চলতি বছর পুঁজিবাজারে আসছে না নতুন কোম্পানি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৩, ০৭:৫০ বিকাল

চলতি বছর বা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন করে কোনো কোম্পানির আইপিও অনুমোদন হচ্ছে না। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখতে বাজারের গভীরতা বাড়ানো জরুরি। বাজারের গভীরতা বাড়াতে ভালো ভালো কোম্পানির আইপিওর (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) অনুমোদন অপরিহার্য। কিন্তু এক বছর ধরে বাজারে ভালো কোনো কোম্পানির আইপিওর অনুমোদন হয়নি।
বিএসইসির তথ্য মতে, বর্তমানে প্রটেকটিভ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড নামের একটি বিমা কোম্পানির আইপিও আবেদন কমিশনে জমা আছে। প্রতিষ্ঠানটি আইপিওর মাধ্যমে এক কোটি ৫০ লাখ শেয়ার ইস্যু করে ১৫ কোটি টাকা উত্তোলন করবে।
এ ছাড়া বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে বাজারে আসতে চায় বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ৩৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করতে চায়। অথচ প্রতিষ্ঠান দুটির আবেদনে ত্রুটি রয়েছে। ফলে তাদের নতুন করে সংশোধনীসহ আবেদন করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ভালো কোনো প্রতিষ্ঠানের আবেদন জমা নেই কমিশনে।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য মতে, ২০২২ সালে ছয়টি প্রতিষ্ঠান আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। চলতি বছরের (২০২৩ সাল) সাড়ে নয় মাসে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো-মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেড ও ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। প্রতিষ্ঠান দুটি পুঁজিবাজার থেকে ৭০ ও ১৬ কোটি টাকাসহ মোট ৮৬ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। বছর পার হতে এখনও বাকি তিন মাস। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠানের আবেদন কমিশনে জমা নেই।
বিষয়টি স্বীকার করেছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত দু-তিনটি কোম্পানির আইপিও আবেদন জমা রয়েছে। কিন্তু নিয়ম মেনে কোনো প্রতিষ্ঠান আসছে না। যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে এলে অনুমোদন দেওয়া হবে। আবেদন যদি সঠিক হয়, অতি অল্প সময়ের মধ্যে কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দেওয়া হবে। কিন্তু এ মুহূর্তে আইপিও দেওয়ার মত কোনো কোম্পানি নেই।
পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফ্লোর প্রাইসের কারণে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার আটকা পড়ে আছে। এ অবস্থায় বাজারের গতি ফেরাতে ভালো ভালো কিছু কোম্পানি প্রয়োজন। তারা আসলেই বাজার চাঙা হবে। স্রোতের মতো বিনিয়োগকারীরা বাজারে আসবেন।
তাদের মতে, বর্তমানে বাজারে একটি জিনিসের অভাব রয়েছে। সেটি হলো- ভালো কোনো কোম্পানি না থাকা। এ শূন্যতার কারণে পুঁজিবাজার জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) তেমন ভূমিকা রাখতে পারছে না। অন্যদিকে, আস্থা হারিয়ে দিনের পর দিন পুঁজিবাজার ছাড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। বছরের পর বছর টালমাটাল রয়েছে বাজারটি।
সার্বিক বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাজারে গভীরতা নেই। বাজারে গভীরতা বাড়াতে নতুন নতুন ভালো কোম্পানি আনা দরকার। বিনিয়োগকারীরা যাতে নিজের ইচ্ছা মতো বিনিয়োগ করতে পারেন।
বিএসইসির সাবেক এ চেয়ারম্যান বলেন, সরকারি-বেসরকারি সব ভালো কোম্পানি বাজারে আনতে বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জকে সক্রিয়ভাবে (ক্যাম্পেইন) প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা পাশের দেশ নেপালের তুলনায় কম। কাজেই বাজারের গভীরতা বাড়াতে নতুন নতুন ভালো কোম্পানিকে বাজারে আনার চেষ্টা করতে হবে। ভালো কোম্পানি না আসলে বাজার স্থিতিশীল হবে না।
নতুন কোম্পানির পুঁজিবাজারে না আসার বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে একটি রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং তা নিয়ে নানা বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে নতুন কোম্পানি এখন বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। উদ্যোক্তারা চিন্তা করছেন, টাকা উত্তোলনের পর যদি রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে বিনিয়োগ করতে না পারেন, তাহলে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারবেন না। লভ্যাংশ দিতে না পারলে কোম্পানি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে চলে যাবে। এ সমস্যায় যাতে পড়তে না হয় সেজন্য তারা বিনিয়োগ করছেন না।
দৈনিক সরোবর/এএস