ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৯ ভাদ্র ১৪৩১

বৈষম্যমুক্তে প্রয়োজন ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২৪, ১০:৫৮ দুপুর  

শেখ হাসিনার টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে অন্যায় অনিয়মের অভিযোগ বিস্তর। সর্বত্র দলীয়করণের কালো ছায়া, দুর্নীতির সর্বব্যাপী নিষ্ঠুর থাবা, একনায়কতান্ত্রিক ও পক্ষপাতদুষ্ট বিচার বিবেচনা, ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় চরম ব্যর্থতা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করা, নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করা, দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানতে ব্যর্থ হওয়া, ব্যর্থতা ঢাকতে সর্বত্র বলপ্রয়োগের নিষ্ঠুর রেওয়াজ চালু রাখা প্রভৃতি কারণে তার শাসলকাল শুরু থেকেই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। ফলে ধূমায়িত এসব অন্যায় অনিয়মই এক সময় তীব্র জন-অসন্তোষের সৃষ্টি করে। সাধারণ মানুষ স্বপ্ন দেখে ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও বৈষম্যমুক্ত উদার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের। এ দেশ সব নাগরিককে সমান চোখে দেখবে, নিশ্চিত করবে ন্যায়বিচার, সমুন্নত রাখবে সবার মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র হরণের কূটকৌশল থাকবে না, থাকবে ভোটাধিকার প্রয়োগের সর্বজন স্বীকৃত অধিকার।
 
আমাদের বিশ্বাস, অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন গোষ্ঠীর দাবি-দাওয়া পূরণ, মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরে জনজীবনে স্বস্তি আনা, আর্থিক খাত শক্ত ও মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো, উদার ও স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পথে দেশকে নিয়ে যেতে পারবে। বাংলাদেশের সমাজে দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক, লিঙ্গ, শিক্ষাগত ও সামাজিক বৈষম্য বিদ্যমান। তা দূরীকরণে সরকার ও সাধারণ জনগণকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং গ্রামীণ ও শহরের শিক্ষার মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্য দূর করা প্রয়োজন। এই সরকার কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে পারে। এছাড়া সরকারি চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। সব শ্রেণির মানুষের যাতে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করতে পারে, এ জন্য আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করতে হবে। অন্যদিকে নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধেও কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ নিশ্চিত করা দরকার। 
 
বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে আমরা আশা রাখি। সব মিলিয়ে একটি সমন্বিত ও ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। সরকার মানবিক সমাজ গড়ে তোলার পথ তৈরিতে সচেষ্ট থাকবে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে নতুন পথে পরিচালিত করাটা নির্ভর করছে বিপ্লবের নেতৃত্ব, জনগণের অংশগ্রহণ এবং দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের ওপর। যদি তা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যায়, তাহলে বাংলাদেশ একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।