add

ঢাকা, সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১

বন্যা পরিস্থিতির আরো বিস্তারের আশঙ্কা

সরোবর প্রতিবেদক 

 প্রকাশিত: জুলাই ০৩, ২০২৪, ০৬:৫০ বিকাল  

দেশে বন্যা পরিস্থিতির আরো বিস্তার ও অবনতি ঘটেছে। অতিভারী বৃষ্টিপাতে উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। এতে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া, হাতিয়া ও চিলমারি, যমুনার পানি সাঘাটায়, সুরমার পানি কানাইঘাট, সিলেট ও সুনামগঞ্জে, কুশিয়ারার পানি অমলশীদ, শেরপুর-সিলেট, মারকুলি ও শেওলায়, মনু’র পারি মনু রেলব্রিজ ও মৌলভীবাজারে, খোয়াইয়ের পানি বল্লা ও মৌলভীবাজার এবং সুমেশ্বরীর পানি কলমাকান্দায় বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

বুধবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এমন তথ্য জানিয়েছে। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানিয়েছেন, দেশে বর্তমানে সাত জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বানের পানিতে। 

পাউবো এক পূর্বাভাসে জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীগুলোর পানির সমতল বাড়ছে, যা আগামী তিন দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা, ভুগাই ও কংস নদীগুলোর পানির সমতল কমেছে, অপরদিকে কুশিয়ারা নদীর পানির সমতল বেড়েছে, যা অব্যাহত থাকতে পারে।

আবহাওয়া সংস্থার তথ্যানুযায়ী, দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে আগামী ২৪ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারী এবং ৪৮ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) নাগাদ জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলার যমুনা নদী সংলগ্ন কতিপয় পয়েন্টে পানির সমতল বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এই সময়ে কুড়িগ্রাম জেলার ব্রহ্মপুত্র নদ সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যার পরিস্থিতি কিছুটা অবনতি হতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।

পাউবো জানিয়েছে, বিভিন্ন নদ-নদীতে তাদের পর্যবেক্ষণাধীন ১১০টি স্টেশনের মধ্যে বুধবার পানির সমতল বেড়েছে ৮৩টিতে, কমেছে ২৭টিতে।  বিপৎসীমার ওপর দিয়ে ১৬ স্টেশনের পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

ভয়ংকর হচ্ছে তিস্তা: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর কয়েকদিনের টানা ভারী বৃষ্টিতে বাড়ছে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ। বন্যার শঙ্কায় আছেন তিস্তা নদীর বাম তীরের জেলা লালমনিরহাটের চরবাসী।

বুধবার (৩ জুন) দুপুর ১২টার দিকে হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৫৩ মিটার, যা বিপৎসীমার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) ২২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তিস্তার উৎপত্তি ভারতের সিকিমে।  উজানে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে এ নদীর পানি নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। বর্ষাকালে পানির চাপ বাড়ায় ফারাক্কার সবগুলো গেট খুলে দেয় তারা। ফলে নদী তীরবর্তী এলাকায় বন্যা দেখা দেয়। অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে তারা সব গেট বন্ধ করে রাখে। ফলে পানি সঙ্কটে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়, নদীর ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী সঙ্কটে পড়ে।  নৌপথে ব্যবসা-বাণিজ্যও বাধার মুখে পড়ে।  

বর্ষাকাল শুরু হওয়ায় উজানে ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে তাদের অতিরিক্ত পানি বাংলাদেশ অংশে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এই উজানের ঢলে তিস্তার পানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কয়েকদিনের টানা ভারী বৃষ্টিপাত। ফলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার দিকে এগিয়ে আসছে।  

বর্ষা শুরু হলেই বাংলাদেশের তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায় ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ। এবারও সেই কাজটিই করা হচ্ছে। টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢেউয়ের কারণে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে চরাঞ্চলের সড়ক পথ। চরবাসীর যাতায়াতের মাধ্যম হয়েছে নৌকা।

টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢেউয়ের কারণে বন্যার শঙ্কা করছেন তিস্তা পাড়ের মানুষ। পানিবন্দি হওয়া ও তা কাটিয়ে ওঠার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন চরবাসী ও নদী তীরবর্তী পরিবারগুলো। নদী পাড়ের মৎস্য চাষিরা তাদের পুকুরের মাছ রক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। বন্যা হলে ভেসে যেতে পারে লাখ লাখ টাকার মাছ।

হাতীবান্ধার কিসামত নোহালী চরাঞ্চলের কৃষক আজিজার রহমান বলেন, কয়েকদিন ধরে নদীতে পানি বেড়েছে। চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। নৌকায় যাতায়াত করতে হচ্ছে। যেভাবে পানি বাড়ছে, তাতে মনে হচ্ছে বড় বন্যা হতে পারে।

ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নের ছয়টি ওয়ার্ড তিস্তা নদীর তীরে। বন্যা হলেই ছয়টি ওয়ার্ডের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। পানি বাড়ায় ইতোমধ্যে নিম্নাঞ্চলের কিছু পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

তিস্তা ব্যারাজ বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ ৩ জুলাই সকাল ৬টায় ছিল ১৭ সেন্টিমিটার নিচে, ৯টায় ছিল ১৯ সেন্টিমিটার নিচে ও দুপুর ১২টায় ২২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ মিলিমিটার। তবে বড় কোনো বন্যার শঙ্কা নেই।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, নদ-নদীর পানি খবর সার্বক্ষণিক নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে নদী তীরবর্তী এলাকার খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।

দৈনিক সরোবর/এএল