ঢাকা-বেনাপল-রাজশাহী
ট্রেন যেতে পারে দ্বিমুখী রুটে
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩, ০৮:৪৮ রাত
দশ অক্টোবর পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা ট্রেন চালু করা হবে। বর্তমান সরকারের সময়ে পদ্মা সেতু চালু করা উল্লেখযোগ্য একটি বিষয়। দ্বিতল পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে যান চলাচল শুরু হয়। কথা ছিলো, একই দিনে যান ও ট্রেন চলবে। তবে নানা কারণে রেলপথের কাজ বাকি থাকায় সেটা সম্ভব হয়নি। এখন আগামী ১০ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল। এতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ট্রেনে চেপে ঢাকায় আসা-যাওয়ার পথ খুলে যাচ্ছে।
পদ্মার ঊপর দিয়ে ট্রেন চালু করা সরকারের আরো একটি সাফল্য। উল্লেখ্য, ঢাকা থেকে পদ্মা হয়ে ট্রেন যাবে যশোর পর্যন্ত। তবে ভাঙ্গার পরের অংশের কাজ শেষ হতে আরো সময় লাগবে। কাজ শেষ হলেই যশোর পর্যন্ত ট্রেন চালু হবে তখন।
একটি বিষয়ে সবাই হয় তো জ্ঞাত নন যে, ঢাকা-ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালু হওয়ার পরে, এই ট্রেন যশোর, খুলনা ও বেনাপল পর্যন্ত যাওয়ায় সমস্যা হবে না। পাশাপাশি রাজশাহী যাওয়া সমস্যা দেখা দেবে না। অনেক ভাবতে পারেন কিভাবে এটা সম্ভব? তার সহজ উত্তর হলো, ভাঙ্গা থেকে বিদ্যমান রেলপথ, রাজবাড়ী-খুলনা-বেনাপল রেলপথের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে। অন্যদিকে এই রেলপথের (রাজবাড়ী-খুলনা-বেনাপল) সঙ্গে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ হয়ে উত্তরবঙ্গের ঈশ্বরদীর সঙ্গে যুক্ত আছে।
সুতরাং ঢাকা থেকে পদ্মা হয়ে ট্রেন ভাঙ্গা যাওয়ার সুযোগ পেলে ভাঙ্গা থেকে ফরিদপুর হয়ে রাজবাড়ীর পাচুরিয়া দিয়ে রাজবাড়ীর মূল রেলপথে ঢুকে যেতে পারবে। এই রেলপখে ঢুকে সোজা যশোর, খুলনা হয়ে বেনাপল পৌঁছাতে পারবে।
বৃটিশ আমলে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাট থেকে ট্রেন ছেড়ে কলকাতার শিয়ালদহ গিয়ে হাজির হত। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ও পাবনার ঈশ্বরদীর পাকশী বরাবর হার্ডিজ্ঞ ব্রিজ হয়ে রাজশাহী থেকে রাজবাড়ী ট্রেন যাতায়াত রয়েছে। এই ট্রেন যাতায়াতের মাধ্যমে পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের মানুষের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। হার্ডিজ্ঞ ব্রিজের পাশেই লালন সেতু করায় যাতায়াত আরো প্রসারিত হয়েছে।
দীর্ঘ সময়জুড়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নবঞ্চিত অবস্থায় ছিলো। বর্তমান সরকার মানে শেখ হাসিনা সরকার দীর্ঘদিনের বঞ্চিত অঞ্চলকে উন্নয়নের ছোঁয়ায় আলোকিত করে তুলেছেন। পদ্মা সেতু হওয়ার ফলে বঞ্চিত অঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এখন অপেক্ষায় থাকা ঢাকা টু ভাঙ্গা ট্রেন চালুর অপেক্ষায়।
অনেকেই হয়তো ভাবছেন, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেন ভাঙ্গা যাওয়ার পরে তো ট্রেনে চেপে আর কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই, যতদিন না যশোর পর্যন্ত নির্মাণাধীন রেলপথের কাজ শেষ না হয়। যারা এমনটি ভাবছেন, তাদের জন্য এই বার্তা দেওয়া যায় যে, রেলমন্ত্রণালয় যদি উদ্যোগী হয়, তাহলে ভাঙ্গা থেকে ট্রেন বেনাপোল ও রাজশাহী দুই প্রান্তেই যেতে পারবে।
এ ব্যাপারে রাজবাড়ী নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে রাজবাড়ী-১ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী’র কাছে সকল ট্রেন যাতে রাজবাড়ী হয়ে ঢাকা এবং ঢাকা- রাজবাড়ী হয়ে বেনাপোল, খুলনা এবং রাজশাহী যায় তার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্মারকলিপি দিয়েছে। সংসদ সদস্য ও সাবেকমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী রেল মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে যাতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে দিকটি দেখবেন বলেও রাজবাড়ীর নাগরিক সমাজকে আশ্বস্ত করেছেন।
বর্তমান সরকারের সময়ে দেশের আনাচে-কানাচে উন্নয়নের ব্যাপক ছোঁয়া স্পর্শ করলেও ব্যতিক্রম শুধু রাজবাড়ী। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কোনও সরকারের আমলেই রাজবাড়ীতে উন্নয়ন ঘটানো হয়নি। এটা নিয়ে রাজবাড়ীাবাসীর মনে ক্ষোভের শেষ নেই। তারা যখন দেখছেন, সব জেলায় বিপুল উন্নয়ন, সেখানে রাজবাড়ীতে উন্নয়নের ছিঁটেফোঁটাও লাগেনি। যে কেউ রাজবাড়ী ঘুরে এলেই এ কথার সত্যতা খুঁজে পাবেন। জেলাটিতে একটি মাত্র সরকারি হাসাপাতাল তাতে চিকিৎসক খুঁজে পাওয়া যায় না। ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায় না। রাজবাড়ীবাসীর অনেক কিছু চাওয়া ছিলো, কিন্তু তার একটিও পূরণ হয়নি, জেলার যেসব জনপ্রতিনিধি আছেন, তারা এলাকাবাসীর চাওয়া-পাওয়া, সরকারের কানে তুলে দিতে পেরেছেন কি না আমরা জানি না। আমরা মনে করি যদি পারতেন, তাহলে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতেন, দেশের অন্য জেলাগুলোর মতো রাজবাড়ীকে উন্নয়নের ছোঁয়া দেওয়ার।
রাজবাড়ীর নাগরিক সমাজ রাজবাড়ী-১ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীর কাছে সকল ট্রেন যাতে রাজবাড়ী হয়ে ঢাকা এবং ঢাকা-রাজবাড়ী হয়ে বেনাপোল, খুলনা এবং রাজশাহী যায় তার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যে অনুরোধ জানিয়েছেন, তা আদৌও কার্যকর হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তবে আমরা আশাবাদী যে এ ব্যাপারে খোদ রেলমন্ত্রী বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করবেন এবং ঢাকা থেকে ট্রেন রাজাবড়ী-বেনাপল ও রাজশাহী যাওয়ার সুব্যবস্থা নেবেন।
দৈনিক সরোবর/এএস