ফের ভোজ্যতেল ও চিনির বাজারে আগুন
প্রকাশিত: মে ০৬, ২০২৩, ০৭:৪১ বিকাল

এবার একসঙ্গে ভোজ্যতেল ও চিনি নিয়ে শুরু হয়েছে ছিনিমিনি খেলা। এই খেলার শেষ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে কেউ জানে না।
নতুন করে ভোজ্যতেল ও চিনির দাম বাড়তে শুরু করেছে। চিনির দাম বাড়তে বাড়তে ঠেকেছে প্রতি কেজি ১৪০-৪৫ টাকায়। অন্যদিকে ভোজ্যতেলের দাম দাঁড়িয়েছে প্রতি লিটার ১৯৯ টাকা। কিছুদিন আগেও ১৭৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
চিনি ও ভোজ্যতেলের গায়ে নতুন করে আগুন লাগায় দিশোহার সাধারণ মানুষ। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চিনি ও ভোজ্যতেল ফের গুদামজাত করে বাজার অস্থিতিশীল করে তুলেছে। এ নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীদের মাথা ব্যথা তৈরি হয়েছে তা তারাই ভালো জানেন। কিন্তু সাধারণ ভোক্তাদের নাভিশ্বাস উঠেছে।
বৈশ্বিক কারণ দেখিয়ে দেশের ব্যবসায়ীরা ভোজ্যতেল ও চিনির দাম বাড়ালেও আসল ঘটনা তা নয়। আসল ঘটনা হলো অতিমুনাফার লোভে দেশের অসাধু ব্যবসায়ীরা চিনি, ভোজ্যতেল সহ প্রত্যেকটি নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছে। অতিমুনাফা পকেটে পুরতে নতুন পথ বের করেছে পণ্য গুদামজাত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি।
এর বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর হওয়ার বিকল্প আছে বলে আমরা মনে করি না। দেশের অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম হু হু করে বাড়িয়ে তুলছে, এর পেছনে অতিমুনাফার লোভ ছাড়াও হীন রাজনৈতিক পরিকল্পনা কাজ করছে কি-না তাও খতিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে।
জানা গেছে, চিনির দাম এমন লাফিয়ে বাড়ছে, ক্রেতার কাছে এখন তা তেতোই ঠেকছে। কমার কোনো লক্ষণ নেই; স্রোত উল্টো দর বাড়ার দিকেই। এ খবরে বাজারের প্যাকেটজাত চিনি কয়েক দিন ধরেই হাওয়া। গলির মুদি দোকান থেকে বড় বাজার কিংবা সুপারশপ-কোথাও মিলছে না চিনি। পাঁচ-ছয় দোকান ঘুরে খোলা চিনির দেখা পাওয়া গেলেও দাম শুনে অনেক ক্রেতার চোখ উঠছে কপালে।
অভিযোগ রয়েছে, বাজারের অস্থিরতার সুযোগে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী চিনি মজুত করে রেখেছে। ফলে বাজারে বেশ সংকট চলছে চিনির। এর মধ্যেই ‘গোদের ওপর বিষফোড়া’ হয়ে ধেয়ে আসছে ভোজ্যতেলের দুঃসংবাদ। আবার সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর সব আয়োজন চূড়ান্ত। এখন শুধু বাড়তি দাম কার্যকরের অপেক্ষা। তার আগেই বাজারে বেড়ে গেছে তেলের দর।
ভোজ্যতেলে মূসক (ভ্যাট) ছাড়ের সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ায় এর দাম বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছে তেল পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এ পটভূমিতে বুধবার (৩ মে) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তেল ও চিনি ব্যবসায়ীরা।
সম্প্রতি বিশ্ববাজারে বাড়ার কারণে দেশে দাম বেড়েছে বলে জানান চিনি পরিশোধনকারী মিল মালিকরা। এ অজুহাতে এখন দেশেও চিনির দাম বাড়ানোর দাবি তুলেছেন মিলাররা।
সংবাদমাধ্যম সূত্র জানায়, বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ভোজ্যতেলের আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট ছাড় সুবিধার সময়সীমা শেষ হওয়া এবং বিশ্ববাজারে চিনির দাম বাড়ার কারণে নিত্যপণ্য দুটির দাম সমন্বয় করা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বাড়তে পারে পণ্য দুটির দাম।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, কমিশনের কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তেল ও চিনিতে বিদ্যমান শুল্ক ও ভ্যাট এবং আন্তর্জাতিক দামের বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন। এরপর উভয় পক্ষ কাছাকাছি দাম নির্ধারণে সম্মত হয়।
দেশে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বাজার অস্থিতিশীলে কাজ করছে তা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। অতিমুনাফার জন্য পণ্যর ঘাটতি না থাকার পরেও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে যে কান্ড করছে তা পুরোপুরি অবৈধ, অনৈতিক এবং এতে দেশের মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর হওয়া খুবই প্রয়োজন।
বেশ কিছুদিন আগে ভোজ্যতেল ও চিনির কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়। তার পুনারাবৃত্তি কেন ঘটছে তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন। বাজার স্থিতিশীল থাকার সঙ্গে সরকারের ভাবমূর্তি জড়িত। ফলে এটি সরকার এরিয়ে যেতে পারে না। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থার মাধ্যমে ভোজ্যতেল ও চিনি ক্রয়-ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে।
দৈনিক সরোবর/আরএস