ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৯ ভাদ্র ১৪৩১

রাগীব হাসান এর দশটি কবিতা

সরোবর ডেস্ক

 প্রকাশিত: আগস্ট ২৯, ২০২৪, ০২:৩৮ দুপুর  

দৈবের সংঘর্ষে

কে জঙ্গলে জাদু আয়না কুড়িয়ে পেল
কয়েক ফোটা বৃষ্টিকণা জমে ছিল, জোছনার আলোর সঙ্গে
জাদু আয়না ফেলে আসা দিনের কথা নিয়ে করুণ দুঃখীত,
সেই কথার শ্রোতা হয়ে থাকে ভেজা জঙ্গল।

একটি ক‚পের অবতলে পড়েছিল 
সেখান থেকে কে যে তুলে এনে হারিয়ে
ফেলে পথে পথে ঘুরছে, দ্বিপ্রহরে দাঁড়িয়ে আছে
তার জাদু আয়না খুঁজে পাবে
আর তা থেকে বের হয়ে আসবে 
সোনালি সুতোর বিন্যাস, পানশালা,
মরুজ্যোৎস্নার নৃত্যরতা যুবতী,
হারিয়ে যাওয়া হাতঘড়ি,
যা দোলা দিয়ে ছিল পূর্বরাগে রাত্রির
ধুলোমুখে ফেরা ছিল-
কম্পিত হৃদয়ে বিভাস ঝরে পড়ে ছিল
জমে ছিল ব্যথার বিদ্যুৎ-মিনার-

জাদু আয়না জঙ্গলের গুল্মলতায়
এখন কি ঘুমিয়ে রয়েছে ? 
তাকে কি সে কখনো-ই আর খুঁজে পাবে না
সুড়ঙ্গের পথ পেরিয়েও পাবেনা সন্ধান
মেঘের ভেতরে মুখভার করে থাকা
বৃষ্টি কণিকারা জ¦লে উঠবে না
জাদু আয়নার স্পর্শে দৈবের সংঘর্ষে
   

ঝরনা

বসন্তবায়ু, অগ্নিবৃষ্টি, আগুন দাউ দাউ পথ
পারি দিয়ে কে আসে, তাকে চিনে রাখো, তার
সমস্ত দেখে নাও এক পলক

রুদ্র পলাশ, তোমার হাওয়া ছুটে যায়-
পথের ধুলো উড়িয়ে,
তার মধ্যে সে দাঁড়িয়ে ছিল একলা 
ক্রোড়পত্রের আবির, ভেজা ধানক্ষেতের মতন
তার মুখ দেখে
তোমার মনে কি কথা এসেছিল,
দেখে ছিলে কি একটু বারান্দায় নিঃঝুম দাঁড়িয়ে

বসন্তবায়ু, সে আজ
দেখে গান বেজে উঠছেম উঠছে রঙিন বেলুন
তার ঝরনা ছুটে চলে
তাকে ভাসিয়ে নিয়ে

 

মুকুট

ওই তীর, ওই তটরেখা জ¦লে উঠছে সকালের আলোতে
গোলাপঝাড়, একবিন্দু চিন্তা-স্ফুলিঙ
পথে বিছিয়ে দিয়ে আমি জেগে রয়েছি
কোন সে বাতাস উড়ে এসে
আমার একবিন্দু চিন্তাফোঁটাকে ছত্রাখান করে
চিন্তা-স্ফুলিঙকে উড়িয়ে নেয় পথের ধূলিকণা থেকে
কৃষ্ণনাভির মতো রাত পড়ে রয়েছে
তাকে ফুঁড়ে আমি উড়ে যাই, দেখি রক্তচক্ষু,
ভাঙা সাঁকো, সেই ভাঙা সাঁকো পার হই আমি
আমি শোঁ শোঁ শব্দের প্রহারে
এসে দাঁড়াই দেখি জেগে উঠছে
ওই তীর, ওই তটরেখা, সকালের আলোবিন্দুতে,

আমার তীর, আমার তটরেখা-
ওগো সোনার আলো কী ভীষণ অলংকৃত করে রেখেছো
কত পদছাপ, কত হাওয়া আমি গণনা করি
আমার মাথার মুকুট, শ্রাবণের 
কালো মেঘে গড়া আমার
তরোবারি
তোমার পাশে রেখে দিলাম


ফিরে পাবে

হাওয়া ফুরিয়ে গেছে ? জমা হয় নিস্তব্দ ?
দরজার পাল্লা ওরকমই থেকে যায়-
এসে পড়ি চিকন পাতার মতো
গলির এক কোণায় মবিল পড়ে রয়েছে
ধূলা আজ জানে, সোনার দোকানের আয়নায়
সরাসরি রোদ ছুটে এসে ঝলসে দিল,
কার মুখের পাশ দিয়ে চলে গেল রোদ-

হাওয়া ঘমিয়ে রয়েছে কোথায় ?
জেলে আটক রেখে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুমিয়ে রেখেছে,
দুর্ধর্ষ হাওয়াকে লম্বা চওড়া রাগি জেলার, ফুসছে দপদপ করে
হাওয়া কি এবার এসে পড়ল, তিরবেগে ছুটে 
এসে লন্ডভন্ড করবে- তুলবে ঝড় ?

কফি শপের আলোর কি ভাবছে ?
হাওয়া নিরুদ্দেশ হয়েছে, চিহ্ন নেই কিছুতে,
কোথাও দেখা যায় না, ঝমঝম বৃষ্টি উপেক্ষা করে
ওই যে ছুটে আসত একদা, এখন জব্দ!

এমনও হতে পারে রঙিন পোশাক পরে
হাওয়া আসার জন্য তৈরি হচ্ছে, যেমন
মাঝেমধ্যে এসে থাকে
তার বহুমূল্য মুদ্রা যেখানে ছড়িয়ে পড়ে আছে

একটা তোরঙ্গভরা আকাশ-রচনা 
টুপ করে ফেলে দেবে সে জলের ¯্রােতে
আর এই যে ঘন নিবিড় হয়ে বসে আছো
হাওয়াকে দেখে নিশ্চয় সম্বিত ফিরে পাবে

 

গহবর

ওগো বৃষ্টির ফোঁটা আমি ভয় করিনি
যেসব গেঁধে রয়েছে, ছুঁয়ে যায়

হাওয়া, তুমিও ওষ্ঠ রাখ

কত লম্বা হলো বিরতি, ঠিক কি
প্রস্তাব ফলকের মতো পড়ে থাকে, শুশ্রষা
পাবে না কখনো, আমার পোড়াদিনের শেষ নেই ?

জবার মতোই মনে হয় মুখ তুল চেয়ে থাকো,
ওই চাঁদের গুঁড়ো সিংহদরজায় লেগে রয়েছে
সোনার অক্ষর, গহŸর ফুঁড়ে আমি উঠতে চাই।


হেদুয়ার

হেদুয়ার, সেচের স্রোতধারায় তারার ছায়া,
আমি নির্নিমেষ নিয়ে দেখি, অবরোহী ট্রেনের ধ্বনিপুঞ্জ
গড়িয়ে পড়ছে তন্দ্রাচ্ছন্ন ফলের বাগানে

যে সরলতা দু-তীরকে চেয়ে চেয়ে দেখে, 
তার নিঃঝুম ব্যথা পাগল বাতাসে দুলে ওঠে

হেদুয়ার, ঘুমিয়ে থাকা সড়ক থেকে
তার ঘুম স্বপ্ন দেখা যায়, পেয়ারাতলা বুঝি দেখে ?

বহুবার রাত্রি চিরে ফুঁটে ওঠে দৈবতারা, লেখার গঠন।

 

অনঙ্গ বাগান থেকে

স্নেহদাগে ভরে রাখো, ব্যাপ্ত নীলে একটু দাঁড়াবো ?
যে  অমোঘ বারতা পাই, তুমি সজল হয়েছো আজ,
তোমার গূঢ় করমলে কোন দিনাতিপাত
রাখব আজ ভাবি,
হে আশচর্য দীপাধার, ঘূর্ণন শেষ করে, 
পথে নেমে এসে, আমি একটু দন্ডায়মান হতে চাই-

তটরেখায় দাঁড়িয়ে আমি দেখি,
তোমার ব্যাপ্ত নীল ভেসে যায়,
হে আশ্চর্য দীপাধার, ওই অনঙ্গ বাগান থেকে
চ্যুত রক্তবর্ণ ফলগুচ্ছ কে কুড়িয়ে আনল ? 


ভেসে যাওয়া গানে

আধডোবা জলযান, কার দিকে চেয়ে থাকো,
কার কথা ভেবে ব্যাকুল হও, যেসব গান
ভেসে যায় মধ্যযামিনীতে তাদের সঙ্গে
তুমি কি ভেসে যেতে চাও ?

আধডোবা জলযান, ভেসে যাওয়া গানের
কলি ভঙে পড়ে কি তোমার ওপরে
তোমার ব্যথা উপশম হয় ?

আধডোবা জলযান, শাদা জোছনা গলে গলে পড়ছে,
তোমার মতোই কে জানলা অর্ধেক খোলা রেখে
মধ্যযামিনীতে ভেসে যাওয়া গানে উন্মাদিনী হলো ?

 

পত্রকুট

বারবার ফিরে এসে যে আড়াম্ভ দেখি,
মন শুকিয়ে গেছে, যে গন্ধবর্ণ তোমার
আমি উতলা হয়ে তাতে ডুবে থাকতে চাই।

তোমার সহাস্য মুখে বৈশাখের ধুলো লাগে,
তপ্ত রোদে ঘেমে ওঠো, একটু জলকণা
উড়ে আসলে শীতল হবে ধরণী-
ধূলার আস্তরণে আমারও মুখ ঢেকে যায়-
জনারণ্যে ভাসমান থেকে ভাবি

তুমি দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছো,

এবার মেঘ থেকে বৃষ্টি ঝরবে,
বৃষ্টির ধুয়ায় অস্পষ্ট লাগবে চরাচর।

যতোবার আমার আড়াম্ভ, লক্ষ্য করি-
সেই পত্রকুট, মানুষের দীপ্তমুখ
আমার ভাষা আমি কুড়িয়ে নেই-
তাদের মুখের দিকে চেয়ে থেকে।


মরুআলোতে

হে শ্বেতস্তম্ভ, তোমার সর্বনাশ দেখেছি, ভোরের হাওয়ায়-
আজ অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়ে, বিস্মরণ জেগে উঠলে দেখি-
দুঃখী আকাশ তাকিয়ে ছিল তোমার দিকে-
রোহিনী ডেক দিয়ে গেল তোমাকে।

তার চকিতদৃষ্টি, ঢেউ ভাঙা চলন, আন্তর্গূঢ় ভাষা
তোমায় মোহবিষ্ট করেছিল, একজন শুধু একজন 
তোমার সর্বনাশ দেখে ছিল, দূরের স্বর্ণচূর্ণমেঘ
ভেসে এসে লুটিয়ে পড়ে কার পায়ের কাছে-

হে শ্বেতস্তম্ভ - আবিরে রাঙানো মুখচ্ছবি-
আজ পেছন ফিরে দেখি- থোকা থোকা নক্ষত্র জ¦লে আছে,
ব্যথা ঝরে রয়েছে মরুআলোতে-