ডেঙ্গু প্রতিরোধে এখনই মনোযোগ দেওয়া জরুরি
প্রকাশিত: মে ২৪, ২০২৩, ০৮:৩০ রাত

ফাইল ফটো
নতুন করে ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটতে শুরু করেছে। এখনই সতর্ক না হলে এবং ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেই ডেঙ্গু ভয়ংকর রূপ নিয়ে দাঁড়াতে চাইছে।
রাজধানীর দুই সিটির কর্তাব্যক্তিরা ডেঙ্গু নির্মূলে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। লম্বা সময় ধরে এটি প্রতিরোধের করার প্রয়াসও চোখে পড়ে। তারপরও কেন ডেঙ্গু নির্মূল হচ্ছে না, এটা আমরা বুঝে উঠতে পারছি না। রাজধানী ঢাকা এবং মহানগর চট্টগ্রাম সবচেয়ে মানুষের চাপ তথা ঘনবসতি। এ দুটি শহরে নোংরা আবর্জনার স্তুপ যত্রতত্র পড়ে থাকতে দেখা যায়। অনেক ভবনে পানি জমে থাকা থেকে অপরিচ্ছন্ন হওয়ায় ডেঙ্গু প্রজননের সেরা স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়।
আমরা দেখেছি, ঢাকার উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম ডেঙ্গু নির্মূল করার জন্য নানা ভবন অপরিচ্ছন্ন থাকায় জরিমানা পর্যন্ত করেছেন। তিনি নগরীকে ডেঙ্গুমুক্ত করার জন্য নিরলসভাবে চেষ্টা করে আসছেন। তার এই আন্তরিকতা সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে। তারপরও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে ডেঙ্গুমুক্ত হয়নি। দক্ষিণের অবস্থাও ব্যতিক্রম নয়। কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বহু মানুষ হাসাপাতালে ভর্তি হন এবং এতে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে।
ডেঙ্গু নির্মূলে মশার ঔষুধ ছড়ানো কদাচিৎ চোখে পড়লেও নিয়মিতভাবে হয় না। নিয়মিতভাবে এডিস মশা মারার কার্যকর ঔষুধ ছড়িয়ে ডেঙ্গুমুক্ত পরিবেশ নগরবাসীর প্রত্যাশা। সেই সঙ্গে শিল্পকারখানাসহ নানা ভবনে এডিস মশার লার্ভা উৎপাদন বন্ধ করার জন্য নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রাখারও দাবি রয়েছে নগরবাসীর।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে দেশে ডেঙ্গু রোগী ও এতে মৃত্যুর সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ বেড়েছে। গত পাঁচ মাসে সারা দেশে এক হাজার ৪১৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ১২ জন মারা গেছে।
শনিবার (২০ মে) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে এ তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করা হয়। অধিদপ্তর ২০১৯ সাল থেকে ডেঙ্গুর তথ্য নিয়মিত প্রকাশ করে আসছে। প্রতিবেদনে ওই সময় থেকে শনিবার (২০ মে) পর্যন্ত তথ্য তুলে ধরা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, (২০ মে) সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরো ৫২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ সময়ে কারো মৃত্যু হয়নি। বর্তমানে সারা দেশে বিভিন্ন হাসপাতালে ১৬২ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪২ জন, ঢাকার বাইরে ২০ জন। ২০২২ সালের প্রথম পাঁচ মাসে দেশে ডেঙ্গু রোগী ছিল ৩৫২ জন। কেউ মারা যায়নি। ২০২১ সালের একই সময়ে ডেঙ্গু রোগী ছিল ১০০ জন। মৃত্যু ছিল শূন্য। তবে ওই বছর হাসপাতালে মোট এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন ভর্তি হয়েছিল। মারা গিয়েছিল ১৭৯ জন। এখন পর্যন্ত ২০২১ সালেই সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল।
জুন মাসে রাজধানীতে ডেঙ্গু প্রকোপ বেড়ে যায়। বৃষ্টি-ঝড়-বাদলে ডেঙ্গু বেড়ে যাওয়ার জন্য শ্রেষ্ঠ সময়। ফলে জুন আসার আগেই ডেঙ্গু নির্মূল করার চেষ্টা জোরেশোরে চালানো উচিত।
এদিকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। বিশেষ করে জুন থেকে অক্টোবরে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। তাই জরুরি ভিত্তিতে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে হবে।
২০২১ সালে দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠে ছিলো, তা অনেকেই ভুলে যাননি। সে সময়ে এক লাখের উপরে মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলো। প্রচুর মানুষও এতে মারা যায়। ফলে নতুনভাবে ডেঙ্গু ভয়ংকর হয়ে উঠবে না, তা জোর দিয়ে বলা যায় না।
গত বছরের ডেঙ্গু পরিস্থিতির সঙ্গে চলতি বছরের পাঁচ মাসের পরিস্থিতি তুলনা করে বিশেষজ্ঞরা এখনই ডেঙ্গু প্রতিরোধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান করেছেন। এতে দেরি না করে সংশ্লিষ্টদের মনোযোগ দেওয়া জরুরি।
দৈনিক সরোবর/আরএস