ঢাকা, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী হয়ে যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন মোদি

সরোবর  ডেস্ক

 প্রকাশিত: জুন ০৫, ২০২৪, ০৭:২৮ বিকাল  

জওহরলাল নেহরুর পর মোদিই হতে যাচ্ছেন তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা প্রথম ব্যক্তি। তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আগামী শনিবার শপথ নিতে যাচ্ছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরই মধ্যে ভারতের প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন মোদি। এখন তাঁর সরকার গঠনের দাবি জানানোর পালা।

দেশটির সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) পেয়েছে ২৪০টি আসন। তবে বিজেপির জোট এনডিএ পেয়েছে ২৯৩টি আসন। অপরদিকে কংগ্রেস এবার অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দলটি একাই পেয়েছে ৯৯টি আসন। আর কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট ইন্ডিয়া পেয়েছে ২৩৩টি আসন।

ভোটের এমন ফলাফলে তৃতীয় মেয়াদে মোদির সরকার গঠনের সম্ভাবনাই বেশি। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য দলটিকে ভর করতে হবে জোট শরীকদের ওপর। আর এ ক্ষেত্রে নির্ধারক ভূমিকা তথা কিং মেকারের ভূমিকা পালন করবেন বিহারের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ও জনতা দলের (ইউনাইটেড) নেতা নিতীশ কুমার এবং অন্ধ্রপ্রদেশের তেলেগু দেশাম পার্টির নেতা চন্দ্রবাবু নাইড়ু। এরপরও গুঞ্জন চলছে কংগ্রেসও সরকার গঠন করতে পারে। তবে তেমনটি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

বিজেপি তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করলে কেমন যাবে আগামী পাঁচ বছর। মোদি কি স্বস্তিতে দেশ শাসন করতে পারবেন? তাঁর সামনের দিনের চ্যালেঞ্জই বা কি হবে? ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস মিলান বৈষ্ণব বলেন, ‘সরকার গঠনের জন্য মিত্রদের ওপর এভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়া বিজেপির মুখের ওপর চপেটাঘাত। এবার এনডিএ মিত্ররা বিজেপির শরীরের মাংস খুবলে খাবে অর্থাৎ, কড়ায় গণ্ডায় নিজেদের স্বার্থ আদায় করে নেবে। এসব কেবল নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে নয়, মন্ত্রিসভা গঠনের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলবে। আগে যেখানে বিজেপির খায়েশ মোতাবেক সবকিছু হতো।’

পপুলিস্ট বা জনপ্রিয় নেতা মোদিকে অতীতে কখনো সরকার গঠনের জন্য জোটের অংশীদারদের ওপর নির্ভর করতে হয়নি। ফলে তিনি কতটা সহজে মোকাবিলা জোট শরীকদের সামলাবেন তা নিয়েও ধোঁয়াশা থেকে যাচ্ছে। নয়াদিল্লি-ভিত্তিক রাজনৈতিক ভাষ্যকার আরথি জেরাথ বলেছেন, ‘মোদী একজন আপস করার লোক নন। সুতরাং, তিনি কীভাবে জোট সরকারের টানাপোড়েন এবং চাপগুলো সামাল দেবেন তাই এখন দেখার বিষয়।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাশেদ কিদওয়াই বলেছেন, এই মেয়াদে জনসংখ্যা ও কল্যাণমূলক নীতিগুলো প্রাধান্য পাবে। কারণ মোদীকে দক্ষিণ রাজ্য অন্ধ্র প্রদেশের এন. চন্দ্রবাবু নাইডু এবং পূর্বে বিহারে নীতিশ কুমারের মতো আঞ্চলিক নেতাদের ওপর নির্ভর করতে হবে। তাঁরা এই জাতীয় নীতি সমর্থন করেন।

নাইডুর তেলেগু দেশম পার্টি এবং নীতিশ কুমারের জনতা দল (ইউনাইটেড) বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছে, সরকার গঠনে তাঁরা মোদিকে সমর্থন করবে। দলের জয় না পেলেও জোটের জয়েই এবার সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে মোদিকে। জোটের জয়কে ঐতিহাসিক অভিহিত করে তিনি বলেছেন, ‘মানুষের আকাঙ্খা পূরণ করতে গত দশকে আমরা যেভাবে কাজ করেছি, এই মেয়াদেও একইভাবে কাজ চালিয়ে যাব।’

বিজেপি এবারের নির্বাচনের আগে ভারতের পর্যটন খাতের অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ, আন্তর্জাতিক মর্যাদা বৃদ্ধি এবং হিন্দুত্ববাদীর শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছিল। দলটি বেকারত্বকেও নির্বাচনী ইশতাহারে স্থান দিয়েছিল। বিজেপির মুখপাত্র গোপাল কৃষ্ণ আগরওয়াল বলেছেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা একটি চ্যালেঞ্জ। আমরা এটি বিবেচনায় নিয়েছি এবং সর্বোত্তম যা করা যায় তাই করছি।’

বেসরকারি থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি অনুসারে, ভারতে বেকারত্বের হার চলতি বছরের এপ্রিলে বেড়ে ৮ দশমিক ১ শতাংশ হয়েছে। যা মার্চ মাসে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ ছিল। কোভিড-১৯ মহামারীর আগে এটি ৬ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। প্রতি বছরে ২ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৪ সালে মোদি প্রথম ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তিনি সেই অঙ্গীকার পূরণ থেকে যোজন-যোজন মাইল দূরে।

কংগ্রেসের জোট ইন্ডিয়াও যেভাবে সরকার গঠন করতে পারেকংগ্রেসের জোট ইন্ডিয়াও যেভাবে সরকার গঠন করতে পারে
সর্বশেষ জানুয়ারি-মার্চের ত্রৈমাসিকে সরকারি অনুমান দেখা গেছে, শহুরে এলাকায় ১৫-২৯ বছর বয়সীদের বেকারত্বের হার আগের ত্রৈমাসিকের ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের বেশি হওয়া সত্ত্বেও খাদ্যদ্রব্যর দাম বৃদ্ধির কারণে গ্রামীণ জীবনে দুর্দশা বেড়েছে। কেননা এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সবার হয়নি। ভারতের জনসংখ্যার সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশের মধ্যেই এটি সীমাবদ্ধ।

ভারতে সরকার গঠনে ‘কিং মেকারের’ ভূমিকায় নিতীশ-চন্দ্রবাবুভারতে সরকার গঠনে ‘কিং মেকারের’ ভূমিকায় নিতীশ-চন্দ্রবাবু
ভারতে এখন মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের কাছাকাছি অবস্থান করছে, যা তুলনামূলকভাবে কম। তবে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের ওপরে উঠেছে, এতে বিপাকে পড়েছে দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষেরা। গত বছরের বেশিরভাগ সময় সবজি ও খাদ্যশস্যের দাম বেড়েছে দুই অঙ্কে।

দৈনিক সরোবর/এসএস