডায়নামিক পদ্ধতিতে’ তেলের মূল্যবৃদ্ধির জন্য একটি রূপরেখাও তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজার দরের সঙ্গে সমন্বয় করে এলপিজির দাম নির্ধারণ করছে বিইআরসি। তবে সে মূল্যহারের প্রতিফলন বাজারে নেই। একইভাবে প্রতি মাসে তেলের দাম নির্ধারণ করতে চায় মন্ত্রণালয়।
এখন মন্ত্রণালয় না বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) মূল্যহার সমন্বয় ও ঘোষণা করবে এ নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। এটি ঠিক হলেই নতুনভাবে তেলের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা আসবে বলে জানিয়েছেন জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ব্যবহৃত মোট জ্বালানি তেলের ৭৩ দশমিক ১১ শতাংশ ডিজেল, পেট্রোল ৫ দশমিক ৮৬ এবং অকটেন ৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ। বর্তমানে দেশে বছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে ৭০ থেকে ৭২ লাখ টন। এর মধ্যে ডিজেলের চাহিদা ৪৮ থেকে ৪৯ লাখ টন; যার ৮০ শতাংশ সরকার আমদানি করে। বর্তমানে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি হচ্ছে। আর পরিশোধিত তেল আমদানি হয় সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আরব আমিরাত, কুয়েত, থাইল্যান্ড ও ভারত থেকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর সাশ্রয়ী দামে ভারত থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল আমদানি হচ্ছে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে ডিজেল আমদানি নিয়ে আলোচনা চলছে। বেসরকারি খাতের বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি তেল ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল আমদানি করা হয়। এই তেল নিজ বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়া অন্য কোথাও ব্যবহারের অনুমোদন নেই।
জানা গেছে, চলতি মাসে বিশ্ববাজারের সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করতে দুটি পণ্যে দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ডিজেলের দাম বর্তমানের চেয়ে বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন প্রতি লিটার ডিজেল বিক্রি হচ্ছে ১০৯ টাকায়। সমন্বয় করে লিটারপ্রতি দাম রাখা হবে ১১০ টাকা। অন্যদিকে, অপেক্ষাকৃত অনেক কম ব্যবহার হয় অকটেন। বর্তমানে ভোক্তা পর্যায়ে অকটেন লিটারপ্রতি ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অকেটেনের দাম কমিয়ে লিটারপ্রতি ১০০ টাকা রাখা হচ্ছে। অকটেনের চাহিদার পুরোটাই দেশে উৎপাদন হয়।
আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তেলের মূল্য সমন্বয়ের কোনো এখতিয়ার বিপিসির নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দেশে জ্বালানি তেলের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক বিপিসি। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি জ্বালানি তেল নিয়ে ব্যবসা করে। কোনো ব্যবসায়ী তার পণ্যের দাম নির্ধারণ করতে পারে না। বিপিসির তেলের মূল্য নিয়ে আগে থেকেই অস্বচ্ছতা রয়েছে। তারা আরও বলেন, বিশ্ববাজারের সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের দায়িত্ব বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) দেয়া উচিত। কারণ বিইআরসি এখন প্রতি মাসেই বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে এলপিজির দাম নির্ধারণ করছে।
ডিজেলের দাম ২ টাকা বৃদ্ধিতে প্রতি লিটার রাখা হবে ১১০ টাকা এবং অকেটেনের দাম ৩০ কমিয়ে লিটারপ্রতি ১০০ টাকা রাখা হচ্ছে।
জ্বালানি বিভাগ ও বিপিসির সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, দেশে জ্বালানি তেলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় ডিজেল। চাহিদা পূরণে এই ডিজেলের ৮০ শতাংশের বেশি আমদানি করতে হয়। চলতি মাসেই বিশ্ববাজারের সঙ্গে দেশের জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ে ‘স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি’ বাস্তবায়ন করা হবে। এজন্য দেশে সর্বাধিক ব্যবহৃত জ্বালানি পণ্যগুলোর (তেল) নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বিপিসির দাম নির্ধারণের প্রক্রিয়ায় বাড়ছে ডিজেলের দাম, কমছে অকটেনের মূল্য।
এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, চলতি মাসে নতুন মূল্য সমন্বয় কার্যকরের নির্দেশনা দিয়েছি। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। ডিজেলে লিটারপ্রতি ১৩ থেকে ১৪ টাকা লোকসান হওয়ায় আমাদের ভতুর্কি দিতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে আমাদের ভতুর্কিও বাড়বে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক, জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, এতদিন নির্বাহী আদেশে তেলের দাম নির্ধারণ হতো। এতে আমরা অন্ধকারে ছিলাম। যতটুকু জেনেছি, গত পাঁচ বছরে বিপিসি ৪৬ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লে দেশে বাড়ে। কিন্তু কমলে কমে না। এটা সর্ম্পূণ অনৈতিক। তিনি বলেন, এখন একটা ফর্মুলা তৈরি করা হয়েছে। ফমুর্লা অনুযায়ী চললে ভালো। তবে আমাদের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। তাই এই কাজটি বিইআরসির হাতে দিলে সবচেয়ে ভালো হয়। দাম নির্ধারণে স্বচ্ছতা আসবে। কারণ এখন প্রতি মাসে এলপিজির দাম নির্ধারণ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
এ প্রসঙ্গে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহসভাপতি ও জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, বিপিসি নিজে ব্যবসায়ী। তার পণ্যের দাম সে নির্ধারণ করতে পারে না। তেল বিক্রি করে বিপিসির কত লাভ হয়, কত টাকায় তেল কেনে, জাহাজ ভাড়া কত, এসব বিষয়ে আমাদের কোনো ধারণা নেই। এমনকি এখন পর্যন্ত এসবের মীমাংসা হয়নি। এ কারণে আমরা মনে করি, কাজটি বিইআরসিরই করা উচিত। তাহলে জ্বালানি তেল নিয়ে সরকার ও বিপিসি জবাবদিহির মধ্যে আসবে। তিনি বলেন, অন্যান্য পণ্যের মতো জ্বালানি তেলের দাম নিয়েও গণশুনানি হতে হবে। বিইআরসির মাধ্যমে করা না হলে বিপিসির লুটপাটের সুযোগ থেকে যাবে।
দৈনিক সরোবর/কেএমএএ