স্ক্র্যাপ নীতিমালা উদ্যোগ প্রশংসনীয়
প্রকাশিত: মে ২৫, ২০২৩, ০৮:৪২ রাত

দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। এ নিয়ে চারিদিকে উদ্বেগ-আতংক। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ সড়কে মারা পড়ছে। সংবাদ মাধ্যমে চোখ রাখলেই দেখা যাবে সড়ক দুর্ঘটনার খবর এবং অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনার রাশ টেনে ধরা কেন যাচ্ছে না, এ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমসহ নানা জন সোচ্চার। তারপরও দেখা যাচ্ছে, এ নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীলরা চিন্তিত নন। মনে হয় তাদেও ধারণা দেশে কোনো সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে না। কারণ সড়কে মৃত্যুর মিছিল চললেও তাতে দায়িত্বশীলরা ভাবলেশহীন।
এর মধ্যেও সড়ক দুর্ঘটনা রাশ টেনে ধরার দু-একটি খবর আমরা জানতে পারছি। সম্প্রতি গতি নিয়ন্ত্রণের ওপর নীতিমালা তৈরির ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্টরা গুরুত্ব দিয়েছেন।
যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা গেলে সড়ক দুর্ঘটনার রাশ টেনে ধরায় সহজ হবে বলে তারা জানান। এখন সরকারের দায়িত্বশীলরা মোটরযান স্ক্র্যাপ নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন। খসড়াও তৈরি করেছেন। এই নীতিমালা চূড়ান্ত করা হলে আশা করা হচ্ছে দুর্ঘটনা ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।
আমরাও মনে করি, দেরি না করে ত্বরিৎ গতিতেই মোটরযান স্ক্র্যাপ নীতিমালার কাজ শেষ করে তা বাস্তবায়ন শুরু হোক। প্রতিদিনই সড়কে মানুষ মরছে। এটা বন্ধের উদ্যোগে সময় ক্ষেপন ঠিক হবে না।
সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়, চলাচল অনুপযোগী, অচল ঘোষিত বা আয়ুষ্কাল শেষ হওয়া মোটরযান বিনষ্ট করে ফেলতে একটি নীতিমালা করছে সরকার। এই মোটরযান স্ক্র্যাপ নীতিমালা-২০২৩ অনুমোদন শেষে বাস্তবায়ন করা গেলে পরিবহন দুর্ঘটনা ও যানবাহনের মাধ্যমে পরিবেশ দুষণ কমানো সম্ভব হবে। এই নীতিমালার খসড়া এরই মধ্যে মতামতের জন্য প্রকাশ করা হয়েছিল।
গত বুধবার(১৭ মে) সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ওয়েবসাইটে নীতিমালার খসড়াটি দেওয়া হয়। পরদিন খসড়াটি ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। ওইদিন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, কিছু সংযোজন করার জন্য নীতিমালার খসড়া কপি ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সংযোজন শেষে আবার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো অতি পুরনো ও চলাচলের অনুপযোগী (আনফিট) গাড়িগুলোকেই বেশিরভাগ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করে আসছে। যদিও প্রতিবছর সড়কে কী পরিমাণ দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে, তার নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই।
স্ক্র্যাপ নীতিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, মেয়াদ শেষ হওয়া মোটরযানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ না থাকায় এসব মোটরযান সড়কে চলাচল করছে। এতে সড়ক নিরাপত্তা ব্যাহত হচ্ছে, পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি ধ্বংস করলে যেমন সড়ক নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বাড়বে, তেমনি পরিবেশদূষণ হ্রাস পাবে।
বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেছেন, বর্তমানে মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ির সংখ্যা কত তা হিসাব না করে বলা কঠিন। তবে পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বসে আমরা গাড়ির মেয়াদ ঠিক করেছি, যা বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে ২০ বছর এবং ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের ক্ষেত্রে ২৫ বছর ও অটোরিকশার জন্য ১৫ বছর। তবে স্ক্র্যাপ নীতিমালার খসড়ায় গাড়ির মেয়াদের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। সব পক্ষের মতামত নিয়ে নীতিমালা চূড়ান্ত করার সময় তা যুক্ত করা হবে।
সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর ৩৬ ধারায় মোটরযানের মেয়াদ নির্ধারণের বাধ্যবাধকতা আছে।
সবাই মনে করেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলার ফলেই দেশে সড়কে মৃত্যুর মিছিল। ফিটনেসবিহীন তথা লক্কড়-ঝক্কর গাড়ি বন্ধ করা গেলে সড়কে দুর্ঘটনার রাশ টেনে ধরা যাবে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) মোটরযান স্ক্র্যাপ নীতিমালা করার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা সময়োপযোগী।
মোটরযান স্ক্র্যাপ নীতিমালা কি তা হয়তো কারোর কারোর কাছে পরিষ্কার নাও হতে পারে। এ ব্যাপারে বিআরটিএ আইন বলছে, মোটরযান স্ক্র্যাপ মানে মোটরযান থেকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য যন্ত্রাংশ আলাদা করার পর বিনষ্ট বা ধ্বংস করা। সড়ক পরিবহন আইনের মাধ্যমে গাড়ির মেয়াদ নির্ধারণ করা হবে। বিআরটিএর মাধ্যমে মোটরযান স্ক্র্যাপ করার জন্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হবে, যাদের স্ক্র্যাপ ভেন্ডর বলা হবে। আবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মোটরযান অকেজো ঘোষণা ও নিষ্পত্তির নীতিমালা অনুযায়ী অকেজো ঘোষিত মোটরযান, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নীতিমালা বা সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অকেজো যানবাহন এবং সড়কে চলাচল অযোগ্য ব্যক্তির মালিকানাধীন যেকোনো মোটরযান হতে পারে।
দেশে আজ যানবাহনের বেলায় সবচেয়ে বড় সমস্যা ফিটনেসবিহীন গাড়ি। নীতিমালা না থাকায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি বন্ধ করাও আইনত সমস্যা রয়েছে, মোটরযান স্ক্র্যাপ নীতিমালা হলে আর এ সমস্যা থাকবে না। আশা করা যায়, সড়কে শৃঙ্খলা আসবে, সড়ক হয়ে উঠবে নিরাপদ।
দৈনিক সরোবর/আরএস