ঢাকা, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১

কোটা আন্দোলনকারীদের নিয়ে স্বস্তিকা-কবীর সুমনের আবেগঘন স্ট্যাটাস

বিনোদন ডেস্ক

 প্রকাশিত: জুলাই ১৮, ২০২৪, ০৪:১৪ দুপুর  

চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনবেশ সরব দেশের শোবিজ অঙ্গন। কোটা সংস্কার চেয়ে আন্দোলনরতদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ। এবার কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে আবেগঘন পোস্ট দিলেন ওপার বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখার্জী ও জনপ্রিয় গায়ক কবীর সুমন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি এক দীর্ঘ পোস্ট করেছেন।

পোস্টে স্বস্তিকা লিখেছেন, প্রায় এক মাস হলো আমি নিজের দেশে নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খবরের চ্যানেলে তৃতীয় বিশ্বের কোনো খবরই তেমন একটা চলেনা।আর আমি খুব একটা ফোনের পোকা নই তাই এত খারাপ একটা খবর কানে আসতে দেরি হলো। এই তো কয়েক মাস আগে বাংলাদেশ গেলাম, খুব ইচ্ছে ছিল জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়ার। চারুকলা যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল, জীবনের একটা স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে। 


আন্দোলনের বিষয়ে তার ভাষ্য, ‘প্রতিবার আসি, ব্যস্ততায় যাওয়া হয়না, মা'ও খুব যেতে চাইতেন বাংলাদেশ, নিয়ে যাওয়া হয়নি, কিন্তু আজ একটা ভিডিও দেখলাম, গুলির ধোঁয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা আক্রান্ত। ছাত্র বয়স গেছে সেই কবে, তবে জাহাঙ্গীর নগর আর আমার যাদবপুর খুব কাছাকাছি। কাঠগোলাপের গাছ গুলিও কেমন এক রকম। এক রকম আকাশের মেঘ গুলিও। কেবল আজ ওখানে বারুদের গন্ধ।’

গৌতম গুহ রায়ের কবিতার একাংশ লিখেছেন এ অভিনেত্রী 

‘ময়দান ভারী হয়ে নামে কুয়াশায়
দিগন্তের দিকে মিলিয়ে যায় রুটমার্চ 
তার মাঝখানে পথে পড়ে আছে ও কি কৃষ্ণচূড়া ?
নীচু হয়ে বসে হাতে তুলে নিই 
তোমার ছিন্ন শির, তিমির।’

স্বস্তিকা পোস্টের শেষে বলেন, এমন এক আপ্যায়ন প্রিয় জাতি দেখিনি, খাবারের নিমন্ত্রণ যেন শেষ হতেই চায় না, ওমন সুন্দর করে সারা রাস্তা জুড়ে ভাষার আলপনা আর কোথায় দেখবো ? নয়ন জুড়ানো দেওয়াল লেখা? এ বোধহয় মুক্তিযুদ্ধের শপথ নেওয়া একটা জাতির পক্ষেই সম্ভব।  আজ, অস্থির লাগছে। আমিও তো সন্তানের জননী। আশা করবো বাংলাদেশ শান্ত হবে। অনেকটা দূরে আছি, এই প্রার্থনা টুকুই করতে পারি। অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো, সেই আমাদের আলো। আলো হোক, ভাল হোক সকলের ।

অন্যদিকে, দুই বাংলার জনপ্রিয় গানওয়ালা এ আন্দোলন নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, আমি ভারতের নাগরিক। বাংলাদেশ আমাদের প্রতিবেশী। তার বিষয় আশয়ে নাক গলানোর অধিকার আমার নেই। সেটা করতে চাইও না। তবু বাংলাদেশের অনেকের কাছ থেকে যে ভালবাসা আমি পেয়েছি তা ভুলে থাকতেও পারছি না। ভুলবই বা কেন।

এরপর লেখেন, ছবি দেখছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। একটু আগেই দেখলাম। মিছিল করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। নেপথ্যে শোনা যাচ্ছে কাজি নজরুল ইসলামের "কারার ওই লৌহকপাট/ ভেঙে ফেল্ কর রে লোপাট"! মনে হচ্ছে গানটি এডিট করে বসানো হয়েছে ভিডিওর সঙ্গে। ঠিক কাজই করা হয়েছে।

তিনি লিখেছেন, কত সময়ে দেখেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা আমার গানের লাইন লিখে দিয়েছেন দেয়ালে। পশ্চিমবঙ্গে সে তুলনায় কিছুই দেখিনি। বলতে দ্বিধা নেই মনে মনে আমি বাংলাদেশেরও নাগরিক।

কবীর সুমনলিখেছেন, আমার জীবনসায়াহ্ন কাটছে আমার মাভাষায় খেয়াল রচনা করে, গেয়ে, শিখিয়ে। পশ্চিমবঙ্গের সরকার আমার বাংলা খেয়ালকে স্বীকৃতি দিয়েছেন যদিও তাদের পেটোয়া এক শিল্পী বাংলা খেয়াল নিয়ে এবং সেই সঙ্গে আমায় বিদ্রুপ করেছেন এবং এই রাজ্যের সরকারঘনিষ্ঠ একটি পত্রিকা সেই বিদ্রুপ ও মগজহীন উদ্ভট বক্তব্য ঘটা করে ছাপিয়েছেন - আমার একটি ব্যঙ্গচিত্র সমেত।

গায়কের কথায়, আমার জীবনের সেরা কাজ এবং আমার জীবনসায়াহ্নের প্রধান কাজ বাংলা খেয়াল বাংলাদেশে চর্চা করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের শিল্পী মরহুম আজাদ রহমান বেশ কিছু বাংলা খেয়াল রচনা করে গেছেন বিভিন্ন রাগে। বাংলা ভাষা আর বাংলা খেয়ালের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে আমি বাঁধা - ভালবাসার বন্ধনে। গতবার ঢাকায় গানের অনুষ্ঠান করতে গিয়ে যে সম্মান ও ভালবাসা পেয়েছি তা ভারতে পেয়েছি কবার?

গানওয়ার ভাষায়, এ হেন আমি বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় চুপ করে বসে থাকতে পারি না। থেকেছি কয়েক দিন। আর পারছি না। কিন্তু অবস্থাটা যে ঠিক কী, কী কী কারণে যে এমন হলো এবং হচ্ছে, কারা যে এতে জড়িত তাও তো ঠিকমতো জানি না। তাও পঁচাত্তর উত্তীর্ণ এই বাঙলাভাষী করজোড়ে সব পক্ষকে মিনতি করছি: অনুগ্রহ করে হিংসা হানাহানি বন্ধ করুন। ঢাকা সরকারকে অনুরোধ করছি: বাংলা ভাষার কসম শান্তি রক্ষার চেষ্টা অব্যাহত রাখুন। আপনাদের ছাত্রবাহিনী যেন হিংসার আশ্রয় না নেন। 

সবশেষে আরো লিখেছেন, আর কী বলি। আমি তো সশরীরে যেতে পারছি না ঢাকায়। পারলে যেতাম। রাস্তায় বসে পড়ে সকলকে শান্তিরক্ষার জন্য আহবান করতাম।