ঢাকা, শনিবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩০

এবারও কী ২০১৪ সালের পরিণতি বিএনপি’র?

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২৩, ০৮:৪১ রাত  

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনী ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়েছে। এই যাত্রা শুরুর পর বিএনপি রবিবার থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে। অন্যদিকে থেমে নেই গাড়ি পোড়ানো। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে বহু যানবাহন পোড়ানো হয়েছে।

বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের নির্দেশে জ্বালাও পোড়াওয়ের অভিযোগ পুলিশ দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের আটক করেছে। তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর বিএনপি লক্ষ্যপূরণে আরো তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার দিকেই যাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। কিন্তু এতে সাফল্য কতটা আসবে মোটা দাগে এ প্রশ্ন রয়েছে। তবে দলটি আশাপূরণে এখনও হতাশ নয় বলে মনে করা হচ্ছে। বিদেশিদের সহায়তায় পরিস্থিতির উন্নতির আশা দেখছে তারা। কিন্তু বিদেশিরা কতটুকু সহায়তায় এগিয়ে আসবে এটাও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের প্রশ্ন। 

তফসিল ঘোষণার পর বিএনপি নতুন চাপে পড়েছে। ইতোমধ্যে জ্বালাও পোড়াওয়ের কারণে দলটির প্রতি নেতিবাচক মনোভাবও কাজ করছে অনেকের মধ্যে। দলটি অবরোধ ডাকলেই অনেক যানবাহন অগ্নিসংযোগের শিকার হচ্ছে। এতে জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। তফসিল ঠেকানোর জন্য দলটি হরতাল-অবরোধ ডাকে। কিন্তু এতে তফসিল ঘোষণা ঠেকানো যায়নি। এখন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য কাজ করছে। আওয়ামী লীগ শুরু করেছে মনোনয়ন বিক্রি।

গণমাধ্যমের সূত্র থেকে জানা যায়, আন্দোলনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিশ্বের দিকে দৃষ্টি বিএনপির। গণতান্ত্রিক বিশ্বের দেশগুলো বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকার দিকে বিশেষ নজর রাখছে দলটি। যুক্তরাষ্ট্রের সংলাপের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ওই চিঠির জবাব দিয়েছে বিএনপি। দলটি মনে করছে রাজনৈতিক বিরোধ মেটাতে হলে সংলাপই একমাত্র পন্থা। এমনকি এর মাধ্যমে নির্বাচনের তফসিল পিছিয়ে  বিরোধী নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিয়ে উপযোগী পরিবেশ তৈরি করাটাও সম্ভব। কিন্তু এমন কোনো কিছু না হলে ডিসেম্বরের প্রথম থেকেই পরিস্থিতি পাল্টে দিতে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে থাকবে। তা ছাড়া খুব শিগগিরই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অত্যন্ত প্রভাবশালী একটি দেশের পক্ষ থেকে কিছু পদক্ষেপ আসতে পারে বলেও দলের নেতারা মনে করছেন। 

সামনের দিনগুলোয় প্রতি সপ্তাহে দু-এক দিন বিরতি দিয়ে আরো কয়েক দফা হরতাল কিংবা অবরোধ কর্মসূচি দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে যে কোনো সময় পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। যে কোনো সময় আরো বড় ধরনের কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে। এরপর ডিসেম্বরের প্রথম দিন থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে দলটি। ওই সময় হাইকমান্ডের নির্দেশ অনুযায়ী সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। তখন তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি অনুযায়ী ‘অসহযোগ’ ঘোষণা করে সব ধরনের কর্মসূচিই পালন করা হবে। কারণ বিরোধীদলীয় নীতিনির্ধারকদের মতে, হরতাল-অবরোধ, অবস্থান, ঘেরাওসহ আন্দোলনের যত রকমের কর্মসূচি আছে সবকিছুর সমন্বিত কর্মসূচিই হলো ‘অসহযোগ’ আন্দোলন। তখন আর পুলিশ কিংবা সিভিল প্রশাসনের কোনো রকমের অনুমতির অপেক্ষা করা হবে না।
 
মূল কথা হচ্ছে, বিএনপি যদি এখনও বিদেশিদের দিকে তাকিয়ে থাকে, তা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তাকিয়ে থাকাই বোঝায়। তফসিল ঘোষণার পর এবং ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হওয়ার প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে কি ধরনের সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসতে পারে? বরং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি হরতাল-অবরোধ ডেকে যেভাবে সহিংসতার পরিচয় দিয়েছে, তাতে, দলটির অবস্থান আরো ঢিলে হয়ে পড়েছে। হরতাল-অবরোধে যানবাহন মালিকরা অগ্নিসংযোগের ভয়ে দুরপাল্লার বাস না নামালেও রাজধানীসহ অন্য মহানগরে গণপরিবহন নির্ভয়ে চলছে। তারপরও অনেক গাড়িতে আগুন ঘটনা ঘটছে।

আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী পথে হাঁটলেও বিএনপি চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে অনির্বাচিত সরকার কায়েমের পথে হাঁটছে, আর হোঁছট খাচ্ছে। এ অবস্থায় থাকলে দলটি শেষ পর্যন্ত— কি অর্জনে সক্ষম হবে তা দিনের মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকানোর যে ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলো, এবারও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে গিয়ে একই ভাগ্যবরণ করতে হবে তা নিয়ে অনেকেই মনে করছেন।

দৈনিক সরোবর/এএস