ঢাকা, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১

বিবিসি বাংলার রিপোর্টে কোটা আন্দোলন ও সংশ্লিষ্ট সংবাদ

সরোবর  ডেস্ক

 প্রকাশিত: জুলাই ১৭, ২০২৪, ০৬:০৭ বিকাল  

কোটা বিরোধী আন্দোলন ঘিরে মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় ছয় জনের মৃত্যুর ঘটনায় বেশ থমথমে পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। হলগুলোতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কক্ষে ভাঙচুর চালিয়ে তাদের বের করে দেয়া হয়েছে হল থেকে। এদিকে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে জরুরি সিন্ডিকেট সভা। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ আসতে থাকে।

সার সংক্ষেপ:
•ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থমথমে পরিস্থিতি। বিভিন্ন হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কক্ষে ভাঙচুর করেছে শিক্ষার্থীরা। অনেক হল থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বের করে দেয়া হয়েছে।

•দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে জরুরি সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত।

•সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। বিকেল তিনটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ। সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

•ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের জরুরি সভা শেষ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ।

•রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করছে। হল ছেড়েছে অনেক শিক্ষার্থী। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও হল ছেড়েছে অনেক শিক্ষার্থী।
সরাসরি কভারেজ

চট্টগ্রামে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা: চলমান আন্দোলনক ঘিরে মঙ্গলবার বিকেলে সংঘর্ষ এবং গোলাগুলির ঘটনায় মোট চারটি মামলা হয়েছে। তিনটি মামলা পাঁচলাইশ থানায় এবং একটি মামলা খুলশী থানায় করা হয়। বুধবারই এসব মামলা করা হয়। এখন পর্যন্ত ৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাঁচলাইশ থানার তিন মামলার মধ্যে দুইটির বাদী পুলিশ। হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা দুইটি করা হয়। এসব মামলায় অজ্ঞাতনামা ছয় হাজার থেকে সাত হাজার মানুষকে আসামি করা হয়েছে। আরেকটি মামলা করেন আহত এক ব্যক্তির মা। এ মামলায় এক থেকে দেড়শ মানুষকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এছাড়া খুলশী থানায় এমইএস কলেজের শিক্ষার্থী শাহেদ আলী বাদী হয়ে মামলা করেন। এতে ৫০০-৬০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মারামারির ঘটনায় এ মামলাটি করা হয়।

রাজু ভাস্কর্যের সামনে যেতে পুলিশের বাধা, সাউন্ড গ্রেনেড-টিয়ারসেল নিক্ষেপ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে কোটা সংস্কারের পক্ষে শিক্ষার্থীরা গায়েবানা জানাজা পড়িয়েছে। এরপর টিএসসির দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে তারা যেতে চাইলে বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারসেল ছুঁড়েছে পুলিশ। টিএসসির পুরো এলাকায় মোতায়েন রয়েছে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য।

ঘটনাস্থল থেকে বিবিসির সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, রাজু ভাস্কর্যের সামনে পুলিশ অবস্থান নিয়ে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার সেল ছুড়ছে। অন্যদিকে মল চত্বরের দিকে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল ছুড়ছে। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা অনেকটা রণক্ষেত্র পরিণত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বাধা দেয়ার সময় ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক ও আইন বিভাগের ছাত্র আখতারুজ্জামানকে আটক করেছে পুলিশ। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গতকাল আটক করা দুই শিক্ষার্থীকে শাহবাগ থানা থেকে ছাড়িয়ে এনেছেন নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষকরা। রাজু ভাস্কর্যের সামনে যেতে পুলিশের বাধা, সাউন্ড গ্রেনেড-টিয়ারসেল নিক্ষেপ

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাঈদের জানাজা: রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে পীরগঞ্জে তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।
বাড়ির পাশের জাফরপাড়া কামিল মাদ্রাসা মাঠে সকাল সোয়া নয়টায় প্রথম জানাজা হয়। এরপর প্রায় সাড়ে নয়টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো কিছু শিক্ষক – শিক্ষার্থী এলে দ্বিতীয় জানাজা হয়। পরে সোয়া দশটার দিকে সাঈদের লাশ দাফন করা হয়। এছাড়া বেগম রোকেয়া বিশ্ববদ্যিালয়ে গায়েবানা জানাজা পড়ানো হয় দুপুরে।
 
ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমের মন্তব্য: দেশব্যাপী চলমান কোটা সংস্কারের আন্দোলনে নিয়ে মন্তব্য করেছেন ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, সে কথা উল্লেখ করে রহিম ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেইজে লেখেন, আমি আমার ভাই-বোনদের উপর আর কোনো সহিংসতা দেখতে চাই না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক গতকাল শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে গিয়ে আহত হন।

সে বিষয়টিকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা মেনে নেয়া কঠিন কোনও ছাত্রের জন্য যে তার শিক্ষক হেনেস্তা হয়েছেন। যা খুবই নিন্দনীয় বলে আমি বিশ্বাস করি। সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে তিনি এই সমস্যা সমাধানের জন্য শান্তিপূর্ণ রাস্তা বের করার অনুরোধ করেন এবং অবিলম্বে ‘রক্তপাত” বন্ধ করার আহ্বান জানান। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ মোস্তফা সরয়ার ফারুকী’র: শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

বুধবার দুপুরে তিনি তার ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেইজে লেখেন, আপনারা যারা ভাবছেন আন্দোলনটা স্রেফ একটা চাকরির জন্য, তারা বোকার স্বর্গে আছেন। আপনারা এর (আন্দোলনের) সবগুলা শ্লোগান খেয়াল করেন। দেখবেন, এই আন্দোলন নাগরিকের সম-মর্যাদার জন্য। এই আন্দোলন নিজের দেশে তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসাবে না বাঁচার জন্য। এই আন্দোলন রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা আছেন তাদের মনে করিয়ে দেয়ার জন্য যে, দেশের মালিক তারা না।

তিনি আরো বলেন, দেশের আসল মালিক জনগণ এবং সেই জনগণকে রাষ্ট্র যে পাত্তা দেয় না, এই আন্দোলন সেটার বিরুদ্ধেও একটা বার্তা। রাষ্ট্র জনগণকে কেনও পাত্তা দেয় না, এই আন্দোলনকারীরা সেটাও বোঝে। যে কারণে ভোটের বিষয়টাও শ্লোগান আকারে শুনেছি।

তিনি বলেন, পাবলিক সারভেন্ট শব্দটা বেশ ভালো। নির্বাচিত (!) প্রতিনিধি বা যে কোনও সরকারি বেতনভুক্ত ব্যাক্তিকে এই শব্দেই ডাকা উচিৎ সব সময়। এই আন্দোলন সেই পাবলিক সারভেন্টদের মনে করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে, আপনি আমার কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য। 

‘ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রস্তুত হয়ে যান‘: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমাদের অস্তিত্বের প্রতি হামলা এসেছে, হুমকি এসেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা আমাদের করতেই হবে। কাজেই আপনারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রস্তুত হয়ে যান।

বুধবার সকালে ঢাকায় আওয়ামী লীগের একটি মতবিনিময় সভায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারন করি, লালন করি, বিশ্বাস করি সেই চেতনায় বিশ্বাসীরা, আমরা চুপ করে বসে থাকতে পারি না। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা আমাদের করতেই হবে। কাজেই আপনারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রস্তুত হয়ে যান।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্রসঙ্গ ওবায়দুল কাদের বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কেন রাস্তাঘাট দখল করতে যাবে? সহিংসতায় জড়াবে? এই আন্দোলনের নেতৃত্ব নিঃসন্দেহে অশুভ শক্তির হাতে চলে গেছে। সেই অবস্থায় আমরা নিশ্চুপ থাকতে পারি না। আমাদের সারা দেশের প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে আমাদের নেত্রীর পক্ষ থেকে নির্দেশ দিচ্ছি, সারা দেশে সতর্ক হয়ে শক্ত অবস্থান নিয়ে এই অশুভ অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে। কোনো অপশক্তির সঙ্গে আপস করা যাবে না। ঢাবি হলগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের দখলে: বুধবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে বিবিসি সংবাদদাতা আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, হলগুলো দখলে নিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মুহসীন হল, সূর্যসেন হল, জসীমউদ্দীন হল, একাত্তর হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছেন এবং ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের বের করে দিয়েছেন।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাকে জানিয়েছেন, ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে যে ব্যবহার করেছে, তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে হলগুলোর যে সব কক্ষে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ছিলেন, সেই কক্ষগুলো ভাঙচুর করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। বহিরাগরত ব্যক্তি বা গাড়ির ঢোকার সুযোগ নেই। এমনকি শিক্ষার্থীরাও এখন ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারবেন না, শুধু বের হতে পারবেন। তবে, জরুরি ভিত্তিতে ক্যাম্পাসে ঢোকার জন্য শাহবাগ থেকে প্রবেশ করতে হবে। এছাড়া, এখন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মোবাইল ইন্টারনেটও নেই বলে জানান তিনি।

জাহাঙ্গীরনগরে হল ছাড়ার নির্দেশ, প্রতিবাদে রেজিস্ট্রার ভবনে ভাঙ্গচুর: বুধবার বেলা একটার দিকে শিক্ষার্থীদের সামনে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ও হল ছাড়ার ঘোষণা দিতে আসেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হাসান। তখন উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রার ভবন ভাঙ্গচুর করে ও ভিসিকে ভেতরে অবরুদ্ধ করে রাখে। রেজিস্ট্রার ভবনে হামলার ঘটনার পর প্রধান ফটক দিয়ে অসংখ্য পুলিশ ঢুকে এপিসি কারসহ। এখন পুলিশ আর শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি অবস্থানে বলে জানিয়েছেন একটি অনলাইন পোর্টালের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি প্রতিনিধি হাসিব তানভীর। শেয়ার করুন, জাহাঙ্গীরনগরে হল ছাড়ার নির্দেশ, প্রতিবাদে রেজিস্ট্রার ভবনে ভাঙ্গচুর

প্রাধ্যাক্ষ সহ হাউজ টিউটরদের রুমে রেখে তালা দিয়েছে জগন্নাথের ছাত্রীরা: অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা ও নারী শিক্ষার্থীদেরকে হল ছাড়ার নির্দেশ দিলেও তা মানতে রাজি হননি শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীদের বিকাল সাড়ে চারটার মাঝে হল ত্যাগ করতে বলেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের জন্য কোনও হল নেই। ওখানে মেয়েদের জন্য একটাই হল, যার নাম-বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ছাত্রীদের এই সিদ্ধান্ত জানালে ছাত্রীরা বুধবার দুপুর একটা থেকে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন এবং জানান যে তারা হল ছেড়ে কোথাও যাবেন না।

একজন শিক্ষার্থী বলেছেন, আমরা হলের ছাত্রীরা আমাদের সিদ্ধান্তে অনড়। আমরা নিরাপত্তার সাথে হলেই থাকবো। শিক্ষার্থীরা হলে নিরাপদ, এই মর্মে কর্তৃপক্ষকে লিখিতও দিতে বলেছেন তারা। ছাত্রীদের দাবীর মুখে এক পর্যায়ে তাদের হলে থাকার অনুমতি দেন কর্তৃপক্ষ। ‘তারা মৌখিকভাবে বলে গেছে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি সরবারাহ বন্ধ করবে না। কেউ চাইলে হলে থাকতে পারবে। যারা চাইবে না, তারা চলে যেতে পারবে’-যোগ করেন তিনি। তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি অনুপম মল্লিক আদিত্য জানান, প্রাধ্যাক্ষ হলে থাকার মৌখিক অনুমতি দিলেও লিখিতভাবে সম্মতি জানাতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। সেজন্য বিক্ষুব্ধ ছাত্রীরা প্রাধ্যাক্ষসহ হাউজ টিউটরদের একটি রুমে রেখে বাইরে থেকে তালা আটকে দিয়েছে। হলের প্রভোস্ট দিপীকা রানী সরকারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
 
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সরকার 'প্রতিপক্ষ' বানিয়েছে কেন? ২০১৮ সালের ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের পর থেকে গত প্রায় ছয় বছরে এতো বড় আকারের বিক্ষোভের মুখোমুখি সরকার আর হয়নি। এই আন্দোলন সরকারকে ‘বিচলিত’ করেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে।

ঢাবিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন: কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের পাশাপাশি ব্যাপক সংখ্যক বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

এছাড়া, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়া, ফরিদপুর ও কক্সবাজারেও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পুলিশের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া: পুরানা পল্টন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া। পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী সেখানে জড়ো হয়েছিলো তারা। পল্টনে এখন অনেক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিএনপি’র মিডিয়া সেল থেকে জানানো হয়েছে, দুপুর দেড়টার দিকে বায়তুল মোকাররম এলাকা থেকে ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্থকে আটক করে পুলিশ পল্টন থানায় নিয়ে গেছে।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা, শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হল সন্ধ্যা ছয়টার মাঝে হল ছাড়তে বলেছে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। সেই সাথে, অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা এসেছে। দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও একই ধরনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীকে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার মাঝে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ও অনির্দষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে বিকাল তিনটার মাঝে হল ছাড়তে বলা হয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার মাঝে, কিন্তু ছাত্রদের আজ বুধবার বিকাল তিনটার মাঝে হল ত্যাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং বুধবার দুপুর দুইটার মাঝে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে বলা হয়েছে।

এর আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়-কুষ্টিয়া, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও একই সিদ্ধান্ত দিয়েছে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেট। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা। ছাত্রদের আজ বিকাল পাঁচটা এবং ছাত্রীদের কাল সকাল দশটার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, সিটি করপোরেশন এলাকাভুক্ত সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের বিজ্ঞপ্তি নিয়ে সমালোচনা: বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সব পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত মেডিকেল, টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য কলেজসহ সকল কলেজ পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে গতকাল একটি প্রেস রিলিজ দিয়েছে। ইউজিসির এই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। প্রশ্ন ওঠেছে ইউজিসির এই বিজ্ঞপ্তি দেয়ার এখতিয়ার নিয়ে। প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী জানিয়েছেন, ইউজিসির এই বিজ্ঞপ্তি দেয়ার এখতিয়ার নেই। ১৯৭৩ সালের অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, ইউজিসি, সরকার কেউই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করতে পারবে না। বন্ধ করার এখতিয়ার শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের। এমনকি চ্যান্সেলরকেও এ ক্ষমতা দেয়া হয়নি।

বিবিসি বাংলাকে চৌধুরী বলেন, ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এই চার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করার এখতিয়ার শুধুমাত্র সিন্ডিকেটের, সরকারেরও নেই। সরকার যদি মনে করে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় ভাইস চ্যান্সেলরকে রিকোয়েস্ট করতে পারে আপনি নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেন। তখন তিনি জরুরি সিন্ডিকেট ডেকে পাস হলে বন্ধ করতে পারেন। আর যদি জটিল পরিস্থিতি থাকে তাহলে ভিসি নিজেও এক্সিকিউটিভ অর্ডারে বন্ধ করতে পারেন। তবে যদি নিজে বন্ধ করেন তাহলে চারদিনের মধ্যে সিন্ডিকেট ডেকে এটাকে রেক্টিফাই করতে হবে। যদি সিন্ডিকেটে রেক্টিফাই করতে না পারে তবে আইন ভঙ্গের অপরাধে দায়ী থাকবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ উপাচার্য জানান, এ ধরনের কোন বিজ্ঞপ্তি কখনো দেখেননি তিনি। ‘এটাতে স্বায়ত্বশাসনের ব্যত্যয় হয়েছে। এটা ক্ষমতার সঠিক ব্যবহার হয়নি। যদিও অবস্থা সিরিয়াস এটা আমি স্বীকার করি। সেটা অন্যভাবেও বলতে পারতো। ভাইস চ্যান্সলরকে অনুরোধ করতে পারতো, তিনি বন্ধ করে পরে সিন্ডিকেট ডাকতে পারতো। এ সিদ্ধান্ত স্বায়ত্বশাসনের বিপরীতে যায়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দোহাই দিয়ে এটা ইউজিসি করেছে’-বলেন চৌধুরী। এবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও বন্ধ:বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের পর এবার অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

বুধবার সকালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দেশের আটটি বিভাগীয় শহরের সিটি করপোরেশনের এলাকাভুক্ত সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো পরিচালিত লার্নিং সেন্টারগুলোর শ্রেণি কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। মন্ত্রণালয়ের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা ড. বিলকিস বেগম জানিয়েছেন যে এটা আপাতত শুধুমাত্র শহর এলাকাগুলোর জন্য, গ্রামের বিদ্যালয়গুলোর বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, তাতে উল্লেখ আছে যে শিশুদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে জরুরি সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত: সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। বিকেল তিনটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ। সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের জরুরি সভা শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানা যায়নি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করছে। হল ছেড়েছে অনেক শিক্ষার্থী। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও হল ছেড়েছে অনেক শিক্ষার্থী। বিকেল ৪টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তথ্যসূত্র: বিবিসি নিউজ বাংলা

দৈনিক সরোবর/এএস