ঢাকা, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

মৃত্যু আর ধ্বংসযজ্ঞেও ফিলিস্তিনে আলো ছড়াচ্ছে ইসরার স্কুল

সরোবর ডেস্ক

 প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২৪, ০৭:৪৩ বিকাল  

ইসরার ঘর ইসরায়েলি বিমান হামলায় ধ্বংস হয়েছিল। কিন্তু জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বেড়ানোর বদলে শিশুদের লেখাপড়া শেখানোয় নিযুক্ত করেন নিজেকে। তাঁবুর বিদ্যালয়ে শুরু করলেন শিক্ষা কার্যক্রম। গাজা ও পশ্চিম তীরের সাক্ষরতার উচ্চহার ফিলিস্তিনিদের জন্য এক গৌরবের বিষয়। কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনে অধিকাংশ স্কুল হয় ইসরায়েলি হামলায় ধুলোয় মিশে গেছে, অথবা বাস্তুচ্যুত মানুষের আশ্রয় কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। চারদিকে যেখানে মৃত্যুর মিছিল আর ধ্বংসযজ্ঞ, সেখানে শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদা পূরণ প্রায় অসম্ভব। কিন্তু এই অসম্ভব দায়িত্বই কাঁধে তুলে নিয়েছেন ২৯ বছর বয়সী ইসরা আবু মুস্তাফা। যুদ্ধের মাঝেও যিনি শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে বদ্ধপরিকর।

১০ বছর বয়সী হালা আবু মুস্তাফা বলেছে, যুদ্ধের সময় আমাদের জ্বালানি কাঠ ও পানি সংগ্রহ করতে হতো। এরপর ইসরা আপা আমাদের খুঁজে বের করে এখানে নিয়ে আসেন। এরপর থেকে তার কাছেই আমরা পড়াশোনা করছি। ৩৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এই প্রকল্প শুরু হয়েছিল। এখন সংখ্যাটি ৭০-এ পৌঁছেছে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থী আছে ইসরার কাছে। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের হামলার পর থেকে এবারের সংঘর্ষ শুরু। ইসরায়েলের দাবি, হামলায় তাদের প্রায় ১ হাজার ২শ’ নাগরিক নিহত ও প্রায় ২শ’ ৫০ জন জিম্মি হয়েছে। এই হামলার জবাবে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

যুদ্ধ শুরুর পর থেকে, প্রায় ৬ লাখ ২৫ হাজার ফিলিস্তিনি শিশুর জন্য স্কুলে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১০ গাজার ৪শ’ ৯০ জন শিক্ষার্থী ও ৫ শতাধিক শিক্ষক ইসরায়েলি আগ্রাসনে প্রাণ হারিয়েছেন।

অবশ্য, বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালানোর কথা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে ইসরায়েল। উল্টো, সাধারণ মানুষকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা ও স্কুল ভবনে ঘাঁটি গড়ার জন্য হামাসকে দায়ী করে তারা। এসব অভিযোগ আবার হামাস অস্বীকার করে। ইসরার পাঠদান পদ্ধতি গৎবাঁধা শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে না। তার মূল প্রচেষ্টা থাকে, চারদিকের এতো অস্থিরতার মাঝে শিশুদের প্রাত্যহিক জীবনের একটা কাঠামো গড়ে তুলতে ও তাদের মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করা।

চারদিকে চলছে ক্রমাগত বোমাবর্ষণ। নেই পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। এরপরেও বাচ্চাদের পড়ালেখার মাঝে রাখার মতো অসাধ্য সাধন করে চলেছেন ইসরা। শ্রেণিকক্ষের মৌলিক কোনও সুবিধাই ইসরার তাঁবুতে নেই। তিনি বলেছেন, আমাদের শ্রেণিকক্ষে টেবিল-চেয়ার খুবই প্রয়োজন। শিশুরা মাটিতে লিখে চর্চা করছে। তাদের সুষ্ঠুভাবে পড়ালেখার ব্যবস্থা করা দরকার। ইসরা বলেছেন,শিশুদের কী কী চাহিদা থাকতে পারে? নিরাপদ পরিবেশে লেখাপড়া ও খেলাধুলা করা, ভয়ডরবিহীন পরিবেশে বেঁচে থাকা-এগুলো তো তাদের অধিকার! সূত্র: রয়টার্স

দৈনিক সরোবর/এএস