ঢাকা, শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

সিদ্দিকবাজারে ভবনে বিস্ফোরণ উদ্বেগের 

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: মার্চ ০৯, ২০২৩, ০৫:২৩ বিকাল  

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে ৬ জনের মৃত্যু এবং আরো মানুষের আহত হওয়ার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে খোদ রাজধানী ঢাকার রাজধানীর সিদ্দিকবাজারের একটি ভবনে বিষ্ফোরণের ঘটনায় সর্বশেষ খবর অনুয়ায়ী ২১ জনের লাশ উদ্ধার করা হলো। এই ঘটনায় শোকে কাতর সারা দেশ এবং সেই সঙ্গে আতংকে আছে মানুষ।  

সিদ্দিকবাজারে ভবনে বিস্ফোরণ আকস্মিক কোনও ঘটনা নাকি এর সঙ্গে কোনও ধরনের নাশকতার ঘটনার জড়িয়ে আছে, তা এখনও বলার সময় আসেনি। সীতাকুণ্ডের অক্সিজেন কারখানার পরপর রাজধানীর সাইন্সল্যাবরোটরি একটি ভবনেও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ঠিক এই ঘটনার পরপরই সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণে মানুষের প্রাণ গেল।

সাইন্সল্যাবরোটরির একটি ভবনে বিস্ফোরণেও মানুষ মারা গেছে। এ নিয়ে যখন মানুষ উদ্বেগের মধ্যে সময় কাটাচ্ছিল বিস্ফোরণের কারণ কি হতে পারে, এ নিয়ে বিস্তর কথাবার্তা চলছে কৌতূহলী মানুষের মধ্যে। তবে সিদ্দিকবাজারের কুইন স্যানিটারি মার্কেট হিসেবে পরিচিত সাততলা ভবনে কীভাবে বিস্ফোরণ হয়েছে, সেটি এখনো খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল ভবনটি পরিদর্শন করে বলেছে, ভবনের বেজমেন্টে বিস্ফোরণ হয়ে থাকতে পারে। তবে ভবনের ধ্বংসস্তূপ, আহত ও নিহত হওয়ার ধরন দেখে বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলটি মনে করছে, ভবনের বেজমেন্টের বদ্ধ কোনো কক্ষে গ্যাস জমে সেটি ‘গ্যাস চেম্বারে’ পরিণত হয়েছিল। সেখানে যেকোনো উপায়ে স্পার্ক (আগুনের স্ফুলিঙ্গ) হওয়ার পরই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য পাঁচটি উপায়ে গ্যাস জমতে পারে বলে মনে করছে তারা।

সম্ভাব্য পাঁচটি কারণ হলো-ভবনের মাটির নিচে পানির ট্যাংক থেকে গ্যাস নির্গত হতে পারে; দুটি ভবনের মাঝখানে একটি সেপটিক ট্যাংক ছিল, সেখান থেকে গ্যাস নির্গত হতে পারে; বিচ্ছিন্ন হওয়া কোনো গ্যাসের লাইন থেকে গ্যাস জমতে পারে বা দেয়ালে মিথেন গ্যাস জমে থাকতে পারে; পয়ঃনিষ্কাশন লাইনের পাইপ লিকেজ হয়ে গ্যাস জমতে পারে এবং ভবনে থাকা বড় জেনারেটর থেকেও কোনোভাবে গ্যাস জমতে পারে। 

সিটিটিসির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) রহমত উল্লাহ চৌধুরী বলেন, যেকোনো উপায়েই হোক ভবনের আবদ্ধ কক্ষে গ্যাস জমেছিল। সেখানে বৈদ্যুতিক শট সার্কিট বা অন্য কোনো উপায়ে স্পার্ক থেকে ভবনে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে। 

অন্যদিকে বিস্ফোরণের কারণ চিহ্নিত করার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা জরুরি। এটি শেষে একটা সিদ্ধান্তে আসা যাবে। যেখানে এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা পরিষ্কার করে কিছু বলছেন না, তখন কিছু ব্যক্তি বিশেষজ্ঞদের থেকে বড় বিশেষজ্ঞের মতো নানা মত ব্যক্ত করছেন। এতে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। এ ধরনের মতামত পেশ করা উচিত নয়। যা বলার বিশেষজ্ঞ দলই বললে ভালো হয়। 

এ কারণেই বুধবার (৮ মার্চ) দুপুরে ঢাকার সিদ্দিক বাজার নর্থ সাউথ রোডে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, এ ধরনের ভবন নির্মাণের আগে আমরা সবসময় বলে থাকি ফায়ার সার্ভিসে অনুমতি নেওয়ার জন্য। ফায়ার সার্ভিসের অনুমতি নিয়ে ভবন নির্মাণ করলে, এ ধরনের ঘটনা দুর্ঘটনা কমে যেতো বলেও মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

অন্যদিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমরা ধ্বংসস্তূপ পর্যবেক্ষণ করেছি। কি কারণে এমন ঘটনা ঘটল, এটা তদন্ত করা দরকার। এটি স্বাভাবিক কেমিক্যাল বিস্ফোরণের ঘটনা নাকি অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকা­ সেটা তদন্তের প্রয়োজন আছে। একটার পর একটা দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আমরা অনেকগুলো প্রাণ হারিয়েছি। এটি মর্মান্তিক ঘটনা। এ ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।

দৈনিক সরোবর/ আরএস