ঢাকা, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রে দমিয়ে রাখা হচ্ছে ফিলিস্তিনপন্থি দৃষ্টিভঙ্গি

সরোবর ডেস্ক 

 প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৩, ০৮:৫৭ রাত  

গত সপ্তাহের শুরুর দিকে একটি মার্কিন ইহুদি গোষ্ঠী ফিলিস্তিনিদের একটি জাতীয় সম্মেলন আয়োজন বাতিলে বাধ্য করেছে। সম্মেলনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে এটি হামাসের পক্ষে কাজ করছে।

ফিলিস্তিনি-আমেরিকান অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, টেলিভিশন নেটওয়ার্কগুলো সাক্ষাৎকার সেন্সর বা বাতিল করছে। এনপিআর ও বিবিসি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে ব্যাপক প্রশংসিত একটি বইয়ের বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করেছে ‘শ্রোতাদের অভিযোগের’ পর। ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থি দৃষ্টিভঙ্গি দমিয়ে রাখার ব্যাপক উদ্যোগ চলমান রয়েছে। এসব উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে বড় বড় সম্মেলন বাতিলে বাধ্য করা, ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সংহতি প্রকাশ শ্রমিকদের ছাঁটাইয়ের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়ন বন্ধ, শিক্ষার্থীদের নিয়োগ বাতিল এবং ইসরায়েলিনীতির সমালোচক আরব-আমেরিকানদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন।

অর্থোডক্স ইহুদি চেম্বার অব কমার্স হিলটন হোটেলে ফিলিস্তিনিদের অধিকারবিষয়ক একটি অনুষ্ঠান চাপ দিয়ে বাতিল করানোর পর ‘বিজয়’ ঘোষণা করেছে। ইউএস ক্যাম্পেইন ফর প্যালেস্টাইন রাইটস (ইউএসসিপিআর) নামের গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানটি হিউস্টনে এই মাসের শেষের দিকে আয়োজনের কথা ছিল। এতে প্রধান বক্তা হিসেবে থাকার কথা ছিল কংগ্রেসউইম্যান রাশিদা তালেবের।

চেম্বারটির প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও ডুবি হনিগ প্রকাশ্যে এই আয়োজনকে ‘হামাস সমর্থকদের সম্মেলন’ হিসেবে নিন্দা জানিয়েছেন। তালেবসহ অপর বক্তাদের তিনি ‘কুখ্যাত গর্বিত ইহুদি বিদ্বেষী’ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন। তার মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিকবার পোস্ট ও রিপোস্ট হয়েছে। এতে হিলটনের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টোফার নাসেত্তার যোগাযোগের বিস্তারিত তথ্যও যুক্ত করা হয়েছে। এতে আয়োজকদের বিরুদ্ধে হামাসের হামলার প্রশংসাকারী হিসেবে মিথ্যা অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে।

ইউএস ক্যাম্পেইন ফর প্যালেস্টাইন রাইটস-এর পরিচালক আহমেদ আবুজনাইদ বলেছেন, কয়েক মাস আগে সম্মেলনের ভেন্যু চূড়ান্ত করা হয়েছে। হামাসের হামলার পর নিরাপত্তা নিয়ে হিলটনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সম্মেলন বাতিলের জন্য চাপ দিয়ে অনেক মানুষ তাদের ফোন করছেন। কিন্তু হোটেল রাজনৈতিক পক্ষ নিতে চায় না। শুধু একটি নিরাপত্তা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায়।

তিনি বলেছেন, হিলটন তাদের কাছে নিরাপত্তার জন্য ১ লাখ ডলার চেয়েছে এবং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা পরিশোধ করতে বলা হয়। আমাদের সংগঠনের জন্য এটি অনেক বড় অঙ্ক। কিন্তু আমরা দমে যাইনি। এর পর দিন আমরা ভেন্যু বাতিল করার ইমেইল পাই। তারা শুধু নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করেছে কারণ হিসেবে। কোনও আলোচনা করা হয়নি। একতরফাভাবে তারা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হিলটনের এই সিদ্ধান্ত অন্যায্য ও বৈষম্যমূলক বলে উল্লেখ করেছেন আবুজনাইদ।

নিউ ইয়র্কভিত্তিক ইহুদি চেম্বার অব কমার্স বলেছে, এই বাতিলের ঘটনায় ইহুদি সম্প্রদায়ের শক্তি প্রদর্শিত হয়েছে, যারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিয়েছে।

চেম্বারটি বলেছে, সচেতনতা তৈরি ও জনমত সৃষ্টি করে তারা কার্যকরভাবে আয়োজক গোষ্ঠীর সম্ভাব্য সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন ঠেকিয়ে দিয়েছেন। হিলটন হোটেল কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। তবে টেক্সাস গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট বাতিলের পক্ষে নিজের সমর্থন জানিয়েছেন। টুইটারে তিনি লিখেছেন, টেক্সাসে হামাস সমর্থিত বিদ্বেষ ও ইহুদিবিদ্বেষের কোনও জায়গা নেই। টেক্সাসের কোনও জায়গায় ইউএসসিপিআর-এর আয়োজন হবে না বা কেউ স্পন্সর করবে না।

চেম্বারের পক্ষ থেকে আরো অভিযোগ করা হয়েছে, স্টারবাকসের শ্রমিক ইউনিয়নের হাজারো শ্রমিককে ছাঁটাই করার জন্য। টুইটারে তারা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে একটি পোস্ট দেওয়ার পর অভিযোগ উঠেছে তারা হামাসকে সমর্থন করে। তারা স্টারবাকসের দোকান বন্ধের দাবি তুলেছে। তাদের প্রচারণার স্লোগান হলো, ‘স্টারবাকসের এক কাপ কফি পান করার অর্থ হলো এক কাপ ইহুদি রক্ত পান করা’।

স্টারবাকস বলেছে, পোস্টের প্রতিক্রিয়ায় দোকান বন্ধ করা হবে বেআইনি। তবে ‘স্টারবাকস ওয়ার্কার্স ইউনাইটেড’ তাদের নাম ও লোগো ব্যবহার করায় তাদের বিরুদ্ধে তারা মামলা করা  হবে।

আবুজনাইদ বলেছেন, হিলটনে বা অন্য কোম্পানিকে চাপ দেওয়া নতুন কিছু নয়। কিন্তু হামাসের ইসরায়েলে আক্রমণের পর তা অনেক বেশি বেড়েছে। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার ব্যক্তিদের দমনে একটি পুরনো কৌশল- ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগ, সন্ত্রাসবাদকে সমর্থনের অভিযোগ, সন্ত্রাসবাদী হওয়ার অভিযোগ। কিন্তু এবার যেটি ব্যতিক্রম তা হলো যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ভুয়া তথ্য ও অ্যাক্টিভিস্টদের ওপর আক্রমণ গত কয়েক বছরে এত তীব্রভাবে দেখা যায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিমদের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন দ্য কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স বলেছে, বোমা হামলার হুমকি পাওয়ার পর শনিবার ভার্জিনিয়ার আর্লিংটনে তাদের বার্ষিক ভোজ বাতিল করা হয়েছে। এক দশকের বেশি সময় তারা ম্যারিয়ট হোটেলে এই নৈশভোজ আয়োজন করে আসছিলেন। হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর আয়োজনটি বাতিল করা হয়েছে।

কাউন্সিলটি বলেছে, ম্যারিয়ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে সম্প্রতি হোটেলের পার্কিং গ্যারেজে বোমা রাখা, হোটেলের নির্দিষ্ট কর্মীকে বাড়িতে হত্যা এবং ৬ জানুয়ারি ইউএস ক্যাপিটলের মতো হামলা হোটেলের চালানোর হুমকি দেওয়া হয়েছে। বিকল্প স্থান পাওয়া গেছে। কিন্তু স্থান প্রকাশ করা হবে না।

এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা ফিলিস্তিনি-বিরোধী বর্ণবাদী এবং মুসলিম-বিরোধী ধর্মান্ধদের হুমকিতে ফিলিস্তিনি জনগণকে অপদস্ত হতে দেব না। ধর্মান্ধরা আমেরিকান মুসলমানদের নীরব করতে চায় যাতে সবার জন্য ন্যায়বিচার চাওয়া থেকে আমাদের বিরত রাখা যায়।

ফিলিস্তিনি আমেরিকান অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, কট্টরপন্থি ইসরায়েলি সমর্থকদের বিস্তৃত প্রচারণার অংশ হলো সম্মেলন বাতিল করতে বাধ্য করা। তারা এমন সময়ের সুযোগ নিচ্ছে যখন কিছু শিক্ষার্থী ও বামপন্থি গোষ্ঠী হামাসের হত্যাযজ্ঞকে উদযাপন করছে। তারা এটিকে কাজে লাগিয়ে ইসরায়েলবিরোধী এবং যেসব নীতির কারণে এই সংঘাতের সূত্রপাত সেগুলোর সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গিকে দমন করতে চাইছে। ফিলিস্তিনি-আমেরিকান মানবাধিকার আইনজীবী নৌরা এরাকাত সিবিএস ও এবিসি টেলিভিশন চ্যানেলের লাইভ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু অনুষ্ঠানে তার বলা কথার একাংশ সম্প্রচার করা হচ্ছে। তিনি বলছেন, অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি উপস্থাপকের ইসরায়েলপন্থি বয়ানকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। দখলদারিত্ব ও নিপীড়নের বৃহত্তর অবস্থান থেকে তিনি হামাসের আক্রমণকে ব্যাখ্যা করেছিলেন।

এরাকাত বলেছেন, তিনি যখন এমএসএনবিসি’র ক্যাটি টুর রিপোর্টে হাজির হয়েছিলেন তাকে বারবার হামাস সম্পর্কে প্রশ্ন করা হচ্ছিল। তিনি বলেন, আমি ভেবেছি এটা তুলে ধরা প্রয়োজন যে হামাসকে সামরিকভাবে পরাজিত করার মতো কিছু নেই। কারণ হামাস কোনও আদর্শ নয়, অবরোধ ও পরিকল্পিত যুদ্ধের মধ্যে বেড়ে ওঠা তরুণ, যারা এখনও আশা ছাড়তে পারেনি।

তিনি আরো বলেছেন, অনুষ্ঠান শেষে আমি শুনতে পেয়েছি শীর্ষ নির্বাহী সমালোচনা করেছেন বুকিং প্রযোজকের- কীভাবে আমাকে অতিথির তালিকায় রাখার মতো ভুল করা হলো। বিপরীতে যখন অ্যান্টি-ডিফেমেশন লিগের প্রধান জনাথন গ্রিনব্লাট এমএসএনবিসিতে হাজির হয়েছিলেন তখন তাকে দীর্ঘক্ষণ বাধাহীনভাবে কথা বলতে দেওয়া হয়েছে। তিনি বক্তব্যে দাবি করেছেন, সংঘাতের বৃহত্তর দিক ও ইসরায়েলের নীতির সমালোচনা করা সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন। হামাসের হামলাকে তিনি নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে তুলনা করেছেন। চ্যানেলে গাজার ধ্বংসস্তূপ সম্প্রচারের সমালোচনাও তিনি করেন। তার মতে, এগুলোর পরিবর্তে ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবার নিয়ে আলোচনা করা উচিত। অনুষ্ঠানে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কে চিত্রনাট্য লিখছে? হামাস?’

এরাকাত বলেছেন, তিনি মনে করেন ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের কারণ এড়িয়ে গাজার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য তাকে আমন্ত্রণ করা হয়ে থাকতে পারে। সিবিএস নিউজ শো, প্রাইম টাইম-এ তিনি প্রশ্নে ইসরায়েলপন্থি দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করার পর সম্প্রচারের সময় তার উপস্থিতি কমিয়ে আনা হয়েছে।

তিনি বলেন, তারা চায় আমরা মৃত স্বজনদের জন্য কান্নাকাটি করি কিন্তু সংঘাতের পটভূমি বা কার দায় তা নিয়ে যেন আলোচনা না করি। অপর ফিলিস্তিনি-আমেরিকান বিশ্লেষকরাও টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর পক্ষ থেকে একই ধরনের আচরণের কথা তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে রয়েছে সিএনএনও। কেউ কেউ বলছেন, নির্ধারিত উপস্থিতি বাতিল করা হয়েছে এবং অনুষ্ঠানের আগে প্রযোজকরা ফোন করে জানতে চেয়েছেন তারা কী বলতে চান এবং যা শুনেছেন অনেকের তা পছন্দ করেননি। ইসরায়েলপন্থি সংগঠনগুলোও ফিলিস্তিনি-আমেরিকান সাংবাদিকদের টার্গেট করেছে।

গোপন অর্থায়নে পরিচালিত ডানপন্থি প্রেসার গ্রুপ কমিটি ফর অ্যাকুরেসি ইন মিডল ইস্ট রিপোর্টিং অ্যান্ড অ্যানালাইসিস (ক্যামেরা) নামের গোষ্ঠী মিডিয়ার কাভারেজ প্রভাবিত করতে চায়। তারা অভিযোগ করেছে, লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সারা ইয়াসিন হামাসের প্রতি সহানুভূতিশীল। ফিলিস্তিনি-আমেরিকান এই সাংবাদিক টুইটারে গাজায় ইসরায়েলের হামলার সমালোচনামূলক একটি টুইটারে রিটুইট করেছিলেন। ওই প্রতিবেদন লিখেছিলেন একজন ইসরায়েলি এবং একটি ইহুদি সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছিল। সংবাদমাধ্যমটি ইয়াসিনকে সমর্থন করেছে।

এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, সারা ইয়াসিন হামাসের প্রতি সহানুভূতিশীল এমন কোনও ইঙ্গিত সঠিক নয়, দায়িত্বজ্ঞানহীন ও বেপরোয়া। ক্যামেরা নামের গোষ্ঠীটি বোস্টনভিত্তিক আমেরিকানদের দ্বারা পরিচালিত। ইসরায়েলি ও অপর সাংবাদিকরা যথেষ্ট ইসরায়েলপন্থি না বলে তাদের অভিযোগ। নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর বার্তা কক্ষের অপর দিকের একটি ভবনে গ্রুপটি ব্যানার টানিয়েছে। শহরের বিভিন্ন সেতু ও ভবনেও সংবাদমাধ্যমটি ইসরায়েলবিরোধী উল্লেখ একই ধরনের ব্যানার টানিয়েছে তারা।
হারপার’র বাজার-এর এডিটর ইন চিফ সামিরা নাসর গাজায় ইসরায়েল জরুরি সেবা বন্ধ করে দেওয়ার পর সাধারণ ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। এতে তিনি সমালোচনার মুখে পড়েছেন। অথচ মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ইসরায়েলের এই অবরোধ একটি যুদ্ধাপরাধের শামিল।

সামিরা নাসর লিখেছিলেন, ‘২২ লাখ বেসামরিকের বিদ্যুৎ ও পানি বিচ্ছিন্ন করা...আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে অমানবিক বিষয়।’ এই পোস্টের পর সাময়িকীটির ভেতর ও ফ্যাশন শিল্পে সমালোচনা শুরু হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় ইসরায়েলিদের হত্যার বিষয়কে তিনি খাটো করে দেখছেন। এরপর তিনি দুঃখপ্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, কোনোভাবেই তিনি হামাসের প্রতি সহানুভূতিশীল নন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আরব-আমেরিকান সাংবাদিক বলেছেন, আরব রিপোর্টারদের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট করতে তাদেরকে পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে তুলে ধরতে একটি সমন্বিত উদ্যোগ চলমান রয়েছে।

তিনি বলেন, এটি হলো ফিলিস্তিনি ও ফিলিস্তিনপন্থি কণ্ঠকে দমন করা। এর মাধ্যমে বলা হচ্ছে, যা ঘটেছে সেটি নিয়ে আলোচনার একটি মাত্র বৈধ পথ রয়েছে এবং অন্য কিছু নিয়ে আলোচনা করা যাবে না। জার্মানিতে ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি কণ্ঠস্বরকে দমিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে। ফিলিস্তিনি লেখক আদানিয়া শিবলিকে তার উপন্যাসের জন্য মেলায় পুরস্কৃত করার কথা ছিল। কিন্তু হামাসের হামলার পর তা বাতিল করা হয়েছে। আমেরিকান লিবিয়ান পুলিৎজার জয়ী হিশাম মাতার, আইরিস ঔপন্যাসিক কলম তইবিন ও ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ ডালবিম্পলসহ সাড়ে তিন শতাধিক লেখক এর সামলোচনা করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে একাধিক অনুষ্ঠানে নিজের নতুন ও প্রশংসিত বই ‘অ্যা ডে ইন দ্য লাইফ অব আবেদ সালামা’ নিয়ে কথা বলার কথা ছিল মার্কিন ইহুদি লেখক নাথান ত্রালের। তিনি বলেছেন, বইটি নিয়ে একাধিক আয়োজন বাতিল করা হয়েছে। এনপিআর ও বিবিসির আমেরিকান সংস্করণে বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করা হয়েছে শ্রোতাদের অভিযোগের পর।

তিনি বলেন, তারা শ্রোতাদের অভিযোগগুলো আমাকে সরবরাহ করেনি। আমি সন্দিহান। আমি নিশ্চিত, বইটি যদি ইসরায়েলের পক্ষে হলে বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করা হতো না। বইটিতে যে ফিলিস্তিনি আবেদ সালামার কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে তাকে নিয়ে থ্রাল লস অ্যাঞ্জেলেসের অলাভজনক সংস্থা রাইটার্স ব্লক-এর একটি আয়োজনে উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা বাতিল করা হয়েছে। সংগঠনটির পরিচালিক আন্দ্রিয়া গ্রসম্যান ত্রালের বইয়ের প্রশংসা করেছেন। কিন্তু তিনি বলেছেন, এই মুহূর্তে বইটি নিয়ে মুখোমুখি কোনও আয়োজন করা কঠিন।

ত্রাল বলেছেন, যুক্তরাজ্যে পুলিশ সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে লন্ডনের কনওয়ে হলকে তার বইয়ের ওপর আলোচনা বাতিলের পরামর্শ দিয়ে। যদিও অনুষ্ঠানটির কয়েক শ’ টিকিট বিক্রি হয়েছিল।

ত্রাল আরো বলেছেন, দখলদারিত্বের মধ্যে থাকা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ এবং সংঘাতের মূল্যোৎপাটন নিয়ে অসহিষ্ণুতার পরিবেশ বিরাজ করছে। আমার বইটি বিতর্কিত নয়। ইহুদি ও ফিলিস্তিনি চরিত্র তুলে ধরায় এর প্রশংসা করা হয়েছে। কিন্তু সেই বইয়ের আলোচনা বাতিল হয়েছে, বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করা হয়েছে, এটি আপত্তিকর।

তার মতে, কয়েক বছরে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে খোলাখুলি আলোচনার এক ধরনের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু হামাসের হামলার পর এক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

তিনি বলেন, কোনটি স্থায়ী ও কোনটি অস্থায়ী তা এই মুহূর্তে ধারণা করা কঠিন। দখলদারিত্বে থাকা ফিলিস্তিনিদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে উন্মুক্ত আলোচনার পক্ষে জনমত অগ্রসর হচ্ছিল। মাত্রা কম হলেও ৭ অক্টোবরের আগে সহিষ্ণুতা ছিল। এখন আমার কাছে মূল প্রশ্ন হলো, এটি দীর্ঘমেয়াদে সেই অগ্রগতিকে পিছিয়ে দিলো? তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, নিউ ইয়র্ক টাইমস

দৈনিক সরোবর/এএস