ঢাকা, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

বিবিসির দৃষ্টিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যা চেষ্টা 

সরোবর  ডেস্ক

 প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২৪, ০৯:২৯ রাত  

গুলিতে আহত হবার পর স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে নিউ জার্সির বাড়িতে ফিরেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এফবিআই ইতোমধ্যেই জানিয়েছে যে গুলির ঘটনা ছিলো ট্রাম্পকে ‘হত্যার চেষ্টা’।

মুখের এক পাশে ও কানে রক্ত নিয়ে সিক্রেট সার্ভিস সদস্যদের সহায়তায় বেরিয়ে আসার পর মি. ট্রাম্প বলেছেন, তার কানের ওপরের অংশের চামড়া ভেদ করে বুলেট চলে গেছে। মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআই মি. ট্রাম্পের ওপর হামলার জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেছে। সিক্রেট সার্ভিস সদস্যদের গুলিতে নিহত হওয়া বিশ বছর বয়সী ওই হামলাকারীর নাম থমাস ম্যাথিউ ক্রুকস। ট্রাম্প এবং তার কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্প সিক্রেট সার্ভিস ও অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তার ছেলে ট্রাম্প জুনিয়র বলেছেন আমেরিকাকে রক্ষার জন্য লড়াই করা ট্রাম্প বন্ধ করবেন না। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকরা ছাড়াও বিশ্ব নেতৃবৃন্দও তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

এ ঘটনাটি আমেরিকার ইতিহাস, রাজনীতি ও নভেম্বরের নির্বাচনে কেমন প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে বিবিসির কয়েকজন সাংবাদিক। নির্বাচনি প্রচারণার ধরনটাকে বদলে দিবে: বিবিসির নর্থ আমেরিকা এডিটর সারাহ স্মিথ লিখেছেন যে, মুখে রক্ত নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প মুষ্টিবদ্ধ হাত ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন এবং সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা তাকে মঞ্চ থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন- এ ছবি শুধু ইতিহাস বানায়নি, বরং এগুলোই নভেম্বরের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের হিসেব নিকেশ পাল্টে দিতে পারে। জঘন্য এই রাজনৈতিক সহিংসতার নিঃসন্দেহে প্রভাব পড়বে নির্বাচনি প্রচারণায়।

ছবিটি দ্রুতই সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেছেন মি. ট্রাম্পের ছেলে এরিক ট্রাম্প, আর ক্যাপশন দিয়েছেন: এই সেই যোদ্ধা যাকে আমেরিকার দরকার। ঘটনার পরপর একটি টেলিভিশনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এ ধরনের সহিংসতার জায়গা আমেরিকায় নেই। তিনি তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বীর জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং রাতে তিনি তার সাথে কথা বলবেন বলেও জানান। বাইডেনের নির্বাচনি প্রচার দল সব ধরনের রাজনৈতিক বিবৃতি বন্ধ রেখেছে এবং দ্রুতই টেলিভিশন বিজ্ঞাপনগুলো না দেয়ার জন্য কাজ করছেন। কারণ তাদের বিশ্বাস ট্রাম্পের ওপর হামলার এই সময়ে এগুলো মানানসই হবে না। বরং যা ঘটেছে তার নিন্দা জানানোর দিকে মনোযোগ দেয়াই হবে শ্রেয়। সব মতের রাজনীতিকরাই এক হয়ে বলছেন যে গণতন্ত্রে সহিংসতার জায়গা নেই।

সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জর্জ ডব্লিউ বুশ, বিল ক্লিনটন এবং জিমি কার্টার দ্রুতই এ সহিংসতার তীব্র নিন্দা করেছেন এবং ট্রাম্প গুরুতর আহত হননি শুনে তারা কতটা স্বস্তি পেয়েছেন সেটি বলেছেন। কিন্তু ট্রাম্পের কিছু ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং সমর্থকরা সহিংসতার জন্য ইতোমধ্যেই মি. বাইডেনকে দোষারোপ করা শুরু করেছেন। একজন রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ প্রেসিডেন্টকে অভিযুক্ত করেছেন ‘হত্যাকাণ্ডের উস্কানি দেয়ার জন্য’। সিনেটর জেডি ভান্সকে মনে করা হচ্ছে ট্রাম্পের সম্ভাব্য ভাইস প্রেসিডেন্টদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় আছেন। তিনি বলেছেন বাইডেনের প্রচারণাই সরাসরি এ ঘটনার দিকে নিয়ে গেছে। একই ধরনের বক্তব্য এসেছে আরও কয়েকজন রিপাবলিকান রাজনীতিকের দিক থেকেও। ধারণা করা যায়, এর প্রতিবাদ নিশ্চিতভাবেই তাদের প্রতিপক্ষের দিক থেকে আসবে আমেরিকার রাজনীতির বিপজ্জনক এই সময়ে ঘৃতাহুতি হিসেবে। আমরা এখনি লড়াইটা দেখতে পাচ্ছি যা সামনে আরও কুৎসিত হয়ে উঠতে পারে, যা আসলে নির্বাচনি প্রচারণার ধরনটাকেই বদলে দিবে।

আমেরিকার রাজনীতির অন্ধকার ও বিপজ্জনক অধ্যায়: বিবিসির নর্থ আমেরিকা করেসপন্ডেন্ট অ্যান্থনি জার্চার লিখেছেন যে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলা দেশটির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যাম্পেইনকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। আমেরিকার রাজনীতিতে সিকিউরিটি ও সেফটির যে ধারণা গত কয়েক দশক ধরে তৈরি হয়েছে সেটি নাটকীয়ভাবে বিপর্যস্ত হলো। ১৯৮১ সালে গুলিতে রোনাল্ড রিগ্যান গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর কোন প্রেসিডেন্ট বা প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর ওপর এ ধরনের ঘটনা আর ঘটেনি। যুক্তরাষ্ট্রে যখন কোন রাজনৈতিক সহিংসতা হয় তখন রাজনৈতিক মেরুকরণ ও ত্রুটিপূর্ণ কার্যক্রম দেখা যায়। যখন কোন অস্ত্র কোন ব্যক্তির ইচ্ছায় ব্যবহৃত হয় তখন এটি ইতিহাসের গতি প্রকৃতি পাল্টে দিতে পারে।

শনিবারের এই ঘটনার প্রভাব আমেরিকা এবং এর রাজনৈতিক গতি প্রকৃতির ওপর কতটা হবে তা অনুমান করা কঠিন। কিন্তু এখন একটা বিষয় পরিষ্কার, নির্বাচনি জল গড়ানোর বছরে আমেরিকার রাজনীতি একটি নতুন কিন্তু প্রাণঘাতী মোড় নিলো।

আমেরিকার ইতিহাসের দু:খজনক মুহূর্ত: ওয়াশিংটন করেসপন্ডেন্ট গ্যারি ওডনাহিউ পেনসিলভানিয়া থেকে লিখেছেন: এটা ছিল কিছুটা ভয়ের। মঞ্চের সামনের দিকে যারা ছিলেন তাদের মতো বিপদের মধ্যে ছিলাম না আমরা, তবে সত্যি বলতে যখন আপনাকে গুলি করতে শুরু করে তখন ভয় চলেই আসে। আমরা আরো দেখলাম লোকজন চিৎকার করে বেরিয়ে আসতে শুরু করলো এবং আমরা ভেবেছিলাম আবার কাজ শুরু করা কিছুটা নিরাপদ হবে কিন্তু লোকজন ছিলো ভীষণ হতাশ ও ক্ষুব্ধ, খুবই আবেগাক্রান্ত। খুব ক্ষুব্ধ অবশ্যই। নিরাপত্তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠতে যাচ্ছে। এটা ছিলো একটা আউটডোর ভেন্যু এবং সে কারণে এর কিছু প্যারামিটার আছে—কেন নিচু ছাদ গুলোতে তাদের কেউ ছিলো না? কেন তারা সব ছাদ দেখেনি? কীভাবে একজন মানুষ একটি সেমি-অটোমেটিক রাইফেল নিয়ে ছাদে গেলো এবং সাবেক প্রেসিডেন্টকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে পারলো?

আমি মনে করি আমেরিকার ইতিহাসে এটা দুঃখজনক, দুঃখজনক মুহূর্ত। ক্ষোভ ছড়িয়েছে সব জায়গায়- সমস্যা হলো কীভাবে এটির বহিঃপ্রকাশ ঘটবে এবং শুধু নির্বাচন নয়, দেশের ভবিষ্যতের জন্যও এর অর্থ কী দাঁড়াবে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব ঠিক করবেন কীভাবে এটি এগুবে, কীভাবে এগুলোর বাইরে গিয়ে তারা দেশকে এগিয়ে নিবেন এবং এটা সঠিকভাবে না হলে এটি খুব খারাপের দিকেও যেতে পারে। তথ্যসূত্র: বিবিসি নিউজ বাংলা

দৈনিক সরোবর/এএস