ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৯ ভাদ্র ১৪৩১

আমিরাতে সাজাপ্রাপ্তরা দেশে ফিরবেন এক সপ্তাহেই

সরোবর ডেস্ক

 প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২৪, ০৮:৫৫ রাত  

সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ৫৭ জন বাংলাদেশির সবাইকে এক সপ্তাহের মধ্যে মুক্তি দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নিয়োগ করা আইনজীবী ওলোরা আফরিন। কারাগার থেকে তাদের মুক্তি দিতে দেশটির আদালত ইতোমধ্যেই আদেশ জারি করেছে বলেও তিনি জানান।

‘আমরা আগেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছিলাম। আজকে কোর্টে একই আদেশে তাদের সবাইকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাজেই আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই উনাদের বের করে দেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে আমরা আশা করছি। হয়তো দু-একদিন কম-বেশি হতে পারে-মঙ্গলবার বিকেলে বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন আফরিন।

এর আগে, মঙ্গলবার সকালে কারাগারে বন্দী ওই ৫৭ জন বাংলাদেশির সবার সাজা মওকুফ করে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহামেদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। বিষয়টি দুপুরে সাংবাদিকদের জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফেডারেল আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাজাপ্রাপ্ত ৫৭ জন বাংলাদেশিকে আজ দেশটির প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ক্ষমা করেছেন’- সাংবাদিকদের বলেন ইউনূস।

অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণ করায় গত ২৮ অগাস্ট প্রধান উপদেষ্টাকে টেলিফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট নাহিয়ান। কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশিদের মুক্তি দিতে তখন অনুরোধ জানিয়েছিলেন মি ইউনূস। এক সপ্তাহের মাথায় সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা আসায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকারের প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। এছাড়া অন্য দেশে গিয়ে বাংলাদেশিরা যেন আইন ভঙ্গ না করে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে, ক্ষমা পেলেও ওই বাংলাদেশিদের কেউই আর সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকতে পারবেন না বলে দুবাইভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক খালিজ টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

সে কারণেই যত দ্রুত সম্ভব তাদেরকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে ইউএই সরকার। ১৫ জনের তথ্য নেই: সংযুক্ত আরব আমিরাতের কারাগারে বন্দী ৫৭ জন বাংলাদেশির সবার সব তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন আইনজীবী ওলোরা আফরিন। ‘আবুধাবি, দুবাই, শারজাহসহ বিভিন্ন শহর থেকে আমরা এখন পর্যন্ত দণ্ডপ্রাপ্তদের ৪২ জনের তালিকা পেয়েছি’-বিবিসি বাংলাকে বলেন আফরিন। তথ্যগুলো ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ ও আরব আমিরাতের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এছাড়া বাকি ১৫ জনের নাম, ঠিকানা, কর্মস্থল ও পরিবার-পরিজন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে বলে জানানো হয়েছে। ‘তবে এখন যেহেতু মুক্তি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, সেজন্য সবাইকে একসঙ্গে বের করা যাবে, সমস্যা হবে না’-বলেন মিজ আফরিন।

উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে কোটা আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ কমপক্ষে ২৫ জন নিহত হন।

এ ঘটনার প্রতিবাদ ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ১৯ জুলাই বিক্ষোভ মিছিল বের করেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে কাজ করতে যাওয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

পরে তাদের মধ্যে ৫৭ জনকে আটক করে দেশটির পুলিশ। দাঙ্গা উস্কে দেওয়ার অভিযোগে পরবর্তীতে তাদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয় সংযুক্ত আরব আমিরাতের আদালত। তখন তাদের মুক্তির ব্যাপারে আবুধাবিতে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানা যায়নি। কিন্তু ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ওই প্রবাসী বাংলাদেশিদের মুক্ত করতে উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। আবুধাবির ফেডারেল কোর্ট অব আপিলের মাধ্যমে তাদেরকে মুক্ত করতে সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসকে বিনা খরচে আইনি সহায়তা প্রদানের নির্দেশা দেওয়া হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ১২ অগাস্ট আইনজীবী ওলোরা আফরিন নিয়োগ দেয় দূতাবাস। এ ঘটনার তিন সপ্তাহের মাথায় দণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশিদের দণ্ড মওকুফের খবর আসলো। ক্ষমাপ্রাপ্ত ৫৭ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিতে ইতোমধ্যেই আদেশ জারি করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকার। দুবাইভিত্তিক সংবাদমাধ্যম খালিজ টাইমস তাদের খবরে বলছে, প্রেসিডেন্ট মি. নাহিয়ানের পক্ষ থেকে দণ্ড মওকুফের ঘোষণা আসার পর ওই বাংলাদেশি নাগরিকদের দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করার লক্ষ্যে আদেশ জারি করেছেন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল চ্যান্সেলর ড. হামাদ আল শামসি।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসকারী সবাইকে দেশটির আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বানও জানিয়েছেন শামসি। নিজেদের মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রেও যেন রাষ্ট্রের আইন ভঙ্গ না হয় এবং জনগণের ক্ষতি না হয়, সেবিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ইউএই'র অ্যাটর্নি জেনারেল।

এদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইনের প্রতি বাংলাদেশের নাগরিকদের পূর্ণ সম্মান রয়েছে বলে প্রেসিডেন্ট নাহিয়ানকে পাঠানো এক চিঠিতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস। তারপরও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ যেকোনো দেশে নাগরিকদের পাঠানো আগে তাদেরকে সেদেশের স্থানীয় আইন সম্পর্কে জানানো হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন তিনি। সূত্র: বিবিসি নিউজ বাংলা

দৈনিক সরোবর/এএস