আন্দোলনে নতুন মাত্রা দেওয়ার চেষ্টা বিএনপির
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৩, ০৯:০১ রাত

বিএনপির হাতে সময় বেশি নেই। নভেম্বরে তফসিল ঘোষণা করা হলে, এর আগেই যা করণীয় করতে হবে। তাই এবার দলটি কোমরবেঁধে সরকার পতনের আন্দোলনে মাঠে নেমেছে।
দেশের বিভিন্নস্থানে আলাদা রোডমার্চ শুরুর মধ্যদিয়ে ইতোমধ্যে আন্দোলনের নতুন মাত্রা করেছে। রাজধানী ঢাকার প্রবেশমুখে আটটি সমাবেশ করার পরিকল্পনাও নিয়েছে দলটি। সোমবার ১২ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। আগের কর্মসূচির তুলনায়, এবারের কর্মসূচিগুলোর মধ্যে অভিনবত্ব আছে।
ধারনা করা যায়, বেশ চিন্তা-ভাবনা করে এবং আন্দোলনে গতি সৃষ্টি লক্ষ্যে সর্বাত্মক চেষ্টা নেওয়া হবে। নভেম্বরে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করলে অক্টোবর মাথায় রেখে বিএনপির সরকার পতনের প্রচেষ্টার মাত্রা বাড়ানো ছাড়া কোনো উপায় নেই। দলটি নিশ্চিতভাবেই এটি জানে। আর যদি এতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আশায় পড়বে গুঁড়েবালি। অক্টোবরকে ইতোমধ্যে বলা শুরু হয়েছে ভয়ংকর অক্টোবর। অক্টোবর মাসজুড়ে ভয়ংকর কিছু ঘটে যেতে পারে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রচার চালনা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ মাসটিকে ভয়ংকর হিসেবে দেখতে চাইছে না। আওয়ামী লীগ মনে করছে, কিছুই হবে না মাসে। বিএনপি যেমন সরকার পতনের আন্দোলনে আঁট-ঘাট বেঁধে মাঠে নামার পরিকল্পনা নিয়েছে, অন্যদিকে আওয়ামী লীগও বসে নেই। তারাও পাশাপাশি রাজপথ নিজেদের দখলে রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে। রাজপথ দখলে নিয়েই বিএনপি সফল হতে চায়, ফলে এটি আওয়ামী লীগ হতে দেবে না বলে ধারনা করা হচ্ছে।
বর্হিবিশ্বের শক্তিগুলো বিএনপির পক্ষে আছে এই প্রচারনা চালিয়ে বিএনপি সরকার পতন তরান্বিত করতে চায়। বিএনপি মানুষকে এই ধারনা দিতে চায় যে, তাদের সঙ্গে বর্হিরবিশ্ব আছে, সুতরাং সরকার টলাতে তারা সক্ষম হবে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, আদৌও কি বর্হিবিশ্ব বিএনপির সঙ্গে আছে, নাকি এটা তাদের নিজেদের প্রচারণা?
জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে নভেম্বরেই তফসিল ঘোষণা হবে এবং নির্বাচন কমিশন, এ বিষয়টি বেশ আগেই পরিষ্কার করেছে যে, নভেম্বরে তফসির ঘোষণা করা হবে। ফলে নির্বাচন আসন্ন। আর নির্বাচন নিয়ে দেশের পরিস্থিতি ভিন্ন রকম হয়ে উঠতেই পারে। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর। আগামী এই তিন মাসকে কঠিন চোখে দেখছে সরকার। নির্বাচনের আগের এ সময়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বিরোধী দলগুলোর নানা পরিকল্পনা ভাবিয়ে তুলছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের।
সম্প্রতি একাধিক সংস্থার গোপনীয় প্রতিবেদনে তাদের পরিকল্পনার বিষয়টি উঠে এসেছে। বিশেষ করে অক্টোবর মাস টার্গেট করে বিরোধী দলগুলোর নানা আয়োজনের বিপরীতে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করছেন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তিরা।
তারা বলছেন, এ সংক্রান্ত একটি বিশেষ নির্দেশনা এরই মধ্যে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সব ইউনিট, মহানগর, রেঞ্জ এবং জেলা পর্যায়ে পৌঁছানো হয়েছে। সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা এবং দেশের অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সব বাহিনীকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অক্টোবর এবং নভেম্বরকে কেন্দ্র করে তাদের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচন প্রশ্নে একটা সমঝোতায় আসতে সরকারকে বাধ্য করা হবে।
আগামী নভেম্বরের মধ্য বা শেষ সপ্তাহ নাগাদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে ওই তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে বলে ইসি সূত্রের দাবি। বিএনপি চাইছে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বড় ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে মাঠে থাকতে। বিএনপি এরই মধ্যে ১৬ তারিখ থেকে রোডমার্চের মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু করেছে।
বিষয়টি এরকম বলে মনে করা যায় যে, সংবিধান অনুসারে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনও প্রতিবন্ধকতা যাতে প্রভাব না ফেলে ভোটাররা নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য সব উদ্যোগ সরকার নেবে। অন্যদিকে নভেম্বরের আগে পর্যন্ত বিএনপি তত্তাবাধায়ক সরকারের যে দাবি নিয়ে মাঠে থাকবে,তাতে কতটা সফল হবে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। এ জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে আমাদের।
দৈনিক সরোবর/এএস