ঢাকা, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১

ধ্বংসস্তূপে পরিণত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

সরোবর প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: জুলাই ২৫, ২০২৪, ০৪:৪২ দুপুর  

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (১৯ জুলাই) দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে অধিদপ্তরের সামনে ২৩টি গাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এছাড়া আরো ২৮টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। হামলার ছয়দিন পরেও এ ঘটনার ছাপ বয়ে বেড়াচ্ছে স্বাস্থ্যের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটি।

বৃহস্পতিবার সরজমিনে মহাখালী কাঁচাবাজারস্থ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পুরাতন ভবন ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মূল গেইট পার হতেই দেখা যায় সারি সারি পোড়া গাড়ি পড়ে আছে। অধিদপ্তরের শহীদ ডা. মিলন ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় প্রত্যেকটি গাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এর পাশেই অধিদপ্তর ভবনের মূল ফটকের সামনে ও আশেপাশে থাকা সব কয়টি গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে তারা। রক্ষা পায়নি প্রবেশপথে থাকা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের গাড়িও। পুড়ে ছাই হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধানের গাড়ি। তার পাশেই থাকা স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. টিটো মিয়ার গাড়ির কাঁচ ভাঙচুর করা হয়েছে। গাড়ির পেছনের দিকের কাঁচ ভেঙ্গে আগুন দেওয়ার চেষ্টা চালানোর চিত্র দেখা যায়।

এদিকে, ডা. মিলন ভবনের সমানের গাড়িতে আগুনের সময় ভবনটিতে অবস্থিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) বিভাগের দেয়াল পুড়ে গেছে। তবে হামলার ঘটনায় এমআইএস শাখার সার্ভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
 
পুড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি অধিদপ্তরের সামনে থাকা প্রায় সবকটি গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এছাড়াও ভবনের প্রধান ফটক ও ভবনের গ্লাসসহ ভাঙচুর করা হয় বিভিন্ন অফিসের ২৮টি গাড়ি। তবে সরজমিনে ১৯টি গাড়ির পুড়া অংশ ও অসংখ্য গাড়ি ভাংচুরের চিত্র দেখা যায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে হামলা ও গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন ভবনের নিরাপত্তাকর্মী ও আশেপাশের দোকানিরা। অধিদপ্তরের পাশের এক চা দোকানি জানান, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে টানা কয়েকদিন থমথমে পরিস্থিতি ছিল মহাখালী এলাকায়। হামলার দিনেও দফায়দফায় সংঘর্ষ হচ্ছিল। পুলিশের টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেডের ফলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আশেপাশের এলাকা। এসময় একদল দুর্বৃত্ত অধিদপ্তরের ফটক ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে গাড়িগুলোতে আগুন দেয়।

হামলাকারীদের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনার সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হচ্ছিল। ফলে যারা আগুন লাগিয়েছে তারা শিক্ষার্থী নাকি অন্য কোনো পক্ষ ছিল তা বলা কঠিন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক ব্যবসায়ী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় এলাকায় দোকান খোলার মতো পরিস্থিতি ছিল না। পাশেই একটি ভবনে আমার বাসা। সেখানের জানালা দিয়ে দেখেছি। একদল ছেলে ভেতরে প্রবেশ করে গাড়িগুলোতে আগুন দিয়েছে। প্রথমে তারা গাড়িগুলোতে কিছু একটা ছিটিয়ে দিয়েছে। এরপর রুমাল বা কাপড় জাতীয় কিছুতে আগুন জ্বালিয়ে গাড়ির ওপর ছেড়ে দিয়েছে। মুহূর্তের মধ্যেই সবগুলো গাড়িতে আগুন ধরে যায়। তবে অধিদফতরের ভবনে আগুন দেয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নিরাপত্তাকর্মী জানান, শুক্রবার জুমার নামাজের পর কিছু কর্মচারী বন্ধের দিনও এমআইএস বিভাগের দায়িত্বরত ছিলেন। সার্ভার থাকার কারণে ২৪ ঘণ্টা কোনো না কোনো কর্মচারী এখানে দায়িত্ব পালন করেন। পুলিশের সঙ্গে আগে থেকেই আন্দোলনকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছিল। এর মধ্যে হঠাৎ করে কয়েকশ আন্দোলনকারী স্বাস্থ্য অধিদফতরের গেটের কাছে ছুটে আসে। এখানে আওয়ামী লীগের কর্মী আছে বলে তারা চিৎকার করতে থাকে। গেট বন্ধ থাকলেও সবাই মিলে ধাক্কা দিয়ে গেট ভেঙে ফেলে।

অধিদপ্তরের হামলার দুইদিন পর রবিবার (২১ জুলাই) স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন ক্ষয়ক্ষতি দেখতে ঘটনাস্থলে যান। তিনি জানান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পুরনো ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় শত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

পরে বুধবার (২৪ জুলাই) বিকেলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গেছে। ক্ষতি নিরূপণে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এই ক্ষতির পরিমাণ শত কোটির কাছাকাছি হবে। স্বাস্থ্য খাতের ওপরে এটি একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ‘এমআইএস’ অর্থাৎ যেখানে সারা দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা কন্ট্রোল করা হয়, সেখানেও আগুন দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাশাপাশি দুর্বৃত্তরা মহাখালীর ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতালেও হামলা চালিয়েছে। এটা ন্যক্কারজনক ঘটনা। এ সব ঘটনায় যারা দোষী, তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া উচিত।

হামলার ঘটনায় মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তদন্ত কমিটির সদস্যরা বুধবার (২৪ জুলাই) সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। হামলার ঘটনায় প্রায় শতকোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন তারা।

এদিকে, বৃহস্পতিবার সরজমিনকালে গণপূর্ত অধিদফতরের পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টের (পিডাব্লিউডি) দুইজন কর্মকর্তাকে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য লিপিবদ্ধ করতে দেখা যায়।

দৈনিক সরোবর/এএস