পরিত্রাণের পথ খুঁজতে হবে
প্রকাশিত: জুন ০৮, ২০২৩, ০৭:১৯ বিকাল

ফাইল ফটো
একদিকে প্রচন্ড গরম, অন্যদিকে লোডশেডিং। এ পরিস্থিতি দেশের মানুষের জীবনকে নিদারুণ কষ্টে ফেলে দিয়েছে। কয়েকদিন ধরেই টানা তাপদাহ চলছে। আকাশে মেঘের দেখা নেই। একটু বাতাসের দেখা মিললেও পরক্ষণেই বাতাস উধাও। বাতাস একটু পাওয়া গেলেও তা তপ্ত।
কিছুদিন আগে গ্যাস-জ্বালানি সংকটের কারণে লোডশেডিং দেখা দেয়। সরকার বুদ্ধিমত্তা খাটিয়ে রেশনিংয়ের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেয়। কয়েকদিন এভাবে চলার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। কমে আসে লোডশেডিং। কিছুদিন খুব একটা লোডশেডিং দেখা যায়নি। হঠাৎ করেই ভয়াবহ গরমের সঙ্গে লোডশেডিংয়ে জনজীবন অস্থির। এ অবস্থায় দেশের শিল্পকারখানা উৎপাদনে ধস দেখা দিয়েছে।
পরিস্থিতি দ্রুত সামাল দিতে না পারলে সামনে আরো ভয়ানক অবস্থার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কেউ কেউ বলতে শুরু করেছে, লোডশেডিংয়ের কারণে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বেকায়দায় পড়েছিলো। খোদ রাজধানী ঢাকায় ১২-১৪ ঘেণ্টা এবং মফস্বলে কয়েকদিন পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাওয়া যেত না। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পুরো সময়জুড়েই বিদ্যুতের অভাবে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে আসে।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্বল্প মেয়াদের কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি করা হয়। পরবর্তী সময়ে সরকার দীর্ঘ মেয়াদি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে শতভাগ বিদ্যুৎয়ানের আওতায় আনা হয় দেশের মানুষকে। দেশে যে একটা সময় ১২-১৪ ঘণ্টা বা কয়েকদিন বিদ্যুৎ পাওয়া যেত না তা ভুলেই গিয়েছিলো।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বজুড়ে গ্যাস ও জ্বালানি প্রচন্ড সংকট দেখা দিয়েছে। এতে বহু দেশ সংকটে পড়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়।
জানা যায়, চলমান লোডশেডিং কেন হচ্ছে তার কারণ ও ব্যাখ্যা জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। সোমবার (৫ জুন) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তিনি এসব কথা জানান। পোস্টে তিনি বলেন, অনাকাক্সিক্ষত লোডশেডিংয়ের পেছনে বেশকিছু কারণ আছে, যা সবারই জানা প্রয়োজন। আপনাদের অজানা নয়, করোনা মহামারির ধাক্কা, পরবর্তীতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব জ্বালানি বাজারে ভয়াবহ অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাস, কয়লা, ফার্নেস ওয়েলসহ সব ধরনের জ্বালানির মূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে যায়, সেইসঙ্গে প্রাপ্যতা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। যে সংকট এখনও চলমান। অন্যদিকে, টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার বেড়েছে লাগামহীনভাবে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রাথমিক জ্বালানি যথা গ্যাস, কয়লা ও ফার্নেস ওয়েল আমদানিতে অনেকটা প্রভাব পড়েছে। ফলে বর্তমানের এই অনাকাক্সিক্ষত লোডশেডিং।
তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৭ হাজার ৩৬১ মেগাওয়াট (ক্যাপটিভসহ)। ফলে উৎপাদন সক্ষমতার দিক থেকে বিদ্যুৎ বিভাগের কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু বৈশ্বিক জ্বালানি সংকট এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাজারের নজিরবিহীন ঊর্ধ্বগতির কারণেই আমরা এই অনাকাক্সিক্ষত লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান। রবিবার (৪ জুন) জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে জ্বালানির অভাব হচ্ছে। সেখানে লোডশেডিং বা বিদ্যুৎ ব্যবহার সীমিত করা হচ্ছে। খাদ্যপণ্য থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। উন্নত দেশেও বহু মানুষ চাকরি হারাচ্ছে। এমন একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সারা বিশ্বব্যাপী। আমরা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। কিন্তু জ্বালানি তেল, কয়লা বা গ্যাসের অভাব সারা বিশ্বব্যাপী। এখন তো কেনাটাই অনেকটা মুশকিল। তারপরও আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের সর্বশেষ ইউনিটটি বন্ধ হয়ে যাওয়া দক্ষিণাঞ্চলে বেড়ে গেছে লোডশেডিং। অনেকের প্রশ্ন বকেয়ার কারণে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রয়োজনীয় কয়লা আমদানি বন্ধ হয়ে আছে, কিন্তু আগেভাগেই বকেয়া পরিশোধ করে কয়লা আনার ব্যবস্থা কেন করা হয়নি। লোডশেডিংয়ের কারণে শিল্পকারখানায় উৎপাদন ধস দেশের অর্থনীতিকে নাজুক অবস্থায় নিয়ে যাবে। সরকারের বিরোধীরাও এতে সুযোগ খুঁজবে। ফলে সরকার প্রধানের সরাসরি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দেশের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে পরিত্রাণের পথ খুঁজতে হবে।
দৈনিক সরোবর/আরএস