ঢাকা, শনিবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩০

বিশ্ব ভোক্তা বাজারে অবস্থান সুদৃঢ় হচ্ছে বাংলাদেশের

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৩, ০৯:২৯ রাত  

বিশ্বে ভোক্তা বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করার ব্যাপারে সরকার বদ্ধপরিকর। ইতোমধ্যে এতে সরকার অনেক দূর এগিয়ে গেছে। দেশকে যত দ্রুত শিল্পোন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে, ততই বিশ্বজুড়ে ভোক্তা বাজারে নিজের অবস্থানের ব্যাপ্তি ঘটাতে পারবে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিকভাবে তুঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য দেশকে শিল্পোন্নত হিসেবে গড়ে তোলার ব্যাপারে অবজ্ঞা করার কোনও সুযোগ নেই। 

আশার কথা হলো যেভাবে সরকার বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইপিজেড) গড়ে তুলছে, তাতে প্রচুর শিল্প কারখানা গড়ে উঠার সুযোগ তৈরি করেছে। ইপিজেটে বিদেশি বিনিয়োগ যেভাবে হচ্ছে, তাতে উচ্ছাসিত হওয়া যায়। বিশ্বের বড় বড় অর্থনৈতিক শক্তি এতে বিনিয়োগ করছে। অনেক দেশেরই নাম করা যেতে পারে, যে সব দেশ বিনিয়োগ করছে।

অতি-সম্প্রতি ভারত-জার্মানি যৌথ মালিকানাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠান মেসার্স হেলসা আইকন বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড ১০ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগে আদমজী ইপিজেডে একটি গার্মেন্ট এক্সেসরিজ শিল্প স্থাপন করতে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে  বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) এবং মেসার্স হেলসা আইকন বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড সম্প্রতি ঢাকার বেপজা কমপ্লেক্সে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন এ প্রতিষ্ঠানটি বার্ষিক ১ কোটি জোড়া সোল্ডার প্যাড এবং ৭ লাখ ৫০ হাজার জোড়া স্লিভ হেড তৈরি করবে। কারখানাটিতে ১২৬ জন বাংলাদেশি নাগরিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। 

এদিকে, যশোর ইপিজেড গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এখানে সাড়ে চার লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সরকারের গ্রহণ করা ১০০ ইপিজেডের অনেকগুলোর কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। এগুলোর অবকাঠামো নির্মাণসহ গ্যাস, বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এভাবে ক্রমশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইপিজেড) নির্মাণ করে এবং তা উৎপাদনে নেওয়ার কাজটিও গতিশীলভাবে করা হচ্ছে। 

বলা যায়, বাংলাদেশ বিশ্বের ভোক্তা বাজারে বিশিষ্ট স্থান অধিকার করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আগ্রহের ফলে বিশ্বজুড়ে ভোক্তার বাজার বাংলাদেশের নাগালে শুধু নয়, মুঠোবন্দি হতে চলেছে। খুব বেশি দূরে নয়, ভোক্তার বাজারে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে যাবে যুক্তরাজ্য-জার্মানিকে। এই আশাবাদ নিয়ে সরকার কাজ করছে।

রবিবার (১৯ নভেম্বর)  রাজধানীর হোটেল র‌্যাডিসনে ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি)-এর ৬০ বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠান এবং ইনভেস্টমেন্ট এক্সপো-২০২৩-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে। তখন যুক্তরাজ্য এবং জার্মানির মতো প্রতিষ্ঠিত বাজারগুলোকে এবং বর্তমান উচ্চ প্রবৃদ্ধির ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ডকে আমাদের দেশ ছাড়িয়ে যাবে। সরকার সে লক্ষ্যে কাজ করছে। বাংলাদেশের বিশাল জনসংখ্যাকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে তার প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। 

বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর একটিতে পরিণত করেছি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। শক্তিশালী সামষ্টিক অর্থনৈতিক মৌলিক বিষয়সমূহ ও বাণিজ্য সংহতকরণের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আমাদের মাথাপিছু আয় মাত্র এক দশকে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৯৩ মার্কিন ডলারে। জিডিপি’র আকার ২০০৬ সালের ৪ লাখ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫০ দশমিক ৩১ লাখ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে দারিদ্র্যের হার প্রায় ৩ গুণ কমে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তার সরকারের ‘বিচক্ষণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, অর্থনৈতিক উদারীকরণ এবং বাণিজ্য সংহতকরণের’ ওপর ভিত্তি করেই বর্তমানের এ টেকসই অর্থনীতি ও উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।

বর্তমান বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের যে গ্রহণযোগ্যতা তা উল্লেখ করার মতো। অন্যন্য পণ্য নিয়েও বাংলাদেশ বিশ্ব বাজার দখলে নিতে পারবে তা জোর দিয়ে বলা যায়। কিছুদিনের মধ্যে উন্নত প্রাইভেট কারও দেশের বাজারে চলে আসবে। সেগুলো বিদেশেও রপ্তানি হবে। জাপান, চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আবর সহ বহু অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশ বাংলাদেশে শিল্প-কারখানা গড়ে তোলায় বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে, বাংলাদেশকে শিল্পোন্নত দেশে পরিণত হওয়ার সুযোগ করার কাজে এগিয়ে এসেছে। এতে তারাও ব্যাপকভাবে লাভবান হবে।

দৈনিক সরোবর/এএস